ডেস্ক রিপোর্টঃ শততম টেস্ট খেলতে নামা বাংলাদেশ প্রথম সেশনে ছিল দুর্দান্ত। শেষ সেশনেও দারুণ। মাঝের সেশনটায় লড়াই করেছে শ্রীলঙ্কা। সব মিলিয়ে দারুণ বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে দিনশেষে এগিয়ে মুশফিকুর রহিমের দল।
রঙ্গনা হেরাথকে নিয়ে জুটি গড়ছেন চান্দিমাল। বাংলাদেশ সবে নিয়েছে দ্বিতীয় নতুন বল। দিনের শেষ আধঘণ্টা জমা ছিল দারুণ রোমাঞ্চ। কিন্তু আকাশ ততক্ষণে ঢেকে গেছে ঘন কালো মেঘে। আলোর স্বল্পতায় ৬.৫ ওভার আগেই দিনের খেলার ইতি টানেন আম্পায়ারা।
দুইশর আগেই শ্রীলঙ্কা হারিয়েছিল ৭ উইকেট। চান্দিমালের সঙ্গে এরপর লড়াই চালিয়ে যান হেরাথ। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটি ৪৩ রানের।
শেষ বিকেলের এই জুটিই যা একটু অস্বস্তি বাংলাদেশের। নইলে দিনটি ছিল অসাধারণ। এক পর্যায়ে ৭০ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর দিন শেষে যা স্কোর, তাতে খুব একটা অখুশি হবে না শ্রীলঙ্কাও।
দুইশর আগে শ্রীলঙ্কার সপ্তম
ভালো বলে ভোগান্তি, বাজে বলে উইকেট। মুস্তাফিজের বোলিংয়ে এটাই লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের অবস্থা! দিন জুড়ে ভালো বোলিং করেছেন। কিন্তু সকালের মত বিকেলেও উইকেট পেলেন অনেক বাইরের বলে।
আক্রমণে ফিরে প্রথম ওভারেই মুস্তাফিজ পেলেন সাফল্য। একটু আগেই দারুণ এক শটে তাইজুলকে ছক্কা মেরেছিলেন দিলরুয়ান পেরেরা। মুস্তাফিজের বাইরের বলটিও মারতে গেলেন। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল স্লিপে। সৌম্য সরকার মাথার ওপর থেকে হাতে জমালেন দারুণ ক্যাচ।
৯ রানে ফিরলেন পেরেরা। শ্রীলঙ্কা ৭ উইকেটে ১৯৫।
রিভার্স সুইপে বোল্ড!
চা-বিরতির পর ৫ ওভারেই ৩১ রান তুলে ফেলেছিল শ্রীলঙ্কা। রান আটকাতে আর জুটি ভাঙতে কৌশল বদলালেন সাকিব। ওভার দা উইকেট থেকে রাউন্ড দা উইকেট, লেগ সাইডে ফিল্ডার ৬ জন। সেটি দেখেই কিনা, লেগ স্টাম্পের বল রিভার্স সুইপ করে অফ সাইডে খেলতে গেলেন নিরোশান ডিকভেলা। শুনলেন একটি শব্দ, স্টাম্পে বলের আঘাত!
সাকিবের প্রথম উইকেট। চা বিরতির পর বাংলাদেশের প্রথম সাফল্য। ভাঙল ৪৪ রানের জুটি। ডিকভেলা ফিরলেন ৩৪ রানে।
শ্রীলঙ্কার রান ৬ উইকেটে ১৮০। চান্দিমাল অপরাজিত ৬০।
চা বিরতির আগে লঙ্কার স্বস্তি
ধনঞ্জয়াকে হারানোর পর চা বিরতি পর্যন্ত আর কোনো উইকেট হারায়নি শ্রীলঙ্কা। প্রথম সেশনের তুলনায় অনেক ভালো কেটেছে তাদের দ্বিতীয় সেশন। এই সেশনে পড়েছে কেবল একটি উইকেটই।
দ্বিতীয় সেশনে রান উঠেছে ৭৯। শ্রীলঙ্কার রান ৫ উইকেটে ১৪৯।
বাংলাদেশেকে পেলেই চওড়া হয়ে ওঠে যার ব্যাট, সেই চান্দিমাল আবারও মূল বাধা। খেলছেন ৫৪ রান নিয়ে। মিরাজের বলে ডিকভেলার বিপক্ষে রিভিউ নিয়ে সফল হয়নি বাংলাদেশ। ১১ রানে খেলছেন উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান।
ভুল শটে ভাঙল জুটি
আগের ওভারে চান্দিমালের উইকেট পেয়েও পাননি তাইজুল। তবে জুটি ভাঙল তার হাত ধরেই। শর্ট বল ভেবে লেংথ বলটি পুল করার চেষ্টা করেছিলেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। কিন্তু ততটা শর্ট ঠিল না বলটি। একটু স্কিড করে বল আঘাত করে স্টাম্পে।
৩৪ রানে ফিরলেন ধনঞ্জয়া। ভাঙল ৬৬ রানের জুটি। শ্রীলঙ্কার রান ৫ উইকেটে ১৩৬।
ক্যাচ, কিন্তু ক্যাচ নয়
তাইজুলের বলে চান্দিমালের সুইপ, বল উঠে গেল ওপরে। সীমানা থেকে অনেকটা দৌড়ে এসে সামনে ঝাঁপিয়ে অসাধারণ ক্যাচ নিলেন মিরাজ। বাংলাদেশের উদযাপন থামল খানিক পরই। ক্যাচ হয়েছে কিনা, তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে জানতে চাইলেন মাঠের আম্পায়ার। আলিম দারের সফট সিগন্যাল ছিল ‘নট আউট’।
বার বার টিভি রিপ্লে দেখার পর টিভি আম্পায়ারও সায় দিলেন মাঠের আম্পাযারের সঙ্গে। রিপ্লেতে অবশ্য পরিষ্কার বোঝার উপায় ছিল না। বলটা আটকে যায় মিরাজের আঙুলের সামনের দিকে। হাতে জমার আগে বল মাটি ছুঁয়েছিল কিনা, স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল না। হয়ত শেষ পর্যন্ত বেনিফিট অব ডাউট পেয়েছেন চান্দিমাল।
চান্দিমালের রান তখন ৪৬। পরের ওভারেই স্পর্শ করেন অর্ধশতক। শ্রীলঙ্কার রান ৪ উইকেটে ১৩৬।
লাঞ্চের পর লঙ্কার লড়াই
গুনারত্নের সঙ্গে জুটি গড়ার চেষ্টা শেষ হয়েছে লাঞ্চের ঠিক আগে। লাঞ্চের পর ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে নিয়ে সেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন দিনেশ চান্দিমাল। বিরতির পর প্রথম ঘণ্টায় আর উইকেট হারায়নি তারা।
রিভিউ নিয়ে টিকে যাওয়া চান্দিমাল খেলছেন ৪৩ রানে। দলে ফেরা ধনঞ্জয়া ২২ রানে। পঞ্চম জুটিতে দুজনের জুটি ৪৩ রানের।
লাঞ্চের পর প্রথম পানি পানের বিরতিতে শ্রীলঙ্কার রান ৪ উইকেটে ১১৩।
রিভিউয়ে চান্দিমালের রক্ষা
আম্পায়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন একটু ভেবে। তুললেন আঙুল। ব্যাটসম্যানের রিভিউ নিতে সময় লাগেনি একটু্ও। আবার দেখা গেল আম্পায়ার এস রবির সিদ্ধান্ত ভুল, টিকে গেলেন দিনেশ চান্দিমাল।
সাকিবের বলটি খোলা চোখেই মনে হচ্ছিলো লেগ স্টাম্পের বাইরে যাচ্ছে। তৃতীয় আম্পায়ার শুরুতে দেখেছেন ব্যাট-প্যাড ক্যাচ। বেশ কয়েকবার রিপ্লে দেখে ও অডিও শুনে আম্পায়ার নিশ্চিত হন বল ব্যাটে লাগেনি। বল চলে যাচ্ছিলো লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরে। কাজেই এলবিডব্লিউও নন। ৩৮ রানে রক্ষা চান্দিমালের।
উপলক্ষ্যের টেস্টে অসাধারণ শুরু
শুরুর ধাক্কার পর একটি জুটি গড়ে তোলার চেষ্টা করছিরেন দিনেশ চান্দিমাল ও আসেলা গুনারাত্নে। লাঞ্চের আগে সেই প্রতিরোধেও ভাঙন। গুনারতত্নেকে ফিরিয়ে ৩৫ রানের জুটি ভাঙলেন শুভাশীষ।
প্রথম স্পেলে দারুণ তিনটি ওভারের পর লাঞ্চের ঠিক আগের ওভারে শুভাশীষকে আক্রমণে ফেরান মুশফিক। চতুর্থ বলটি ফুল লেংথ, লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ গুনারত্নে। গলে বাংলাদেশকে ভোগানো ব্যাটসম্যান ফিরলেন ১৩ রানে।
এই শুভাশীষ ও মুস্তাফিজ মিলে সকালে শুরু করেছিলেন দারুণ। বাংলাদেশের শরীরী ভাষায় ছিল বারুদ। নতুন বলের দুই বোলারের বোলিংয়ে ছিল সেটির প্রতিফলন। দুই ওপেনারকে ভুগিয়ে দলকে প্রথম সাফল্য এনে দেন মুস্তাফিজ।
এরপর মিরাজের দারুণ দুটি ডেলিভারিতে ফেরেন আগের টেস্টের দুই সেঞ্চুরিয়ান কুসল মেন্ডিস ও উপুল থারাঙ্গা। লাঞ্চের আগে বিদায় গুনারত্নে। শততম টেস্টের শুরুটা এর চেয়ে ভালো কিছু হয়তো কল্পনাও করতে পারত না বাংলাদেশ।
লাঞ্চের সময় শ্রীলঙ্কার রান ৪ উইকেটে ৭০। চান্দিমাল অপরাজিত ২৭ রান নিয়ে।
মিরাজের দুই, শ্রীলঙ্কার তিন
একটু আগে মুস্তাফিজের বলে রিভিউ নিয়ে বেঁচেছিলেন উপুল থারাঙ্গা। কিন্তু পারলেন না মিরাজের স্পিন-বিষ থেকে বাঁচতে। আরেকটি অসাধারণ ডেলিভারিতে মিরাজ ধরলেন দ্বিতীয় শিকার।
দারুণ ফ্লাইট ও ড্রিফটে থারাঙ্গাকে বিভ্রান্ত করেন মিরাজ। বল পিচ করে ঠিক যতটুকু দরকার, ততটুকুই টার্ন করে বেরিয়ে যায় ব্যাটের কানা নিয়ে। স্লিপে ক্যাচ নেন সৌম্য। থারাঙ্গা ফিরলেন ৪০ বলে ১১ রানে।
মেন্ডিসের পর থারাঙ্গা, আগের টেস্টের দুই সেঞ্চুরিয়ানকেই ফেরালেন মিরাজ। শ্রীলঙ্কার রান ৩ উইকেটে ৩৫।
মেন্ডিস-পতন!
টেস্ট ম্যাচের শুরুর দিকে স্টাম্পড একটু বিস্ময়করই। কিন্তু মেহেদী হাসান মিরাজের বলটি যে ছিল সেরকমই! দারুণ এক ডেলিভারিতে কুসল মেন্ডিসকে ফেরালেন তরুণ অফ স্পিনার।
মিরাজের ড্রিফটে অনেক লম্বা পায়ে ডিফেন্স করতে গিয়ে বেরিয়ে আসেন মেন্ডিস। ত্বরিত স্টাম্পিংয়ে মুশফিকের সুনাম খুব একটা নেই। তবে এবার হাতে জমালেন দারুণ, চোখের পলকে বেলস উড়িয়ে শুরু করলেন আনন্দনৃত্য!
আগের টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৯৪ রান করে উড়তে থাকা মেন্ডিস এবার ভূপাতিত। ফিরলেন ৫ রানে। শ্রীলঙ্কা ২ উইকেটে ২৪।
রিভিউয়ে রক্ষা থারাঙ্গার
মুস্তাফিজের আবেদনে আঙুল তুলে দিতে দেরি করেননি আম্পায়ার এস রবি। ব্যাটসম্যান উপুল থারাঙ্গা রিভিউ নিয়েছেন আরও দ্রুত। সেটিতেই স্পষ্ট ছিল, থারাঙ্গা নিশ্চিত ছিলেন আউট নন। সেটিই হলো।
মুস্তাফিজের বলটি চলে যাচ্ছিলো লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে। স্টাম্পের চেয়ে উঁচুও ছিল বল। আম্পায়ার আউট দিলেও ৬ রানে বাঁচলেন আগের টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান থারাঙ্গা। ১১ ওভারে শ্রীলঙ্কার রান ১ উইকেটে ২২।
উইকেট ছিল কেবল সময়ের ব্যাপার!
শুরু থেকেই অসাধারণ বোলিং করছিলেন বাংলাদেশের দুই পেসার। লাইন-লেংথ ছির দারুণ, শরীরী ভাষা চনমনে ও উজ্জীবিত। বিশেষ করে মুস্তাফিজুর রহমান। শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার ধুঁকছিলেন বেশ। উইকেট আসা মনে হচ্ছিলো স্রেফ সময়ের ব্যাপার। সেটি এল মুস্তাফিজের হাত ধরে।
বেশ কয়েকবার জোড়ালো আবেদন থেকে বেঁচেছেন দুই ওপেনার। অল্পের জন্য কয়েকবার ব্যাটের কানা নেয়নি বল। তবে উইকেট এনে দেওয়া বলটি ছিল অনেক বাইরে। দিমুথ করুনারত্নে আউট হয়েছেন বাজে বলে। ব্যাটের কানায় লেগে গালিতে উড়ে যায় বল। গালিতে দারুণ ক্যাচ নেন মিরাজ।
শ্রীলঙ্কার রান তখন নবম ওভারে ১ উইকেটে ১৩।
হ্যাটট্রিক মেডেনে শুরু
আগের ম্যাচে বেশ বিবর্ণ ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। তবে এবার শুরুটা করেছেন বেশ ভালো। আগের চেয়ে একটু গতিময় মনে হয়েছে, শুরুর শরীরী ভাষা দারুণ ও আক্রমণাত্মক। আরেক পাশে শুভাশীষ রায়ের শুরুটাও খারাপ হয়নি।
নিজের প্রথম দুই ওভারে রান দেননি মুস্তাফিজ। মাঝের এক ওভারে রান দেননি শুভাশীষও। শুরুর ৩ ওভারে থমকে শ্রীলঙ্কার রানের চাকা।
বাংলাদেশ একাদশে চার পরিবর্তন
নেটে চোট পাওয়া লিটন দাস ছিটকে গিয়েছিলেন আগের দিনই। মাহমুদউল্লাহর বাইরে থাকার ঘোষণাও এসেছিল আগে। তবে এই দুটির সঙ্গে পরিবর্তন আরও দুটি। রাখা হয়নি মুমিনুল হক ও তাসকিন আহমেদকে। দলে ফিরেছেন ইমরুল কায়েস, সাব্বির রহমান, তাইজুল ইসলাম। অভিষেক হচ্ছে মোসাদ্দেক হোসেনের।
বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, মোসাদ্দেক হোসেন, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, সাব্বির রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, শুভাশীষ রায়, মুস্তাফিজুর রহমান।
শ্রীলঙ্কা দলে এক পেসার
শ্রীলঙ্কা দলে পরিবর্তন একটি। পেসার লাহিরু কুমারার জায়গায় আরও একজন ব্যাটসম্যান বাড়িয়েছে তারা। দলে ফিরেছেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। মানে লঙ্কানরা খেলছে এক পেসার নিয়ে।
উইকেট শুষ্ক, ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো
টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে লঙ্কান অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথ বললেন, উইকেট অনেকটা গলের মতোই। তবে আরেকটু বেশি শুষ্ক। প্রথম তিন দিন ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো থাকবে।
শততম টেস্টে টসে হারলেন মুশফিক
২০০০ সালের নভেম্বরে টেস্ট আঙিনায় পা রেখেছিল বাংলাদেশ। ১৬ বছর ৪ মাস ৬ দিন পর টেস্টের নবীনতম সদস্য দলটি দ্রততম সময়ে খেলছে শততম টেস্ট। প্রথম টেস্টে টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন নাঈমুর রহমান। এবার টস হারলেন মুশফিকুর রহিম। পেলেন বোলিং।