কামাল উদ্দিন টগর, নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নওগাঁর আত্রাই উপজেলার পাঁচুপুর ইউনিয়নের নবাবেরতাম্বু গ্রামে দেখা হয় নুরুল ইসলামের। স্ত্রী- আর তিন কন্যা সন্তানদের নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল নুরুল ইসলামের।কিন্তু বাঁ পায়ে পচন ধরে হাটু থেকে উঁরু পর্যন্ত পুরো টা-ই কেটে ফেলতে হয়। একই ভাবে কাটতে হয় ডান পা-ও। প্রতিবন্ধী হয়ে ঘরে বসে থাকা এবং রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হতাশা ঘিরে ধরে নুরুল ইসলাম সরদারকে(৫৫) ভেবে ছিলেন ভিক্ষা করে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেওয়া ছাড়া বুঝি আর কোন উপায় নাই। ঘটনাটি প্রায় ১৫ বছর আগের। জীবনের আঘাতে ক্লান্ত নুরুল ইসলাম সেখানে থেমে যায়নি। দুই-পা হারিয়ে এখন মনের জোরেই এগিয়ে চলছেন বাকি পথটা। সম্প্রতি আত্রাই উপজেলার পাঁচুপুর ইউনিয়নের নবাবেরতাম্বু গ্রামে দেখা হয় নুরুল ইসলাম সরদারের সঙ্গে। সেখানে একটি চায়ের দোকান আছে তাঁর। দোকানের বসে তিনি চা-পান বিক্রি করেন। চায়ের দোকানের সামনে রাখা বেঞ্চে বসে দীর্ঘ সময় কথা হয় নুরুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন পৈত্রিক সীত্রে তাঁর জমি জমা ছিল না। অনেক বছর ধরে পাঁচুপুর ইউনিয়নের নবাবেরতাম্বু গ্রামে জমি কিনে ঘর তৈরি করে বসবাস করছিলেন। পা কেটে ফেলার আগে তিনি বিভিন্ন পেশার কাজ করতেন। রোজগারও ভালোই ছিল। সংসার চালানোর পাশাপাশি কিছু টাকা পয়সা জমাতেন। কিন্তু হঠাৎ করে সব এলোমেলো হয়ে যায়। তাঁর বা পায়ের নখে পচন ধরে। ডাক্তার দেখালেও ভালো হয়নি।পরে চিকিৎসক পা কেটে ফেলার পর্রামশ দেন।প্রথম নখ কেটে ফেলেন। এরপর আবারও পচন ছড়িয়ে পড়লে হাঁটু এবং এবং শেষে উঁরু পযর্ন্ত কেটে ফেলতে হয়। নবাবের তাম্বু – খাজুরা রাস্তার মোড়ে নুরুল ইসলামের চায়ের দোকানে চা-পান করতে আসেন গ্রামের বাসিন্দারা। নুরুল ইসলাম আরো কান্না কন্ঠে বলেন, এক পা ছাড়া অনেক দিন ভালো ছিলাম। কিন্তু বছর না যেতেই একই ভাবে ডান পা-টিও কেটে ফেলতে হয়। এরই মধ্যে তিনটি মেয়ের স্কুলে লেখা-পড়াবন্ধ হয়ে যায়। আমার পরিবারে আমি ছাড়া উপাজন করার মতো আর কেহ নাই।সংসার চালানো নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে যাই। সেই সময়ের কথা মনে করে নুরুলইসলাম বলেন,“দুই-পা হারানোর পর অসহায় হয়ে যাই। শারীরিক ও মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলাম। ভেবেছিলাম ভিক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তখন এলাকার অনেকের পরামর্শও দিয়েছিল ভিক্ষা করতে।কিন্তু আমি সেই পথ বেছে না নিয়ে চা-পান বিক্রিশুরু করি। চা-পানের দোকান দেই।সেটি ভালোই চলা শুরু করে। এখন চায়ের সাথে বিস্কুট,চিপস,কলাসহ অনেক কিছুই বিক্রি করি।দোকান থেকে আয়ও ভালো হয়। তিনি বলেন“দুটি পা কেটে ফেলায় আমি১৫ বছর ধরে প্রতিবন্ধী। তবুও নিজে কাজ করে নিজের টাকায় চলি।আমি চা-পান বিক্রি করে জীবন চালিয়ে নিচ্ছি।স্থানীয় ইউপি সদস্য জফির উদ্দিন বলেন,নুরুল ইসলাম সরদারের মনোবল খুবই শক্ত।তিনি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেই পছন্দ করেন। গ্রামের লোকজনও তাঁর দোকানে সকাল-বিকাল চাপান করতে যান। আমার ইউনিয় পরিষদ থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন নুরুল ইসলাম সরদার। তাঁকে সরকারি আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে