স্টাফ রিপের্টার:  সিরাজগঞ্জ খেকে,মারুফ সরকার:  বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রিয় স্থানগুলোর মধ্য অন্যতম ছিল শাহজাদপুর। সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার পুরো শহরজুড়েই রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজরিত নানা নিদর্শন।এখানেই অনেক সময় ব্যায় করেছেন রবীন্দ্রনাথ। তার অনেক স্মৃতি রয়েছে এখানে । শাহজাদপুরের অপরুপ প্রকৃতিক নৈসর্গিক পরিবেশ কবিগুরুকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছিল।

এজন্য তিনিই ১৮৯০ সালে জমিদারি দেখাশোনা করতে শাহজাদপুরে আসেন। ৭ বছর এখানে থেকে তিনি তার সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেন অসংখ্য কবিতা, ছোটগল্প, নাটক ও সঙ্গীত রচনার মধ্যদিয়ে।শাহজাদপুর তথা সিরাজগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ৮ মে ব্শ্বিকবির রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকীতে তারই নামে দেশের ৩৫তম এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়টি ভারতের শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতীর আদলে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

কিন্তু ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দুই বছর পার হলেও এ বিশ্ববিদ্যালয় চালুর কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র অনুরাগীদের মাঝে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন সংসদে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পাস হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক ও ভিসি নিয়োগ এখন প্রক্রিয়াধীন। এরপর প্রকল্প পরিকল্পনা তৈরির পর অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে।শাহজাদপুর ও সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র অনুরাগীদের দাবি, অবকাঠামো নির্মাণের আগে ক্লাস চালুর নজির অনেক রয়েছে। এরপরেও কেন শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস চালু হচ্ছে না বিষয়টি আমাদের কাছে পরিস্কার নয়।

তাছাড়া রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস চালুর জন্য শাহজাদপুরে যথেষ্ট পরিমাণ ভবন রয়েছে।শাহজাদপুর সরকারি কলেজ, পাইলট হাইস্কুল, এহিয়া কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাসরুমে অথবা ভাড়া করা ভবনে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস চালু করা যেতে পারে। অবকাঠামো নির্মাণ শেষ করে ক্লাস চালু করতে গেলে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম কমপক্ষে ১০ বছর পিছিয়ে যাবে। এজন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে ক্লাস চালু করার দাবি জানিয়েছেন রবীন্দ্র অনুরাগী ও ভক্তরা।শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বগুড়া অঞ্চল সূত্রে জানা যায়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণের জন্য সাবেক জেলা প্রশাসক মো. বিল্লাল হোসেনকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।

রবীন্দ্রনাথেরই রেখে যাওয়া শাহজাদপুর উপজেলা শহরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে রাউতারা ও বুরি পোতাজিয় মৌজার ১৪শ বিঘা গোচারণ ভূমির মধ্যে ১০০ একর নির্ধারণ করেন ওই কমিটি। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাবিত স্থানে মাটি ভরাট, বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ ও লিংক সড়ক স্থাপনের জন্য প্রকল্প তৈরির নির্দেশ দিলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সম্ভাব্য তিনটি প্রকল্প প্রস্তাবনা দেন।স্থানীয় রবীন্দ্র অনুরাগী, রাজনৈকি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বললে হতাশা ব্যক্ত তারা করে বলেন, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দুই বছর পার হলেও অবকাঠামো নির্মাণতো দূরের কথা শিক্ষা কার্যক্রমও শুরু করা সম্ভব হয়নি।

কবে নাগাদ শিক্ষাবর্ষ চালু হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না।দি বার্ড সেফটি হাউসের সভাপতি মামুন বিশ্বাস জাগো নিউজকে জানান, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে শাহজাদপুর তথা সিরাজগঞ্জবাসী গর্বিত। তবে এ বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম এখনও শুরু না হওয়ায় আমাদের অনেকের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত একটি প্রকল্প। এটি ত্বড়িৎগতিতে সম্পন্ন করার আহ্বান জানান তিনি।বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক নাসিম উদ্দিন মালিথা জানান, ১৯৯২ সাল থেকে শাহজাদপুরবাসী রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি তুলে আসছিলেন।

দীর্ঘদিন পর হলেও প্রধানমন্ত্রী এটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। আমরা শাহজাদপুরবাসী আশ্বস্ত হয়েছিলাম। কিন্তু গত দুই বছরেও এ প্রকল্পটির দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। শাহজাদপুরে অনেক ভবন রয়েছে সেখানে শিক্ষাবর্ষ চালু করা যেতো। কিন্তু সেটাও হয়নি।তিনি অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে বলেন, ১৮৯০-৯৬ মাত্র ৭ বছর শাহজাদপুরে অবস্থান করেন রবীন্দ্রনাথ। এ সময়ের মধ্যেই তিনি জনপ্রিয় কবিতা পুরস্কার, নীল পাখি, বৈষ্ণব কবিতা, ভরা ভাদরে, দিঘাই, ইছামতি, আশীষ গ্রহণ, ছোটগল্প ছুটি, সমাপ্তি, ক্ষুধিত পাষান, বিদায়, অতিথি, পোষ্ট মাস্টার ও বিসর্জন নাটক লিখেছেন।

শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি বাঙালী জাতি হিসেবে আমাদের কিছুটা হলেও দায়মুক্তি ঘটবে বলে তিনি জানান।এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলীমুন রাজীব বলেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। অচিরেই পিডি নিয়োগ হবে। পিডি নিয়োগ হলেই বাকি কাজ শুরু হবে।তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামী সেশন থেকেই ক্লাস চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে শাহজাদপুরবাসী প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।যেখানে প্রধানমন্ত্রী নিজে এসে এ কলেজের ঘোষনা দেন তাই সিরাজগঞ্জবাসীর একটাই দাবি অতি তাড়াতাড়ি এ কলেজ চালু করা।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে