মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও এর আশেপাশের এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তির নামে রমরমা ব্যবসা করছে এক শ্রেণির অসৎ ব্যক্তি। ভিক্ষুকদের কারণে বিদেশি পর্যটক, ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও বিমান যাত্রীদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে প্রতিনিয়ত। বিমানবন্দরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ভিক্ষাবৃত্তির কারণে দেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি হচ্ছে বিদেশিদের কাছে। শুধু তাই নয়, এ কারণে নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিমানবন্দরে এসে ভিক্ষুকদের কবলে পড়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। ভিক্ষুকদের টাকা দিলে নেয় না, দিতে হয় ডলার বা বিদেশি টাকা।
সোমবার (৩ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিন থেকে চারজন ভিক্ষুক যাত্রীদের কাছে ভিক্ষা চাচ্ছে। বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় যাত্রীদের গাড়ি যখন আটকা পড়ে ঠিক তখনই বেড়ে যায় তাদের তৎপরতা। এ দৃশ্য দেখেও না দেখার ভান করে পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন এপিবিএন পুলিশ সদস্যরা। এ সময় গাড়িতে বসা এক ব্যক্তি একজন ভিক্ষুকের হাতে ১০ টাকা দেওয়ার পর সে ওই টাকা ফেরত দিয়ে ডলার দাবি করে। একপর্যায়ে গাড়ির জানালায় রীতিমতো ধাক্কাধাক্কি শুরু করে।
রাজধানীতে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও, তা বন্ধ করতে পারেনি ঢাকা মহানগর পুলিশসহ (ডিএমপি) সংশ্লিষ্টরা। যাত্রীদের অভিযোগ, সুস্থ থাকার পরও অনেকে ভিক্ষাবৃত্তি করছেন।
সরজমিনে, কয়েকজন ভিক্ষুককে ভিক্ষা করতে দেখা গেছে। তাদের ছবি তুলতে গেলে দৌড়ে পালাতে শুরু করে। এসময় ছবি তুলতে নিষেধ করেন এপিবিএনের সদস্যরা। দেখা গেছে ১৫-২০ মিনিট পর আবারো সেখানে তিনজন ভিক্ষুক এসে ভিক্ষা শুরু করে।
দেখা যায়, ভিক্ষুক আলম (২৫) শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলেও, বিভিন্ন কৌশলে যাত্রীদের কাছে ভিক্ষা চেয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকে দিচ্ছেন, অনেকে বিরক্ত হচ্ছেন।
সুস্থ থাকার পরও ভিক্ষা করছেন কেনো জানতে চাইলে প্রথমে অস্বীকার করেন ভিক্ষুক আলম। পরে তার ভিক্ষার ছবি দেখালে মাথা নিচু করে বলেন, বিদেশ থেকে যারা আসে তাদের কাছে বিদেশি টাকা থাকে, তারা বিদেশি টাকা ভিক্ষা দিয়ে থাকেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, বিমানবন্দরে কর্মরত এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জিয়াউল হক বলেন, বিমানবন্দরে ভিক্ষুক প্রবেশ করতে পারে না। যদি পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢুকে তা একেবারই নগন্য। কিছু কিছু ভিক্ষুক যাত্রী সেজে ঢুকে এবং আমরা তাদেরকে ধরার সাথে সাথে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে প্রেরণ করি। তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনার জন্য বিভিন্ন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করি। এছাড়াও ভিক্ষুকরা বিমানবন্দরে ঢোকার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। কেউ কেউ আবার যাত্রীদের আত্মীয় হিসেবে প্রবেশ করে। বিমানবন্দরের চারপাশের মেইন রাস্তা পর্যন্ত কোনো ভিক্ষুক দেখলে আমরা সাথে সাথে পদক্ষেপ গ্রহণ করি।