ডেস্ক রিপোর্ট : ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হিসেবে যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবহার হবে সেগুলোতে সিসি ক্যামেরা থাকলে তা সচল রাখতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই সব সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ভোটগ্রহণ পরিস্থিতির রেকর্ড রাখতে চায় কমিশন।
মঙ্গলবার কমিশন সভা শেষে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর এ সব তথ্য জানান। তিনি আরও জানান, জাতীয় সংসদের সম্প্রতি শূন্য হওয়া আসনগুলোর তফসিল নির্ধারণে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ৭ ফেব্রুয়ারি আবারও কমিশন বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
ইভিএম নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, বিএনপি ইভিএম দেখতে না এলে আমরা কী করব। ইভিএমের ভোটের সব ডিজিটাল রেকর্ড থাকে। যে কেউ আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন।
গাইবান্ধা-৩, ঢাকা-১০, বাগেরহাট-৪, বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনের উপ-নির্বাচন এবং চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মঙ্গলবার কমিশনের ৬০তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে এ সভা হয়। ওই সভায় এ সব নির্বাচনের তফসিল চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান ইসি সচিব।
ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরার ব্যবহার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, ভোটকেন্দ্র হিসেবে নির্ধারিত যে সব প্রতিষ্ঠানে আগ থেকেই সিসি ক্যামেরা আছে, সেগুলোকে সচল রাখার জন্য বলা হয়েছে। যাতে করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সেই সব ক্যামেরার মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করা যায়। তবে কেন্দ্রগুলোর বুথে কোনোভাবেই যাতে কোনো সিসি ক্যামেরা না থাকে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে।
ইভিএম মেশিনে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই- এমন দাবি করে সচিব বলেন, এতে কোনো জাল-জালিয়াতির সুযোগ নেই। এ মেশিন ওপেন; যে কেউ এসে দেখতে পারে। নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোতে ইভিএম দেয়া রয়েছে। ইভিএম প্রদর্শনী ও মক ভোটিং করা হবে।
তিনি জানান, ইভিএম মেশিন আমেরিকা, ব্রিটেনসহ কয়েকটা দেশের রাষ্ট্রদূতরা দেখে গেছেন। তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
বিএনপির সন্তুষ্ট কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের বলেছি আপনারা দেখেন। তারা (বিএনপি) তো আসে না। আমরা তো ওপেন রেখেছি। না এলে কী করতে পারি। আপনারা এসে দেখেন। তারা যদি না আসেন, আমরা তাদের কীভাবে আনব?
এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিজের আঙুলের ছাপ দেয়ার মাধ্যমে ১ শতাংশ ভোটারের ব্যালট ইস্যু করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে ভোটারকে চিহ্নিত করার পরই তার আঙুলের ছাপ না মিললে সে ক্ষেত্রে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিজের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে ব্যালট ইস্যু করবেন। আর এমন ভোটোরের সংখ্যা ১ শতাংশের বেশি হলে রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি নিতে হবে। আরও বেশি লাগলে কমিশনের অনুমতি লাগবে। পরবর্তীতে চাইলে এই ইভিএমের তথ্য জানা যাবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইভিএমে ভোটের তথ্য আমাদের কাছে ডিজিটালি সংরক্ষণ করা থাকে। মামলা করারও সুযোগ রয়েছে। কেউ ইচ্ছা করলে এ নিয়ে আদালতেও যেতে পারেন। কেউ চ্যালেঞ্জ করলে তথ্য দেখানো যাবে।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাতে বড় ধরনের আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে এমন নয়। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে দুটি অতর্কিত ঘটনা ঘটেছে। ২৪ ঘণ্টা আগে পুলিশকে না জানিয়ে ওই পথসভা হয়েছিল। এটা নিয়ে দু’দলের সঙ্গে কমিশনের কথা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা না করার জন্য বলা হয়েছে। রিটার্নিং অফিসারকেও নির্দশনা দেয়া হয়েছে। ছোটোখাটো বিষয় থেকে এসব হয়েছে।
নির্বাচনে মাইকিং ও লেমিনেটেড পোস্টার ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ধরনের উল্লাসপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক ইলেকশন করতে গেলে এটা কন্ট্রোল করা খুবই কঠিন। তবে কমিশন ভবিষ্যতে এটা নিয়ে চিন্তা করবে। আচরণবিধিও সময়োপযোগী করারও প্রয়োজন রয়েছে। যাতে মানুষের কষ্ট না হয়, প্রার্থীরা যেন প্রচার করতে পারে।
এর যৌক্তিকতা তুরে ধরে সচিব বলেন, এটি ২০০৯ সালে করা হয়েছিল। তখন কেয়ারটেকার সরকার ক্ষমতায় ছিল। সাধারণত এ সব ক্ষেত্রে কী করা হয়? তারা সাধারণ জনগণ ও রাজনীতিকদের সঙ্গে খুব একটা কথা বলে আচরণবিধিমালা করে না। তখন সংলাপ হলেও সেটা অনেকটা রেসট্রিকটেট (নিয়ন্ত্রণ) ছিল। অনেকের ভেতর ভয়ভীতি ছিল। তারা আচরণ বিধিমালাসহ অনেক কিছু চাপিয়ে দেয়। ২০০৯ এবং এখনকার পরিস্থিতি তো এক নয়। এখন ডেমোক্রেটিক গর্ভমেন্ট, ডেমোক্রেটিক সিচুয়েশন, স্বাধীনভাবে মানুষ কথা বলতে পারে। গণতান্ত্রিক পরিবেশের পরিবর্তন হয়েছে। সেই সঙ্গে আচরণ বিধিমালা আধুনিকায়ন করতে হবে। তার মানে এই নয় কাউকে অন্যায় কোনো সুবিধা দেয়া হবে। এটি হালনাগাদ করতে হবে।
‘শূন্য হওয়া পাঁচটি সংসদীয় আসন নিয়ে কমিশন সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে সচিব বলেন, কমিশন সভায় আলোচনা হলেও তফসিল নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি উপ-নির্বাচন নিয়ে আবারও বসবে কমিশন। সেখানে পাঁচটি আসন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। সেদিন তিনটি আসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। বাকি দুটি উপ-নির্বাচন ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন নিয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি পুনরায় বৈঠকে বসবে কমিশন।
সিটি নির্বাচনে দলীয় ব্যক্তিদের পর্যবেক্ষক কার্ড দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে সচিব বলেন, যে নীতিমালা আছে সেই অনুযায়ী দিচ্ছি। যারা ইসিতে নিবন্ধিত তাদেরই কার্ড দেয়া হচ্ছে।
J/N