জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ গত ২০/০৯/২০২১ তারিখে সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতারণা মামলা দায়ের হলে ২৭/০৯/২০২১ তারিখে মেয়র সংবাদ সম্মেলন করেন। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে তিনি যে বক্তব্য প্রদান করেন তা মিথ্যাচারে পরিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন মামলার বাদী গাউসুল আযম ফারুকী।  

এ ব্যাপারে গাউসুল আযম ফারুকী বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে লিখিত আকারে জানান, নির্বাচনের আগে মেয়র আমাকে বলেন যে, তিনি শতভাগ জয়লাভ করবেন। আর নির্বাচনে জয়লাভ করে আমাকে লিফটের নকশা করে দিবেন। এভাবে তিনি আমাকে আশ্বস্ত করে আমার কাছ থেকে এক লক্ষ টাকার চেক গ্রহণ করেন এবং চেকের টাকা উত্তোলন করেন। 

পরবর্তীতে তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করলেও আজ পর্যন্ত আমাকে লিফটের নকশা করে দেন নাই। বাধ্য হয়ে আমি তার বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা দায়ের করি। যা শতভাগ সঠিক। 

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র বলেছেন, ‘বিগত পরিষদের আমলে আমি মহামান্য হাইকোর্টে এবং নীলফামারী জজ কোর্টে বিভিন্ন প্রকার মামলা দায়ের করি যা মহামান্য হাইকোর্ট ও নীলফামারী জজ কোর্ট খারিজ করে দিয়ে পৌরসভার পক্ষে রায় দেন।’ 

মেয়রের এই বক্তব্য মিথ্যাচারে পরিপূর্ন। বিগত পরিষদের আমলে আমি কাউন্সিলর আল মামুনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের ১টি মামলা দায়ের করি। এর পর কাউন্সিলর আল মামুনসহ কাউন্সিলর শাহীন আকতারের বিরুদ্ধে ১টি সরকারী কাজে বাধা প্রদানের সন্ত্রাসী হামলার মামলা দায়ের করি। 

অতঃপর কাউন্সিলর আল মামুনসহ কাউন্সির শাহীন আকতারের বিরুদ্ধে ১টি মানহানি ফৌজদারী মামলা দায়ের করি। মামলাগুলি সৈয়দপুর থানা কর্তৃপক্ষ ও সি.আই.ডি তদন্ত করে কাউন্সিলর আল মামুন ও কাউন্সিলর শাহীন আকতারের বিরুদ্ধে চার্জশীট প্রদান করেন। মামলাগুলি বর্তমানে বিচারাধীন আছে।

এছাড়া আমার নির্মানাধীন ভবনে লিফট স্থাপন সংক্রান্ত বিষয়ে বিগত পরিষদের মেয়রের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে ০২টি রীট মামলা দায়ের করি যার নং- ২৬৫১/২০১৯ ও ৪৮২৯/২০১৯। উক্ত ০২টি মামলায় মহামান্য হাইকোর্ট আমার পক্ষে শতভাগ আদেশ প্রদান করেন এবং আদেশের কপি বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে প্রদান করা হয়েছে। 

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র বলেন, ‘বিগত পৌর পরিষদ পৌর বিধি ভঙ্গ করায় আমার নির্মানাধীন বিল্ডিং এর নকশা বাতিল করে দেন।’ মূলত কাউন্সিলর আল মামুন ও কাউন্সিলর শাহীন আকতারের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার জের ধরে আমার নির্মানাধীন বিল্ডিং এর নকশা বাতিল করা হয়। পৌর বিধি অনুযায়ী যার নামে জমির খারিজ তার নামে নকশা হয়। 

২০১৩ সালে আমার পিতার নামে জমির খারিজ থাকায় আমার পিতার নামেই নকশাটি অনুমোদন হয়। পিতার মৃত্যুর পর আমি জমির মালিকানা প্রাপ্ত হই। কিন্তু দীর্ঘ ০৫ বছর পর বিগত মেয়র জমির মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতা দেখিয়ে নকশাটি বাতিল করেন। 

অথচ ওই জমির মালিকানার বিষয়ে কোন প্রকার অভিযোগ পৌরসভার কাছে নাই। এই বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্টে মামলা হলে মহামান্য হাইকোর্ট আমার নামে নকশা বহাল করার আদেশ প্রদান করেন। 

সম্মেলনে মেয়র বলেন, ‘গাউসুল আযম ফারুকীর অর্থের উৎস কোথায়? আমরা দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আকারে জানাবো।’ এ বিষয়ে আমি বলতে চাই বিগত পরিষদের আমলে কাউন্সিলর আল মামুন ও কাউন্সিলর শাহীন আকতার কর্তৃক আমার বিরুদ্ধে দুদকসহ সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ প্রদান করা হয় এবং পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করা হয়।

বিষয়টি আমি চ্যালেঞ্জ করলে আমার সবকিছুই বৈধ প্রমানিত হয়। এর ফলে আমি ওই দুই কাউন্সিলর সহ ১১জনের বিরুদ্ধে এক কোটি টাকার মানহানির ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করি। 

পরিশেষে আমি মেয়রের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনি জনগনের নির্বাচিত মেয়র, আপনি জনগনের জন্য কাজ করবেন। আপনার আশেপাশে নিকৃষ্ট কিছু লোকজনের পাল্লায় পড়ে নিজেকে কলঙ্কিত করবেন না। যে শপথ নিয়ে মেয়র হয়েছেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করুন। জনগনের সাথে লড়াই নয়, জনগনের সেবা করুন। গর্বিত মেয়র হোন।

এ ব্যাপারে পৌর মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবির বক্তব্য নেওয়ার জন্য তাঁর মোবাইল ফোনে কল দিলে ফোন রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে