কাওছার হামিদ কিশোরগঞ্জ, নীলফামারী: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নীলফামারীর-৪ সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ নির্বাচনী আসনে বইছে ভোটের হাওয়া। ফলে এবার এই আসনটি নিয়ে চলছে অনেক হিসাব-নিকাশ।

স্বাধীনতার পরবর্তী সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে কিশোরগঞ্জ থেকে জাতীয় পার্টি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসাইন মুহাম্মাদ এরশাদের ভগ্নিপতি ড.আসাদুর রহমান।

২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চার দলীয় ঐক্যজোট (বিএনপি) সৈয়দপুর থেকে প্রয়াত সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেন সরকার নির্বাচিত হন।

২০০৮ সালে কিশোরগঞ্জ থেকে আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল প্রয়াত মারুফ সাকলান। এরপর থেকে আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে চলে আসে।

ফলে ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টি সৈয়দপুর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আলহাজ্ব শওকত চৌধুরী।

আবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট থেকে কিশোরগঞ্জে পুনঃরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হুসাইন মুহাম্মাদ এরশাদের ভাগিনা ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত ড. আসাদুর রহমানের পূত্র এবং জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান আদেল।

এখন পর্যন্ত সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। তবে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য না থাকায় আওয়ামীলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা বিভিন্ন চাওয়া-পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

২০২৪ সালে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারে আসনটিতে দলীয়ভাবে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পাবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন কিশোরগঞ্জ-সৈয়দপুর দুই উপজেলা মিলে প্রায় হাফ ডজন প্রার্থী।

এদের মধ্যে কিশোরগঞ্জ থেকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে বিভিন্ন মোড়ে, হাট-বাজার থেকে শুরু করে বিভিন্নস্থানে ব্যানার, পোষ্টার, ফেস্টুন লাগিয়ে প্রচার-প্রচারণা দিয়ে সব থেকে এগিয়ে রয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির সংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মোশাররফ হোসেন।

অপর দিকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বাবুল, তিনিও দলীয়ভাবে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন চাচ্ছেন।

এছাড়াও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পতিরাম রায় তিনিও বসে নাই পোষ্টার, ব্যানার, টাঙ্গিয়ে মাঠে নেমেছেন দলীয় মনোনয়ন পাবার আশায়।

কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী তারুন্যের প্রতীক বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছা-সেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাফিউল করিম নাফা, যদিও দলীয় কর্মকান্ডে বর্তমান মাঠে দেখা যাচ্ছে না, তবে সময় হলে তিনিও মাঠে নামবেন বলে জানিয়েছেন। তার মানে তিনিও পিছিয়ে নেই আওয়ামীগের মনোনয়ন পাওয়া থেকে।

নীলফামারী-৪ আসনের অপর অংশটি হচ্ছে রাজনৈতিক জেলা হিসেবে খ্যাত সৈয়দপুর উপজেলা সেখানেও বসে নেই আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা।

বর্তমানে রাজনীতির মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোকছেদুল মোমিন।

আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সৈয়দপুরের মেয়ে আমেনা কোহিনুর আলম, নারী প্রার্থী হিসেবে তিনি একমাত্র।

দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ দুই উপজেলায় ব্যাপকভাবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

অপরদিকে একাধিকবার আওয়ামীলীগের মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাপ করেছেন সৈয়দপুরের কৃতি সন্তান ব্যারিস্টার মোকছেদুল হক। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনী মাঠে দেখা না গেলেও দলীয় মনোনয়ন পেতে তিনিও পিছিয়ে নেই ।

২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চার দলীয় ঐক্যজোট (বিএনপি) সৈয়দপুর থেকে প্রয়াত সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেন সরকার নির্বাচিত হন।

এর পর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিএনপির হাতছাড়া হয়ে যায় এ আসনটি। অপরদিকে টানা তিন টাইম আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায়।

২০১৪ সালে জাতীয়তাবাদী (বিএনপি) দলটি নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করার ফলে দলীয়ভাবে আর একধাপ পিছিয়ে যান পরে ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করলেও শেষে ভোট বর্জন করেন।

যার ফলে আরো একধাপ এগিয়ে আছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। এর ধারাবা হিকতায় নীলফামারী-৪ আসনে নৌকা প্রতীক পাওয়ার আশায় দৌড়ঝাপ করছেন প্রার্থীরা। কিন্তু এদিকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী দলটি এবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।

ফলে কেন্দ্র থেকে বিভাগ, বিভাগ থেকে জেলা, জেলা থেকে উপজেলা এবং ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত দলটি কাউন্সিল শেষ করে দল গোছানোর কাজটি সেরে ফেলেছন।

কেন্দ্র থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত মির্টি-মিছিল-আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে অন্যান্য আসনের তুলনায় নীলফামারী-০৪ আসনে প্রয়াত সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেন সরকারের মৃত্যুর পর বিএনপির যোগ্য বা হেবি ওয়েট প্রার্থী এখন পর্যন্ত চোখে পড়ছে না বলে একাধিক সূত্রে জানাগেছে।

তবে আসনটিতে (বিএনপি) থেকে মনোনয়নের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন এমনকি প্রচার-প্রচারণায় দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন সঙ্গীত জগতের এক উজ্জল নক্ষত্র বøাক ডায়মন্ড হিসেবে খ্যাত সঙ্গীত শিল্পী বেবী নাজনীন।

অপর দিকে সংরক্ষিত আসনের সাবেক মহিলা সংসদ সদস্য বিলকিস ইসলাম, তিনিও জাতীয়তাবাদীল দল (বিএনপি) থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী।

এদিকে জাতীয়পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য শওকত চৌধুরী জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপিতে) নতুন করে যোগদান করার পর তিনিও বিএনপি থেকে মনোনয়ননের জন্য যতেষ্ট দৌড়ঝাপ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে বর্তমান জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান আদেল দুই উপজেলায় ব্যাপক হারে বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজ করায় আবারো এমপি হিসেবে তাকে দেখতে চান সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জের মানুষ। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই মানুষের মুখে শুনা যাচ্ছে তাঁর নাম ডাক।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে