তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ সাধারণ মানুষকে রাস্তা-ঘাটে হয়রানি না করতে পুলিশের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
আজ দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডের সরকারী বাসভবনে সাংবাদিকরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ আহবান জানান।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জনগণকে রাস্তায় অহেতুক ঘোরাফেরা না করার জন্য সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তবে রাস্তায় যে কেউ প্রয়োজনে যেতেই পারেন। রাস্তায় গেলেই কাউকে হয়রানি করাটা দুঃখজনক।
তথ্যমন্ত্রী আরা বলেন, প্রয়োজনে অবশ্যই যে কেউ রাস্তায় বের হতে পারে, তবে বিনা প্রয়োজনেও কেউ যদি বের হয়, তাকে বুঝিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য পুলিশ সদর দপ্তরকে থেকে মাঠ পর্যায়ের পুলিশকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাই কেউ ঘর থেকে বের হলেই তাকে হয়রানী করতে হবে তা সঠিক নয়।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে গবেষণায় ব্যয় বাড়ানের ওপর গুরুত্বারোপ করে হাছান মাহমুদ বলেন, আজ সারা পৃথিবীর মানুষ লক্ষ্য করছে একটি জীবানুর কাছে মানুষ কত অসহায়। সমস্ত পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ মানুষ লকডাউন অবস্থায় আছে। সমস্ত পৃথিবী থমকে গেছে। শত্রু হলো পৃথিবীর মানুষ।
তিনি বলেন, আমরা একটি জীবানু মোকাবেলা করতে পারিনি, পরাস্ত করতে পারিনি। অর্থাৎ আমরা দেখতে পাচ্ছি, পৃথিবীতে মেডিকেল রিসার্চের জন্য সরকারী ব্যয় হচ্ছে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা মাত্র কয়েকটি অত্যাধুনিক সামরিক বিমান তৈরির ব্যয়ের সমান।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, অথচ আমরা একে অপরের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য ক্রমাগত সামরিক ব্যয় বাড়িয়ে চলেছি। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে সামরিক ব্যয় বেড়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ। এ ব্যয় দিন দিন বাড়ছে।
তিনি বলেন, পৃথিবীর ৫টি দেশ মোট সামরিক ব্যয়ের ৬০ শতাংশ ব্যয় করে থাকে, সেটা আরো বাড়ছে। আমরা আশা করবো মানবজাতির ভাবার সময় এসেছে, আমরা এক অপরের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য ব্যয় বাড়াব, নাকি মানুষকে স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা দেয়ার জন্য ব্যয় বাড়াব।
হাছান বলেন, কারণ ভবিষ্যতে এ ধরনের জীবানুর আক্রমণ আরো হতে পারে। সুতারং সেটি থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য স্বাস্থ্যখাতে গবেষণায় ব্যয় বাড়ানো এখন সময়ের দাবী। এটি নিয়ে বিশ্ববাসীকে অবশ্যই ভাবতে হবে।
এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন ‘আমি মনে করি, যেভাবে একটি জীবানুর কাছে মানুষ অসহায় হয়ে গেছে তা যারা অস্ত্রের প্রতিযোগিতা ও যুদ্ধের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত আছে তাদের বোধদয় ঘটাবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, গত পরশুদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে বৈশ্বিক মহাদুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য দেশবাসীকে ঘরে থাকার আহবান জানিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে দশ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, জনগণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে সাড়া দিয়ে কার্যত তারা ঘরেই অবস্থান করছেন। সরকার ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যা যা করার প্রয়োজন তারা তাই করছে।
হাছান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক এই দুর্যোগ মোকাবেলায় কি কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা যেমন তিনি তাঁর ভাষণে বলেছেন, তেমনি তিনি এই দুর্যোগ মোকাবেলায় জনগণকে আশ্বস্ত করেছেন।
তিনি বলেন, এই দুর্যোগের কারণে যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে, সেটি নিয়েও সরকারের প্রস্তুতির কথা বলেছেন এবং ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া এই ভাষণ সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে এবং জাতিকে আশ্বস্ত করেছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, কিন্তু আমরা দেখতে পেয়েছি যে গত পরশুদিন যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব কিছু ভুলে গিয়ে মানবিক কারণে তাঁর ক্ষমতা বলে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে বেগম জিয়ার জামিনের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি (খালেদা) কারাগার থেকে অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেগম জিয়ার ১৫ আগস্ট ভূয়া জন্মদিন পালন, খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠপুত্র আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর সন্তানহারা মাকে সমবেদনা জানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে এসেছিলেন এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিএনপি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ও তারেক রহমানের সহায়তায় গ্রেনেড হামলার কথা ভুলে গিয়ে খালেদা জিয়ার জামিনের ব্যবস্থা করেছেন।
হাছান বলেন, কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম দেশের সমস্ত মানুষ যখন বৈশ্বিক দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য ঘরে অবস্থান করছে ও স্বাস্থবিধি মেনে চলছে তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, গুলশানের বিএনপির কার্যালয় ও রাস্তায় শত শত লোক জমায়েত হয়েছে।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক এই দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য যখন স্বাধীনতা দিবসের সমস্ত অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে এবং সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দেয়া বাতিল করা হয়েছে, সেখানে শত শত লোকের জমায়েত চরম দায়িত্বহীনতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আজকে পৃথিবী বৈশ্বিক দুর্যোগ মোকাবেলা করছে। আমরা এ সময় কোন ধরনের রাজনৈতিক বাদানুবাদ চাই না। আমরা আশা করি, বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধভাবে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করবে।
তথ্যমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আমরা সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বৈশ্বিক এই দুর্যোগ মোকাবেলা করতে সমর্থ হবো।
নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সহায়তার বিষয়ে জানতে চাইলে হাছান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ১০টাকা মূল্যে চাল সরবরাহের জন্য মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু অঞ্চলে তা সরবরাহ করা হচ্ছে, বাকী এলাকাগুলোতে সহসাই বিতরণ শুরু করা হবে। রাজধানীতেও তা চালু করা হবে।
এ সময় তথ্যমন্ত্রী নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তা করতে সমাজের বিত্তবান মানুষদের প্রতিও আহবান জানান।

B/S/S/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে