সিরাজগঞ্জ থেকে, মারুফ সরকারঃ সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল হাসান ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) বা এসিল্যান্ড সেজুঁতি ধরের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত দিয়ে ব্যবসায়ীদের হয়রানী ও পুলিশ দিয়ে ট্রাক ভাংচুরের অভিযোগ করেছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয়রা।

বুধবার বিকেলে উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের মেঘুল্লা গ্রামে সরেজমিনে গেলে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরাসহ উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক আব্দুল হামিদ কমান্ডার, সাধারন সম্পাদক ফজলুল হক সরকার ও সভাপতি ইসুফজী খানসহ অনেকেই এসব অভিযোগ করেন।তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে বালু ব্যাবসায়ীদের নিকট থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা বা ঘুষ গ্রহন এবং যত্রতত্র প্রসেস মিলের রাসায়নিক বর্জ ফেলে এলাকা দুষনকারী কতিপয় অসাধু তাঁত ব্যবসায়ীদের নিকট উৎকোচ গ্রহনের অভিযোগ তোলেন। এমনকি, ঘুষের টাকা বা মাসোয়ারা না পেলে ব্যাবসায়ীদের নানা অযুহাতে প্রায়ই ভ্রাম্যমান আদালত বা পুলিশ দিয়ে হয়রানীর করা হয়ে বলেও ইউএনও’র বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ তাদের।

জেলা প্রশাসকসহ উর্ধ্বতনগন বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন, এমনটাই দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ও উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতারা। বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের বালু ব্যাবসায়ী ও ঠিকাদার নান্নু বিশ্বাস ও তার ভাই বাবলু বিশ্বাসহ অভিযোগ করে বলেন, মেঘুল্লা গ্রামের তাদের বাব-দাদার নিজস্ব খাজনা-খারিচ হওয়া জমি থেকে তারা বালি উত্তোলন করে ব্যবসা করে আসছেন।

বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুরোধে তারা এসিল্যান্ড ও ভুমি অফিসের ডিস্ক ভরাটের জন্য গত বছরে নিজেদের লেবার ও ট্রাক দিয়ে প্রায় ৫ লাখ টাকার বালি সরবরাহ করেছেন। ওই টাকা পরিশোধ করা তো দুরের কথা, এরই মধ্যে গত ২৬ মার্চ উপলক্ষে ৫০ হাজার টাকার চাঁদা দাবি করেন। দাবিকৃত চাদার বিপরীতে ২০ হাজার দিলে সে ক্ষুদ্ধ হয়ে গত ২৮ মার্চ বিকেলে একজন নারী এসিল্যান্ডকে দিয়ে আমাদের বালু মহালে অভিযান চালায়।

এ সময় কাউকে ধরতে না পারলেও এসিল্যান্ড পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে বালি তোলার বেলচা দিয়ে ট্রাকের গ্লাস ভাচুর করে। বিষয়টি আমরা স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের জানালে তারা পরদিন সরেজমিনে দেখতে আসেন। বেলকুচি উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য গাজী আব্দুল হামিদ কমান্ডার বলেন, বেলকুচিতে ইউএনও নির্দেশ ছাড়া একটি গাছের পাতাও নড়ে না। হুরাসাগর থেকে যুমনা নদীতে যত অবৈধ বালুমহাল আছে, তা তার নিয়ন্ত্রনেই চলে। তাকে মাসোয়ারা দিলে চলে, আর না দিলে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ভলগেট বা পাইপ কেরোসিন বা পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। আমার নিজের ছেলের নিকটই ইউএনও তার লোকজন দিয়ে ৫০ হাজার টাকা মাসোয়ারা চেয়েছিলেন। টাকা দেইনি বিধায় সে আমার ছেলেকে ব্যবসা করতে দেয়নি।

রাজাপুর ইউনিয়নের আগুরিয়া গ্রামের নুরু ব্যাবসায়ী ইউএনও’র সাথে মিলতাল করে ৩টি ভলগেট বসিয়ে রমরমা ব্যবসা করেছেন। বেলকুচি উপজেলা আওয়ামলীগের সাধারন সম্পাদক ফজলুল হক সরকার ও সভাপতি ইউসুফজী খান বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ প্রায়ই শোনা যাচ্ছে। অবৈধ বালু ব্যবসায়ী হলে তাকে ভ্রাম্যমান আদালতে সাজা দিবে বা জেলা জরিমানা হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, মাসোয়ারার টাকা না পেলে হয়রানী করা হবে, পুলিশকে লেলিয়ে দিয়ে ব্যবসায়ীর ট্রাক ভাংচুর করা হবে, সরকারকে বিব্রত ফেলা ছাড়া এসব আর কিছু নয়।

যে সমস্ত সরকারী কর্মকর্তা বেলকুচিতে এসব কলছেন, শুধু উপজেলা নির্বাহী অফিসার নন, বরং সবার বিরুদ্ধেই তদন্ত হওয়া উচিৎ।বেলকুচি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) বা এসিল্যান্ড সেজুঁতি ধর বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে মঙ্গলবার বিকেলে বেলকুচির দৌলতপুর ইউনিয়নের মেঘুল্লা গ্রামে যমুনার পাড়ে অবৈধ দু’টি পয়েন্টে অভিযান চালালেও কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। একটি ট্রাক ধরা হলেও চালক-হেলপার পালিয়ে যায়। শত শত লোকজনের সামনেই আমরাও চলে এসেছি। এরপর কি হয়েছে, তা আমার জানা নেই। ট্রাক ভাংচুর হয়তো বালু ব্যবসায়ীরাই করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল হাসান অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে নিয়মিত ঘুষ বা উৎকোচ বা মাসোয়ারা গ্রহন, এমনকি হয়রানী বা ট্রাক ভাংচুরের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, ভ্রাম্যমান আদালতের কারনে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের স্বার্থে আঘাত লাগায় তারা এসব রং-চং লাগানোর চেষ্টা করছে। যাতে করে ভবিষ্যতে ওইসব অঞ্চলে ভ্রাম্যমান আদালত না যায়, এ উদ্দ্যেশে। জেলা প্রশাসক কার্যালয় হতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নির্দেশ পেয়ে আমরা এসব অভিযান চালাচ্ছি। আর জেলা প্রশাসক নিজেও তিনি ওইসব অবৈধ বালু মহাল পরিদর্শন করে গেছেন।

এ বিষয়ে বেলকুচি থানার ওসি সাজ্জাত হোসেন বলেন, বেলকুচির অবৈধ বালু মহালের বিষয়ে তার তেমন জানা নেই। মাঝেমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিস বা এসিল্যান্ড অফিস থেকে পুলিশ চাইলে ভ্রাম্যমান আদালতে তাদের পাঠানো হয়। মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ কোন ট্রাক ভাঙ্গেনি। পুলিশ চলে আসার পর হয়তো ট্রাক কেউ ভেঙ্গেছে। জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ীরা বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমি ঢাকায় আছি। সিরাজগঞ্জ এসে এ বিষয় নিয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উর্ধ্বতনদের সাথে পরে কথা বলবো।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে