কিয়েভ (ইউক্রেন), ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ : মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এক ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা শনিবার বলেছেন বাইডেন তার মেয়াদের বাকি চার মাস ‘ইউক্রেনকে জয়ী হওয়ার জন্য সম্ভাব্য সর্বোত্তম অবস্থানে রাখতে’ ব্যবহার করবেন।
কিয়েভে একটি ফোরামে কথা বলার সময় মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান আরও বলেন, সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ইউক্রেনকে সহায়তা নিয়ে আলোচনা করবেন বাইডেন।
কখন রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসেেত হবে ইউক্রেন সে সিদ্ধান্ত নেবে উল্লেখ করে সুলিভান বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন যে শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধটি আলোচনার মাধ্যমে শেষ করতে হবে এবং আমাদের এই আলোচনার জন্য তাদের সঙ্গে শক্তিশালী করা দরকার।’
ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের আগামী জানুয়ারিতে বাইডেনের স্থলাভিষিক্তর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি ইউক্রেনকে সমর্থন করার নীতি অব্যাহত রাখবেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সপ্তাহের শুরুতে বিতর্কে তিনি কিয়েভকে যুদ্ধে জিতাতে চান কি না তা বলেননি।
শনিবার মস্কো ও কিয়েভ সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তির আওতায় ১০৩ জন করে যুদ্ধবন্দী বিনিময় করার পর এবং পূর্ব ইউক্রেনে রুশ বাহিনী তাদের ব্যাপক আক্রমণ অব্যাহত রাখার প্রেক্ষাপটে বাইডেন-জেলেনস্কি বৈঠকের এ ঘোষণা এলো।
সর্বশেষ বন্দী বিসিময়ে মুক্তি পাওয়া রাশিয়ানরা কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের সাম্প্রতিক আন্তঃসীমান্ত হামলার সময় ধরা পড়েছিল। মস্কো বলেছে, ২০২২ সালের মে মাসে মস্কো আজভস্টাল ইস্পাত প্ল্যান্ট দখল করার পর বন্দী করা কিছু ইউক্রেনীয়কে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
জেলেনস্কি টেলিগ্রামে বলেছেন, আরও ১০৩ জন সৈন্যকে রাশিয়ার বন্দিদশা থেকে ইউক্রেনে ফিরে এসছে।
রাশিয়া নিশ্চিত করেছে যে তারা ১০৩ ইউক্রেনীয় বন্দী সেনা ‘হস্তান্তর’ করেছে এবং বিনিময়ে কিয়েভের হাতে আটক ১০৩ রুশ সেনা সদস্য পেয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, সকল রুশ সেনা সদস্য বেলারুশ প্রজাতন্ত্রের ভূখ-ে রয়েছে, তাদের প্রয়োজনীয় মানসিক ও চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
চলমান বৈরিতা সত্ত্বেও রাশিয়া ও ইউক্রেন সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব বা তুরস্কের মধ্যস্থতায় চুক্তির আওতায় আড়াই বছরের সংঘর্ষে বন্দী কয়েক শ’ সেনা বিনিময় করতে পেরেছে।
জেলেনস্কি রাশিয়া থেকে ৪৯ ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দী ফেরত পাঠানোর এক দিন পরে এই ঘোষণা আসে এবং তিন সপ্তাহ আগে উভয় পক্ষই সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তির আওতায় ১১৫ জন করে বন্দী বিনিময় করে।

-রাশিয়ান অগ্রগতি-

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাশিয়ার পূর্ব ইউক্রেনে অগ্রসর হওয়া এবং বেশ কয়েকটি গ্রাম দখল করেছে বলে দাবি করার প্রেক্ষাপটে এ বন্দী বিনিময় সম্পন্ন হলে।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক দৈনিক ব্রিফিংয়ে বলেছে যে এটি পোকরোভস্কের মূল লজিস্টিক হাব থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার (১৯ মাইল) দূরবর্তী ঝেলান পার্শে গ্রামটি ‘মুক্ত’ করেছে।
মস্কোর সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে পোকরোভস্ককে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এটি ইউক্রেনীয় সেনা ও পূর্বাঞ্চলীয় শহরগুলোতে রসদ সরবরাহকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার সংযোগস্থলে অবস্থিত।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে শহরের ৬০,০০০ বাসিন্দাদের অর্ধেকেরও বেশি পালিয়ে গেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মস্কোর সেনাবাহিনী কাছে চলে আসায় এ শহর ছেড়ে যাওয়ার গার বেড়েছে।
ইউক্রেন আশা করেছিল যে গত মাসে কুরস্ক অঞ্চলে তাদের বড় আন্তঃসীমান্ত অনুপ্রবেশ পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার অগ্রগতি মন্থর করবে।
শুক্রবার, জেলেনস্কি বলেছেন যে মস্কো কিছুটা ধীর হয়েছে, তবে পূর্ব ফ্রন্টে পরিস্থিতি ‘খুব কঠিন’ ছিল বলে স্বীকার করেন তিনি।
সুলিভান শনিবার কিয়েভ ফোরামে বলেন, ইউক্রেন সাহসী এবং দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে… তবে পোকরোভস্কের আশেপাশের অঞ্চলটি বিশেষ অনন্য উদ্বেগের বিষয়। 
এদিকে চলতি সপ্তাহে রাশিয়া দাবি করেছে, তারা তাদের পশ্চিমাঞ্চলীয় কুরস্ক অঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে।
এদিকে পাল্টা আক্রমণ শুরু করার সাথে সাথে রাশিয়া এই সপ্তাহে ঘোষণা করেছে যে তারা তাদের পশ্চিমাঞ্চলীয় কুরস্ক প্রদেশের একটি বড় অংশ পুনরুদ্ধার করেছে।
-মিসাইল স্প্যাট-
রাশিয়ার অভ্যন্তরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করতে দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাজ্য ও মার্কিন আলোচনার কারণে এই সপ্তাহে সংঘাত নিয়ে রাশিয়া এবং পশ্চিমের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ¬াদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার পশ্চিমাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, রাশিয়া ভেতরে দূরপাল্লার অস্ত্রের সবুজ সংকেত ব্যবহার ন্যাটো সামরিক জোটকে মস্কোর সঙ্গে ‘যুদ্ধে’ ঠেলে দেবে। 
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের এক প্রতিবেদককে পুতিন বলেছেন, এর মানে হবে ন্যাটো দেশগুলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ করছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন শুক্রবার এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বিলম্বিত করেছেন।
সুলিভান কিয়েভে ফোরামে একটি ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে তার মন্তব্যে বলেন, অনিচ্ছা নয়,  ‘কঠিন এবং জটিল’ লজিস্টিক ব্যবস্থা ইউক্রেনে সহায়তা বিলম্বিত করছে।
সুলিভান বলেন, এটি রাজনৈতিক ইচ্ছার বিষয় নয়। তবে ইউক্রেন সে পরিস্থিতির সম্মুখীন তার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের আরও কিছু করতে হবে এবং আরও ভালো করতে হবে।
একই ফোরামে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ইউক্রেনের গোয়েন্দা প্রধান কিরিলো বুদানভ বলেন, রাশিয়ার সব মিত্রদের মধ্যে উত্তর কোরিয়ার সহায়তা সবচেয়ে ক্ষতিকর, কারণ তারা বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ সরবরাহ করে।

bss\

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে