শ্রী ঃ মিশুক চন্দ্র ভুঁইয়া, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ সরকারি বিধি মোতাবেক তিনজন প্রকৃত নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকের নিয়োগ বোর্ডের সকল কাগজ অধ্যক্ষ গোপনে জাল করে অন্য পাঁচজন শিক্ষকের নিয়োগ বোর্ড গঠন ছাড়াই ভুয়া রেকর্ড সৃষ্টি করে প্রভাষক নিয়োগ বৈধ করতে অধ্যক্ষের নানান ছল- চাতুরী।
কখনও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, কখনও রেজুলেশন, কখনও বা স্বাক্ষর জালের মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠীত ‘বালাতৈড় সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রি কলেজ’ এর অধ্যক্ষ মোঃ আমজাদ হোসেন।
অধ্যক্ষের নিয়োগ বানিজ্যের বলি স্বীকার বৈধ নিয়োগ প্রাপ্ত প্রভাষক এরশাদ আলীর বেতন বন্ধ রয়েছে ২০১৯ সালের জুন মাস থেকে ।
রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের পরিচালকের তদন্তে মিলেছে অধ্যক্ষের জালিয়াতির প্রমাণ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল জাতীয় দৈনিক সমকাল ও রাজশাহীর স্হানীয় দৈনিক সানশাইন পএিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন অধ্যক্ষ।
ব বিজ্ঞাপ্তি প্রকাশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ( স্মারক ০৭(র-৭০৭) জাতীঃ বি/কঃ পঃ/২০৭০৯), তারিখঃ ২৮/০৬/২০১৫ ইং এই বৈধ চিঠিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মোঃ শামসুদ্দীন ইলিয়াসের স্বাক্ষর রয়েছে।
জাতীয় বিশব্বিদ্যালয়ের এই আদেশের স্মারক, স্বাক্ষর ও তারিখ অধ্যক্ষ গোপনে জাল করে বিষয় পরিবর্তন করে ভুয়া চিঠি তৈরী করেছেন।
এর পরে ২০১৫ সালের ২৬ জুলাই ডিজি’ র প্রতিনিধি চিঠি ( স্মারক নং ৩৯ (ক)/ স বিএমসি মক/২০১৫), তারিখঃ ২৬/০৭/২০১৫ ইং বালাতৈড় সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে গার্হস্থ্য অর্থনীতি, ডিগ্রি পর্যায়ে অর্থনীতি ও মনোবিজ্ঞান এই তিনটি বিষয়ে নিয়োগের জন্য নির্বাচন কমিটিতে নওগাঁ সরকারি বিএমসি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ স.ম. আব্দুস সামাদ আজাদ ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন ডিজির ডিজির প্রতিনিধির স্বাক্ষর জাল করেছেন।
আসল চিঠির স্মারক, তারিখ ও স্বাক্ষর জাল করে অধ্যক্ষ ভুয়া চিঠি বানিয়ে সেখানে ( বাংলা, ইংরেজি, দর্শন, রাষ্ট্র বিজ্ঞান ও ভূগোল) যুক্ত করে অধ্যক্ষ আটটি বিষয় বসিয়ে নিয়োগের উল্লেখ করেছেন অর্থ লোভী অধ্যক্ষ।
২২/০৮/২০১৫ ইং তারিখের মূল রেজুলেশনের যে পৃষ্ঠায় যে লাইনে প্রকৃত তিনটি বিষয় লেখা ছিল সেই লাইন অধ্যক্ষ ব্যাপক ভাবে কাটকাটাকাটি করে ঐ পাঁচটি বিষয় লিখেছেন যা অনেক বড় অপরাধ।
পরবর্তীতে ২০১৯ সালের এমপিওর অনুমতি পাওয়ায় অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন গোপনে মূল রেজুলেশন কাটাকাটি করে তথ্য পরিবর্তন ও নিয়োগ পরিবর্তন করে এমপিও আবেদন দাখিল করেন রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসে। কিন্তু সেখানেই ঘটে যায় চরম বিপত্তি।
ধরা পড়ে অধ্যক্ষের নিয়োগ জালিয়াতি। ইতিমধ্যে পাল্টে যায় নিয়োগ প্রক্রিয়া । নিয়োগের ক্ষমতা যখন এনটিআরসি এর হাতে তখন দিশেহারা হয়ে পড়ে অধ্যক্ষ।
কেননা ইতোমধ্যে আরও পাঁচজন কাছ থেকে অধ্যক্ষ গোপনে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়ার মাধ্যমে তাদের অবৈধ পাঁচটি নিয়োগ কে বৈধ করার জন্য অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন প্রভাষক মোঃ এরশাদ আলী (অর্থনীতি) এর বৈধ নিয়োগ সংক্রান্ত সকল চিঠি পত্র এবং রেজুলেশন টেম্পারিং করে (যা উপরে উল্লেখিত রয়েছে) এরশাদ আলী (অর্থনীতি) এবং অবৈধ নিয়োগ দেখানো মোঃ কামাল হোসেন ( দর্শন) এর বেতনের আবেদন অধ্যক্ষ গোপনে প্রথম ০২/০৫/২০২০ তারিখে দাখিল করেন রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসে। সেখানেই ধরা পড়ে যায় জালিয়াতির বিষয় টি। আটকে যায় এরশাদ আলী ন্যায্য বেতন- ভাতাদি। বেতন না হওয়ার মন্তব্য কপিতে অধ্যক্ষের জালিয়াতির বিষয় টি প্রমাণ রয়েছে। রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক মহোদয় তিনি অধ্যক্ষের নিকট জালিয়াতির কৈফিয়ত তলফ করেন কিন্তু অধ্যক্ষ জবাব দেন নাই দীর্ঘদিন। এক পর্যায়ে রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক মহোদয় ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর সরেজমিনে কলেজে গিয়ে তদন্ত করে অধ্যক্ষের সকল জালিয়াতির প্রমাণ পান।
অধ্যক্ষ কর্তৃক অনিয়ম ও বিধিবহির্ভূত নিয়োগ দানের লক্ষে ভুয়া রেকর্ড সৃষ্টি করা হয়েছে বিধায় জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর ১৮.১ (গ) ও ( ঙ) ধারা অনুসারে অধ্যক্ষ ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্হা গ্রহনের জন্য মাউসির নির্দেশনা চেয়েছে রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক মহোদয়।
এখানে একটি কথা উল্লেখ করা জরুরি তা হল গার্হস্থ্য অর্থনিতির বেতন পূর্বে চালু হয়ে আজ অবধি বেতন ভাতা চালু রয়েছে। তাহলে প্রভাষক এরশাদ আলীর বেতন ভাতা চালু হচ্ছে না কেন?
বর্তমানে অধ্যক্ষ নিজের অপরাধ লুকানোর জন্য, শাস্তি থেকে বাঁচতে তথা নিজের চাকরি বাঁচাতে পুনরায় এরশাদ আলীর সাথে কলেজে নানাভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার যড়যন্ত্র করছেন। কলেজে উপস্থিত থাকার পরেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে না দেওয়া, অর্থনীতি বিষয়ে ছাত্র ছাত্রী ভর্তি হতে নিষেধ করা ও ভর্তিকৃত ছাত্র ছাত্রীর নাম ভর্তি রেজিস্ট্রার থেকে লাল কালি দিয়ে কেটে বাদ দেওয়া ইত্যাদি না যড়যন্ত্র করছেন অধ্যক্ষ এরশাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া অধ্যক্ষ এরশাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা নানা ভাবে অকথ্য ভাষা, উস্কানিমূলক কথাবার্তা, গাধা ও মাথা পাগল এমন নানান নোংরা ভাষা প্রয়োগ এবং নানান যড়যন্ত্র ও নানাভাবে হুমকি প্রদান করছেন অধ্যক্ষ। সুতরাং বর্তমানে কলেজে যাওয়া আসা নিয়ে অনেক ভয় ও শঙ্কায় আছেন এরশাদ আলী। অধ্যক্ষের নানা অনিয়ম, দূর্নীতি ও জালিয়াতির বিরুদ্ধে কলেজ প্রতিষ্ঠাতা মহোদয় ও এলাকা বাসী ক্ষীপ্ত প্রকাশ করছেন এবং অধ্যক্ষের স্হায়ী বরখাস্ত দাবি করছেন। সুতরাং সর্বশেষ শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও মাউসি অধিদপ্তর প্রতি অনুরোধ উক্ত কলেজের স্বার্থে অধ্যক্ষের এমন বড় অনিয়মের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তি বাস্তবায়ন করুণ। সেই সাথে প্রভাষক মোঃ এরশাদ আলীর বেতন – ভাতাদি স্বল্প সময়ের মধ্যে চালু করে দিয়ে তিনার মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাতে মাউসি অধিদপ্তরের প্রতি অনুরোধ করছি।