স্টাফ রিপোর্টঃ অনুশীলন সাহিত্য পরিষদের ৭৩তম সাহিত্য সভার হেমন্তের সুন্দর সন্ধ্যাটা সবার কেটেছে ভিন্নমাত্রায়। ছড়ার ছন্দে , কবিতার আনন্দে, কথামালায় ও গানের ব্যঞ্জনায় বরণীয় এই আনন্দসন্ধ্যায় যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের সবার হৃদয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবে অনেক অনেক দিন। অনুশীলন সাহিত্য পরিষদের আয়োজনে ৭৩তম সাহিত্য সভাটিতে প্রাজ্ঞ ও বিজ্ঞ কবি-লেখক ও প্রিয়ভাজনদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন বহুমাত্রিক লেখক সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ। ২১ অক্টোবর ২০১৬ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ লেখক পরিষদের সভাপতি, বাংলাদেশ ও ভারতে প্রকাশিত দুই শতাধিক বইয়ের লেখক, কবি-কথাসাহিত্যিক ও সাহিত্য সংগঠক সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম ‘দীপ্তিময় ব্যাপ্তি’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান।
ঋদ্ধ কবি-কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ড. এম. মোস্তাকুল হকের সভপতিত্বে ও কবি ও সাংবাদিক আতিক হেলালের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অনুশীলনের মহাসচিব মাহবুব খান। শুরুতেই সৈয়দ পারভেজ এর সাথে প্রায় ৪০ বছরের সম্পর্কের স্মৃতিচারণ করেন অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া কবি আসলাম সানী ও কবি-কথাসাহিত্যিক মঈনুদ্দিন কাজল। কবি আসলাম সানী বলেন- তার সাথে আমার প্রায় প্রায় ৪০ বছরের সম্পর্ক । সে সবসময় খুব টিপটপভাবে চলাফেরা করে। যা কবিদের মধ্যে কম। চেহারাটাও ছিল নায়কের মতো। তার এতদিনে বাংলা একাডেমি বা একুশে পুরস্কার পাওয়া উচিৎ ছিল। না পাওয়াটা দুঃখজনক। কবি-কথাসাহিত্যিক মঈনুদ্দিন কাজল বলেন- পারভেজ এর সাথে আমার ৪০ বছরের বন্ধুত্ব। এতদিন একটা সম্পর্ক টিকে থাকাটাও অনেক বড় বিষয়। তার সাথে রয়েছে আমার অনেক ঘটনা, অনেক স্মৃতি।যা সারা রাত বললেও শেষ হবে না।
কবি জাহাঙ্গীর ফিরোজ বলেন- এই বয়সে দুশো বই লেখা কম কথা নয়। আমি তাকে স্যালুট জানাই। ছোট ভাইয়ের সম্পর্কে আলোচনায় অংশ নেন লেখকের অগ্রজ সুপ্রিম কোর্টেরে সিনিয়র আইনজীবী সৈয়দ আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন- যে দেশে গুণীর কদর হয় না সে দেশে গুণী জন্মায় না। অনেকে কম লিখেও বড় পুরস্কার পাচ্ছে। পারভেজেরও যথাযোগ্য মূল্যায়ণ হওয়া দরকার।
স্বামীর সম্পর্কে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে লেখকের স্ত্রী অধ্যাপক শাহানা পারভীন বলেন- তিনি আমার দেখা একজন শ্রেষ্ঠ পুরুষ। সংসার, স্ত্রী-কন্যার দায়িত্ব পালনে তার কোন ত্রুটি নেই। ওনার সবার ওপরে সংসার। দুই মেয়ে আয়েশা ঋদ্ধি ও আয়শা ঋতি বাবাকে নিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলে- আমার বাবাই হচ্ছে পৃথিবীর বেস্ট বাবা।
লেখকের জীবন ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা করেন অনুষ্ঠানের আলোচক কবি ও শিশুসাহিত্যিক এম. আর. মনজু, অনুশীলন সাহিত্য পরিষদের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কবি এবিএম সোহেল রশিদ, কবি ও শিক্ষাবিদ ড. জাহিদা মেহেরুননেসা প্রমুখ। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে সৈয়দ পারভেজ বলেন- আমার জানা মতে কোন লেখকের জীবদ্দশায় এরকম কাজ এই প্রথম। আমাকে জানার জন্যই এ কাজটি করা। যাতে করে কারো মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয়। কাজটি করতে গিয়ে একমাত্র অগ্রজ সৈয়দ আমজাদ হোসেন ছাড়া আর কারো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। তারপরও কাজটি করতে পেরে আমি তৃপ্ত।
দেশবরেণ্য কবিদের কবিতা পাঠের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। কবি আনোয়ার মজিদ, ছড়াকার আমিনুল ইসলাম মামুন, কবি নুরুজ্জামান ফিরোজ, কবি তাসলিমা রুবি, কবি মাঈদুল ইসলাম মুক্তা, কবি জাহিদুল ইসলাম রুমী, কবি বজলুর রহমান, কবি শিইলী সুরভী, কবি ফাতেমা খাতুন রুনা, কবি ফাতেমা সুলতানা সুমি, কবি এম জামানসহ শতাধিক কবি স্বরচিত ও সৈয়দ পারভেজকে নিবেদিত আবৃত্তি করেন। কবিতার পাশাপাশি সুললিত গানের মূচ্ছর্নায় অনুষ্ঠানটিকে প্রাণবন্ত করে তোলেন লেখকপত্নী অধ্যাপক শাহানা পারভীন, ফাতেমা সুলতানা সুমি, মাইদুল ইসলাম মুক্তা, জাহিদুল ইসলাম রুমী। অনুষ্ঠান চলে বিকেল চারটে থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভাপতি ড. এম. মোস্তাকুল হক অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।