সাদাকালো থেকে রঙিন পর্দায় ঢাকাই সিনেমার জীবন্ত কিংবদন্তি আকবর হোসেন পাঠান। সবার কাছে যিনি ফারুক নামেই পরিচিত।চলচ্চিত্রের মানুষের কাছে যিনি মিঞা ভাই। ঢাকাই সিনেমার এই কালজয়ী নায়কের আজ জন্মদিন।
১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন ফারুক। মাত্র আট বছর বয়সে ফারুক তার মা আফজালুন্নেসাকে হারিয়েছেন। মাকে হারানোর পর জন্মদিনটা সেভাবে উদযাপন করা হয়নি তার। যা হতো সেটিও আর হয়নি ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের প্রয়াণের পর।
এবারের জন্মদিনটা দেশের বাইরে হাসপাতালের আইসিইউতেই কাটছে ফারুকের। বর্তমানে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। বেশ কয়েক বছর ধরেই এখানেই চিকিৎসা নেন ফারুক। নিয়মিত চেকআপ করাতে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে সিঙ্গাপুরে যান, এরপর থেকে সেখানে চিকিৎসাধীন।
ফারুকের শৈশব-কৈশোর কেটেছে পুরান ঢাকায়। ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন তিনি। এরপর তিনি ১৯৭৩ সালে খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘আলোর মিছিল’ দুটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
১৯৭৫ সালে তার অভিনীত ‘সুজন সখী’ ও ‘লাঠিয়াল’ সিনেমা দু’টি ব্যবসা সফল ও আলোচিত হয়। ‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা পার্শ্ব চরিত্রে অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এরপর সময় যতো পেড়িয়েছে পর্দায় নিজেকে গড়েছেন ভেঙেছেন। অভিনয়ে সমৃদ্ধ করেছেন ঢাকাই সিনেমাকে।
একে একে অভিনয় করেছেন ‘সূর্যগ্রহণ’, ‘মাটির মায়া’, ‘নয়নমনি’, ‘সারেং বৌ’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘নাগরদোলা’, ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘কথা দিলাম’, ‘মাটির পুতুল’, ‘সাহেব’, ‘ছোট মা’, ‘এতিম’, ‘ঘরজামাই’, ‘মিয়া ভাই’র মতো অসংখ্য সিনেমায়। সবশেষ ২০০৮ সালে ‘ঘরের লক্ষ্মী’সিনেমায় অভিনয় করেন ফারুক।
ফারুক অভিনীত প্রায় নব্বই ভাগ চলচ্চিত্র ব্যবসা সফল হয়েছে। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন ১৯৭৫ সেরা পার্শ্ব চরিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এরপর ১৯ বার মনোনীত হয়েও সেরা অভিনেতার পুরস্কার পাননি ফারুক। সবশেষ ২০১৬ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন এই কিংবদন্তি।
অভিনয়ের বাইরে নায়ক ফারুক একজন রাজনীতিবিদ। স্কুল জীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। এরপর ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে যোগ দেন। সে সময়ে তার নামে প্রায় ৩৭টি মামলাও দায়ের করা হয়। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। সবশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৭ আসনে প্রথমবারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি।
ব্যক্তিগত জীবনে নায়ক ফারুক ভালোবেসে বিয়ে করেন ফারজানা পাঠানকে। তাদের সংসারে দু’টি সন্তান রয়েছে। কন্যা ফারিহা তাবাসসুম পাঠান ও পুত্র রওশন হোসেন।
ban/N