ডেস্ক রিপোর্ট : রাজধানীতে এখনও পর্যাপ্ত সংখ্যক মানসম্মত পাবলিক টয়লেট গড়ে ওঠেনি। জনসংখ্যার তুলনায় পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা কম। পুরাতন পাবলিক টয়লেটের মানও খুব খারাপ। পুরুষরা কোনোভাবে এসব টয়লেট ব্যবহার করতে পারলেও নারী ও শিশুরা ব্যবহার করতে পারছেন না। এতে তারা বাইরে বের হয়ে অস্বস্তিতে পড়েন। নগরবাসীর পক্ষ থেকে আধুনিক পাবলিক টয়লেট স্থাপনের দাবি উঠলেও কার্যকর সমাধান হচ্ছে না।
জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ওয়ার্ড সংখ্যা ৫৪টি। জনবহুল এসব ওয়ার্ডে একাধিক আধুনিক মানের পাবলিক টয়লেট প্রয়োজন হলেও সব মিলিয়ে রয়েছে মাত্র ২৫টি। জনসংখ্যা ও আয়তন বিবেচনায় আরও কয়েক শত আধুনিক মানের পাবলিক টয়লেট দরকার ডিএনসিসি এলাকায়। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ওয়ার্ড সংখ্যা ৭৫টি। পুরান ঢাকা অধ্যুষিত এই সিটির বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর জন্য পাবলিক টয়লেট আছে মাত্র ৩৭টি। এর মধ্যে ২৯টি নতুন ও পুরনো ৮টি। প্রয়োজনের তুলনায় পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা অনেক কম হলেও এ চাহিদা পূরণে ডিএসসিসির উদ্যোগ লক্ষণীয় নয়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সহায়তা এবং দুর্যোগ প্রশমন প্রকল্পের আওতায় স্বল্পপরিসরে কিছু পাবলিক টয়লেট নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
ঢাকার দুই সিটির মেয়র প্রার্থীদের কাছে দুই সিটির বাসিন্দাদের দাবি- যে বা যিনি নগরপিতা নির্বাচিত হোন না কেন, তারা নির্বাচিত হলে শহরের বাসিন্দাদের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত সংখ্যক মানসম্মত পাবলিক টয়লেট তৈরি করবেন। মেয়র প্রার্থীদের কাছ থেকে নগরবাসী এমন প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার প্রত্যাশা করছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা শহরের পাবলিক টয়লেট সংস্কার, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি। পাবলিক টয়লেট সংস্কার ও পরিচালনা বাবদ যাবতীয় ব্যয় সিটি কর্পোরেশন নিজস্ব তহবিল অথবা যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে বহন করছে। আর সিটি কর্পোরেশন পাবলিক টয়লেট নির্মাণের পর তা ইজারাদারদের কাছে হস্তান্তর করে। তারাই মূলত এগুলো দেখভাল করে থাকে। নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে তারা সাধারণ মানুষকে শৌচাগার সেবা দিয়ে থাকে। সিটি কর্পোরেশন ইজারাদারদের কার্যক্রম তদারকি করে থাকে।
ভুক্তভোগীরা জানান, ঘরের বাইরে গেলে পাবলিক টয়লেট সংকটের কারণে নানা সমস্যা পোহাতে হয় তাদের। পড়তে হয় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখায় নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন নগরবাসী। এর মূল ভুক্তভোগী নারী, শিশু ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি। শহরের পাবলিক টয়লেটগুলো দুর্গন্ধে ভরা, ছিটকানিও নষ্ট, অনেক সময়ই থাকে না ভেতরে পানির ব্যবস্থা। আর পাবলিক টয়লেটগুলো নিয়ে শহরের বাসিন্দারের অভিজ্ঞতাও সুখকর নয়। ঢাকা শহরের যানজট পরিস্থিতি নাজুক হওয়ায় পাবলিক টয়লেটের দুর্ভোগ মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঢাকায় গাড়ির গতি প্রতি ঘণ্টায় ৬ দশমিক ৪ কিলোমিটার। অর্থাৎ ঢাকায় খুব ধীরগতিতে গণপরিবহন চলাচল করে। এতে যাত্রীদের দীর্ঘ সময় গাড়িতে বসে থাকতে হয়। কর্মজীবী যারা রয়েছেন তাদের দিনের বেশিরভাগ সময়ই বাইরে থাকতে হয়। কিন্তু, চলার পথে অনেকেই পাবলিক টয়লেট পান না। পেলেও এসব টয়লেট ব্যবহারের উপযোগী নয়। ঘরের বাইরে গেলে পাবলিক টয়লেটের সংকটের কারণে নানা সমস্যা পোহাতে হয়। পড়তে হয় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখার কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হতে হয়। এই শহরে নাগরিকদের তেমন কোনো নাগরিক সুবিধাই মেলে না। আর এ শহরে রয়েছে যানজট, ধুলাবালু, শব্দদূষণসহ নানা সমস্যা। পাবলিক টয়লেটের মতো একটা দরকারি বিষয়ও এই শহরে অবহেলিতই থেকে যাচ্ছে।
নগরের ৮০ শতাংশ মানুষ হেঁটে চলাচল করে। অথচ শহরের হাঁটার পথে গণশৌচাগার নেই বললেই চলে। এ শহরের আয়তন ও জনসংখ্যা অনুযায়ী আরও শতাধিক আধুনিক পাবলিক টয়লেট দরকার। পাবলিক টয়লেট ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শরীফ উদ্দিন বলেন, ঢাকা শহরের মানসম্মত পর্যাপ্ত সংখ্যক পাবলিক টয়লেট নেই। দায়িত্ব অনুযায়ী এসব পাবলিক টয়লেট স্থাপন করবে সিটি কর্পোরেশন; সে দায়িত্ব পালনে আমরা সচেষ্টও আছি। তবে সমস্যা হচ্ছে, বরাদ্দ থাকলেও জায়গা সংকট এবং কমিউনিটি পর্যায়ের বাধার কারণে এটা সম্ভব হয়ে উঠে না।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ঢাকা শহরে মানসম্মত পর্যাপ্ত সংখ্যক পাবলিক টয়লেট নেই। আমরা বিভিন্ন সময়ে মানসম্মত পাবলিক টয়লেট স্থাপনের চেষ্টা করেছি। কিন্তু জায়গা সংকটে সফল হতে পারিনি। এখনও আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। তবে যে পরিমাণ পাবলিক টয়লেট দরকার, সে অনুযায়ী জায়গা মিলছে না।
J/T/N