ডেস্ক রিপোর্টঃ জেলার উপজেলা সদরের বাপ্তা ইউনিয়নে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’র মাধ্যমে লাখপতি হয়েছেন সবুজ বাকলাই। পারিবারিকভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও নিরলস পরিশ্রমে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে তার পরিবারে। সবুজ বাকলাই (২৬), তার মা শাহনুর বেগম (৪৫), স্ত্রী সুমি বেগম (২২) ও বোন সূখি বেগম (২৪) এরা বাপ্তার সুন্দরখালি গ্রাম উন্নয়ন দলের সদস্য। ২০১৪ সালে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সদস্য হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৩ ধাপে তারা ঋণ পেয়েছেন প্রায় আড়াই লাখ টাকা। এই টাকায় বাড়ির পাশের প্রায় ৬০ শতাংশ জমিতে মাছ চাষ, সবজি চাষ, বিভিন্ন ফলের গাছ, গরু পালন’র আদর্শ খামার গড়ে তুলেছেন। সবুজ বাকলাই এক সময়ে ক্ষদ্র ব্যবসায়ী থাকলেও এখন সে প্রতিষ্ঠিত।
সরেজমিনে বাপ্তার ৫নং ওয়ার্ডের পাইলট এলাকায় সবুজের খামারে গিয়ে মুগ্ধ হতে হয়। মূল রাস্তার পাশেই সবুজের ছোট খামার। খামারটিতে ছোট ছোট ৩টি পুকুরে তেলাপিয়া, রুই, কাতল মাছের চাষ করা হচ্ছে। পুকুর পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন ফলের বাগান। এখানে আম, জাম, লিচু, কলা, পেয়ারা, কাঠাল, জামরুল, বড়ই, লেবু, জলপাই, চালতা, আমলকি, নারকেল গাছের সমাহার। গরু রয়েছে ৩টি। এখানে প্রায় ২’শ লেবু গাছ রয়েছে। প্রতি ২ মাস মাস পর পর বাগান থেকে লেবু বিক্রি করা হয়।
সবুজ বাকলাই বাসস’কে বলেন, এক সময় অনেক অর্থকষ্ট করলেও বর্তমানে তিনি স্বচ্ছলতার মুখ দেখতে শুরু করেছেন। বছরে মাছ বিক্রি করে প্রায় ১ লাখ টাকা লাভ হয়। এছাড়া গত বছর কলা বিক্রি করেছেন ১ লাখ টাকার। লাভ হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। লেবুর শতক (১০০) বিক্রি করেন ৪’শ টাকায়। বছরে লেবু বিক্রি করে ৮০ থেকে ১ লাখ টাকার। এছাড়া অন্যন্য ফলজ গাছ থেকেও মৌসুমে ফল বিক্রি করেন। একটি বাড়ি একটি খামারের মাধ্যমে আজ তাদের পুরো পরিবার স্বনির্ভর বলে জানান সবুজ।
সবুজের স্ত্রী সুমি বেগম বলেন, তারা ২০১৪ সালে প্রথম একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’র সদস্য নির্বাচিত হন। সেবছর পরিবারের ৪ জন সদস্য ১০ হাজার করে ৪০ হাজার টাকা ঋণ পান। এই টাকা ও সাথে জমানো টাকায় তার স্বামি বাড়ির পাশের জমিতে পুকুরসহ বিভিন্ন সবজির বাগান করেন। পুকুর পাড় ও পাশের জমিতে গড়ে তোলেন বিভিন্ন ফলজ গাছের বাগান। পরের বছর ঋণ পান ৮০ হাজার টাকা। চলতি অর্থবছরে ঋন পেয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকার। এই টাকায় আরো সম্প্রসারিত করা হয় খামার। বর্তমানে তারা পরিবার নিয়ে ভালো আছেন।
বাপ্তা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ছগির আহমেদ বলেন, একটি বাড়ি একটি খামারের ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানে গ্রামীন এলাকার অর্থনৈতিক পরিবর্তন হচ্ছে। অসহায় দরিদ্র পরিবারগুলো স্বাবলম্বি হচ্ছে ক্রমশই। আর সবুজের খামার পুরো ইউনিয়নে উদ্যেক্তাদের মধ্যে সারা ফেলেছে। অনেকেই তার মতো ছোট খামার করতে আগ্রহী হচ্ছেন।
সবুজ বাকলাই আরো জানান, তার খামারে আম, জাম, লিচু, জামরুল, নারকেল, জলপাই, আমড়া গাছের বয়স কম হওয়াতে ফলন সিমিত হচ্ছে। আশা করছেন ২/১ বছরের মধে পূর্ণ ফলন হলে তার লাভ আরো বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া বর্তমানে কলা, বড়ই, লেবু, কাঠাল, পেয়ারা বিক্রি করছেন। পাশাপাশি গরুর দুধ বিক্রি করে বাড়তি টাকা উপার্জন করছেন এই খামার থেকে।
সুন্দরখালি গ্রাম উন্নয়ন দলের ম্যানেজার মো: আলমগীর হাওলাদার জানান, তাদের এই সমিতির মধ্যে সবুজই সবচে বড় উদ্যেগক্তা। অন্যন্যরা ক্ষুদ্র আকারে হাঁস, মুরগি, সবজি, মাছ চাষ করলেও এখন সবুজকে দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছে। আলমগীর হাওলাদার বলেন, তিনি নিজে এই পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। আগের প্রত্যেক কিস্তি পরিশোধ করেছেন। বর্তমানে তার গরু রয়েছে ৪টি ও ৩টি ছাগল রয়েছে। রাজ হাঁস ৮টি, দেশি হাঁস ১৩টি ও দেশি মুরগি রয়েছে ৩০টি। গরুর দুধ ও হাস-মুরগির ডিম বিক্রি করে মাসে তার ভালো টাকা আয় হয়।
বাপ্তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইয়ানুর রহমান বিপ্লব বাসস’কে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ এই উদ্যেগের ফলে পল্লী অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের মাঝে সরকারের সুফল পৌঁছে দিচ্ছে। বিভিন্ন এনজিও’র মাধ্যমে যখন ৩৫ থেকে ৪০ ভাগ ঋণ দিতে হয়। তখন এইখানে সমিতির সদস্যরা যারা সঞ্চয় করছে সমপরিমান টাকাই সরকার তাদের অনুদান দিচ্ছে। আমাদের গতানুগতিক এনজিও’র ধারাকে আমুলভাবে পরিবর্তন করেছে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প। ফলে গ্রামের বাড়িগুলো আজ অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে রুপ লাভ করেছে।
প্রকল্পের সদর উপজেলা সমন্বয়কারী লোকমান হোসেন বাসস’কে বলেন, সদরের ১৩টি ইউনিয়নে ১১৭টি ওয়ার্ডে মোট ১৫৬টি সমিতি চালু রয়েছে। আর মোট সদস্য রয়েছে ৯ হাজার ৩৬০জন। এর মধ্যে নারী সদস্য ৬ হাজার ২’শ ৪০ জন ও পুরুষ ৩ হাজার ১’শ ২০ জন। সদরে শুধু সবুজ বাকলাই নয়, আরো অনেকেই এমনি করে এই প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন।
লোকমান হোসেন আরো বলেন, হাঁস-মুরগি পালন, গবাদি পশু পালন, নার্সারী, মৎস্য চাষ উপর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় সমিতির সদস্যদের মাঝে। এতে করে তদের আরো দক্ষ গড়ে তোলা হচ্ছে।
বি/এস/এস/এন