ডেস্ক রিপোর্ট : আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা না জানালেও নির্বাচনে নিজেদের আগ্রহের কথা বলছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতারা। ইতোমধ্যে নিজ নিজ দলে আগ্রহীরা নানাভাবে নির্বাচনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ নিজ এলাকায় সাধ্যমত গণসংযোগ ও রাজনৈতিক, সামাজিক কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
যদিও জোটের শরিক দলগুলোকে কতটা আসন দেয়া হতে পারে না নিয়ে নানা শঙ্কা এসব দলগুলোর নেতাদের মধ্যেই আছে। তবে শরিক দলের নেতাদের দাবি, নানা প্রলোভন ও চাপ থাকা সত্ত্বেও জোটের স্বার্থে দশম সংসদ নির্বাচনে তারা যাননি। যে কারণে আগামী নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলে অবশ্যই এসব বিষয় মাথায় রেখে মনোনয়ন দিতে হবে।এক্ষেত্রে বিএনপিকে অবশ্যই ছাড় দিতে হবে।
জোটের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপে জানা যায়, দুটি বিষয় মাথায় রেখে প্রার্থী চূড়ান্তের কথা ভাবা হচ্ছে। কারণ, তারা ধরে নিয়েছেন জোটভুক্ত নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপি শরিকদের খুব বেশি আসনে ছাড় দেবে না। সেক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে যোগ্য, জনপ্রিয় এবং জেতার সম্ভবনা আছে এমন প্রার্থীরা অগ্রাধিকার পাবেন। যাতে এসব প্রার্থীর ব্যাপারে বিএনপি না বলার সুযোগ না পায়।
গত নির্বাচনে অংশ না নেয়ার আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ জোটের অন্যান্য নিবন্ধিত দলগুলোর অংশ নেয়ার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতা আছে। যে কারণে শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে না এলে এবং আলাদাভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে স্বাভাবিকভাবেই বেশি প্রার্থী হবে। এই বিষয়টিও জোটের শীর্ষ নেতারা মাথায় রেখে এগোচ্ছেন বলে জানা গেছে।
ইতোমধ্যে শরিক দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীদের স্ব স্ব দল থেকে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জোট সূত্রে জানা গেছে।
জোটের শরিক কিন্তু নিবন্ধন নেই নাম সর্বস্ব দলগুলোর নেতারা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে আসন পাওয়ার ক্ষেত্রে নিবন্ধনকৃত দলগুলো এগিয়ে থাকবে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।
জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত ইসলামের নিবন্ধন না থাকায় দলটির প্রার্থীদের স্বতন্ত্র নির্বাচন করার কথা জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি।
জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ জোটের একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় অর্থশত আসনে প্রার্থী মোটামুটি চূড়ান্তই আছে জামায়াতের। সাবেক এমপি, ব্যক্তিগত ইমেজ ভালো এবং সাবেক শিবির নেতাদের মধ্য থেকেই প্রার্থী তালিকা করছে দলটি। মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক নেতাদের সন্তানদেরও কোথাও কোথাও প্রার্থী করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
জামায়াতের লোকজন আশা করছে, যেসব এলাকায় তাদের শক্ত অবস্থান আছে সেসব আসনে তাদের প্রার্থীরা ভালো করতে পারবেন।
জোটের অন্য শরিক দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রায় দুই ডজন নেতা নির্বাচনে অংশ নিতে মাঠে কাজ শুরু করেছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- চেয়ারম্যান অলি আহমেদ (চট্টগ্রাম-১৩), রেদোয়ান আহমেদ (কুমিল্লা-৭), শাহাদাত হোসেন সেলিম (লক্ষ্মীপুর-১), আব্দুল করিম আব্বাসী (নেত্রকোণা-১), আবু ইউসুফ মোহাম্মদ খলিলুর রহমান (জয়পুরহাট-২), আব্দুল গনি (মেহেরপুর-২), মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ (চাঁদপুর-৩), নুরুল আলম (চট্টগ্রাম-৭), এম ইয়াকুব আলি (চট্টগ্রাম-১১), কফিল উদ্দিন চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৫)।
এলডিপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘আমাদের প্রায় ত্রিশজনের মতো নেতা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন। অনেকেই মাঠে কাজ করছেন। এদের মধ্যে অনেকের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অভিজ্ঞতা আছে। মাঠেও শক্ত অবস্থান আছে। আশা করি মনোনয়ন পেলে ভালো করবেন।’
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) মূলত চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থর কারণেই আলোচনায়। কারণ একসময় দলটির প্রতিষ্ঠাতা নাজিউর রহমান মঞ্জুর জীবদ্দশায় দলের কার্যক্রম থাকলেও বর্তমানে তেমন সাড়া নেই। পার্থ (ভোলা-১) নির্বাচন করবেন এটা মোটামুটি চূড়ান্ত। এছাড়া ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আবদুল মতিন সাউদ ঢাকা-৫ থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী বলে জানা গেছে।
তবে আবদুল মতিন সাউদ বলেন, ‘খুলনা, সাতক্ষীরা, রাজশাহী ও নারায়ণগঞ্জে আমাদের যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলে আমরা এসব জায়গায়ও মনোনয়ন চাইতে পারি।’
মাওলানা মুহম্মদ ইসহাকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিসের নিবন্ধন আছে। ইসহাক এর আগে কখনও জোটের মনোনয়ন না পেলেও এবার পাবনা-১ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আশায় আছেন। এ ছাড়া মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাদের হবিগঞ্জ-৪ থেকে মনোনয়ন চাইবেন।
তবে ইতিমধ্যে সারাদেশের যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং ঈদের পরে তা চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নির্বাহী সভাপতি মুফতি মুহম্মদ ওয়াক্কাস যশোর-৫ আসন থেকে ২০০১ সালে জোটের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারও তিনি সেই আসনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এছাড়া শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মহীউদ্দিন ইকরাম, রেজাউল করিম, আব্দুর রব ইউসুফী দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর গ্রুপ) সম্ভাব্য যোগ্য প্রার্থীরা হচ্ছেন টি আইএ ম ফজলে রাব্বি (গাইবান্ধা-৩), মোস্তফা জামাল হায়দার (পিরোজপুর-১), আহসান হাবিব লিংকন (কুষ্টিয়া-২)।
এছাড়া নবাব আলী আব্বাস খান (মৌলভীবাজার কুলাউড়া), সেলিম মাস্টার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মজিবুর রহমান (মুন্সিগঞ্জ), নাসের চৌধুরী (চট্টগ্রাম), গোলাম মোস্তাফা বাটুল (রংপুর), সাইদুর রহমান মানিক (ময়মনসিংহ), জাফরউল্লাহ খান চৌধুরী (কুষ্টিয়া-৩), এস এম এম আলম (চানপুর), খালেকুজ্জামান চৌধুরী (ঢাকা-ডেমরা), শফিউদ্দিন ভুইয়া (সোনার গাঁ নারায়ণগঞ্জ), রুহুল আমিন পিরোজপুরে প্রার্থী হতে চান। এদের অনেকেই সাবেক সংসদ সদস্য।
এরশাদের নেতৃত্ব অস্বীকার করে কাজী জাফর আহমেদের নেতৃত্বে বের হয়ে আসা এই অংশে সাবেক সংসদ সদস্য রয়েছেন ১৭ জন। তারা সবাই আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা হচ্ছেন চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম (চট্টগ্রাম-৪), মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান (পাবনা-১), কাহির মাহমুদ (সিলেট-১), আজাদ মাহবুব (পিরোজপুর ০১), মো. ইলিয়াস (চট্টগ্রাম-৮), সাহিদুর রহমান তামান্না (কুমিল্লা-৬), ইসমাইল ফারুক চৌধুরী (কক্সবাজার সদর), ইকবাল হাসান (নারায়ণগঞ্জ-২), আলী হোসাইন ফরায়েজি (কুমিল্লা-১৪)।
বাংলাদেশ ন্যাপের সম্ভাব্য প্রার্থী চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি (নীলফামারী-১), মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া (নরসিংদী-৩), গোলাম সারওয়ার খান (মৌলভীবাজার-২), সাদ্দাম হোসেন (কুমিল্লা-১০), সৈয়দ শাহজাহান সাজু (কুমিল্লা-৭), মশিউর রহমান গানি (রংপুর-৩), মো. শহীদুননবী ডাবলু (পিরোজপুর-১), কামাল ভুইয়া (নারায়ণগঞ্জ-৪), নুরুল আমান চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১), তারিকুল ইসলাম (পাবনা-২), জাহাঙ্গীর আলম (পাবনা-৫), রেজাউল করিম কাঞ্চন (ঝিনাইদহ-৩), কাজী ফারুক হোসেন (খুলনা-৩), ওসমান গনি শিকদার (চট্টগ্রাম-১৬)।
ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, ‘আমাদের প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় কাজ শুরু করে দিয়েছেন।জাগপার চেয়ারম্যান শফিউল আলম প্রধান কিছুদিন পূর্বে মারা গেছেন। তিনি (দিনাজপুর-২) আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতেন। সেই আসনে এবার তার সহধর্মিনী রেহানা প্রধান নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে, তিনিও খুব অসুস্থ। এ অবস্থায় শফিউল আলম প্রধানের একমাত্র মেয়ে ও দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি তাসমিয়া প্রধানকে প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলীয় সূত্র জানায়।
এছাড়া দলের মহাসচিব খন্দকার লুৎফর রহমান বগুড়া-১ থেকে নির্বাচন করতে চান বলে জানা গেছে।এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ (নড়াইল-২), মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা (ঢাকা-১৩), ওয়াহিদুর রহমান কুমিল্লা-১০ থেকে নির্বাচন করতে চান।অন্যদিকে এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা (পাবনা-২), মঞ্জুর হোসেন ঈসা খুলনা-৩ আসনে নির্বাচন করতে কাজ করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ মুসলিম লীগের এএইচএম কামরুজ্জামান খান কিশোরগঞ্জ-৫, শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী চট্টগ্রাম-১ আসনে নির্বাচন করতে চান বলে জানা গেছে।
ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের বর্তমান চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুর রাকিব ও মহাসচিব মাওলানা আবদুল করিম নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। তবে তারা কোন আসন থেকে লড়তে চান তা জানা যায়নি।
ডেমোক্রেটিক লীগ-ডিএল সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি ময়মনসিংহ-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী। অন্যদিকে সাম্যবাদী দলের কমরেড সাঈদ নারায়ণগঞ্জ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
নিবন্ধন না থাকলেও লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান (পিরোজপুর-২ অথবা ঢাকা-১৫), সহ-সভাপতি ফরিদ উদ্দিন (কুমিল্লা-৫) ও মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদি (কুমিল্লা-১০) থেকে নির্বাচন করতে চান।এছাড়া জোটভুক্ত দল বাংলাদেশ পিপলস্ লীগ, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, ন্যাপ ভাসানী ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে চায়।
দে/বি/দে