ডেস্ক রিপোর্টঃ যথাযথ মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশ ও উৎসবের আমেজে আগামীকাল সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ঈদের নামাজ ও পশু কোরবানীর মধ্যদিয়ে পালন করবে অন্যতম বৃহত্তম এই ধর্মীয় উৎসব।
ঈদের দিন সকাল ৮টায় রাজধানী ঢাকায় প্রধান ঈদ জামাত জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে।
হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে থেকে শুরু হয় কোরবানির এই প্রচলন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশে হজরত ইবরাহীম (আ.) তার প্রাণপ্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানী করতে উদ্যত হয়েছিলেন। ওই অনন্য ঘটনার স্মরণেই ঈদুল আজহায় পশু কোরবানির এ রেওয়াজ চালু হয়।
মহান আল্লাহপাকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন এবং তাঁরই রাস্তায় সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের এ ঐতিহাসিক ঘটনার ধারাবাহিকতায় মুসলিম বিশ্বে কোরবানী ও ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়ে আসছে।
মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান এ ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদও এ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন।
ঈদের দিন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ও আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
মুসলিমদের ধর্মীয় এ উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও দেশবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
এ উপলক্ষে শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত তিন দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
নগরীর লাখ লাখ বাসিন্দা গ্রামের বাড়িতে আপনজন ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে ইতোমধ্যে রাজধানী ছেড়ে গিয়েছেন এবং অনেকে যাচ্ছেন।
ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ে, বিআরটিসি, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি), বাংলাদেশ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য বেসরকারি পরিবহন সংস্থা বিপুলসংখ্যক যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
পবিত্র এ দিনটিতে উৎসবের আমেজ দিতে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহে জাতীয় ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা দিয়ে সুশোভিত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সকল সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা উত্তোলন করা হবে। এছাড়াও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সরকারী ভবনগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সকল কারাগার, সরকারি হাসপাতাল, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, শিশুসদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, সেফ হোম্স, দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্র এবং শিশু ও মাতৃসদনে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
ঈদের দিন সকাল ৮টায় দেশের প্রধান ঈদ জামাত জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল আজহার নামাজে ইমামতি করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান। বিকল্প ইমাম হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঢাকার মিরপুরের জামেয়া আরাবিয়া’র শায়খুল হাদীস মাওলানা সৈয়দ ওয়াহিদুয্যামান। বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে ৫টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
বায়তুল মুকাররমে প্রথম জামাত সকাল ৭টা, দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টা, তৃতীয় জামাত সকাল ৯টা, চতুর্থ জামাত সকাল ১০টা এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে।
জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের উদ্যোগে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে ঈদের দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমটি সকাল ৮টা ও পরেরটি ৯টায়। এছাড়া সকাল ৮টায় সলিমুল্লাহ মুসলিম হল মেইন গেট সংলগ্ন মাঠ ও শহীদুল্লাহ হল লনে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুল জামে মসজিদে ঈদুল আজহার জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে।
রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ৪০৯টি স্থানে ঈদ জামাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জাতীয় ঈদগাহ’র প্রধান জামাতসহ ইদুল আজহার ২২৯টি এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ১৮০টি জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য মুসুল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিশেষ ট্রেন ও বাস চলাচল করবে।
হজরত ইবরাহীম (আ.) পুত্রকে কোরবানি দেয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আল্লাহপাকের নির্দেশে তিনি জীবদ্দশায় প্রতি বছরই পশু কোরবানির মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার আনুগত্যের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেন।
আল্লাহর পক্ষ থেকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)ও এ আদর্শ অনুসরণ ও বহাল রাখতে আদিষ্ট হন। তিনিও তাঁর জীবদ্দশায় প্রতি বছরই কোরবানি করেছেন এবং তাঁর উম্মতদের জন্য এ আদর্শ ও প্রথা অনুসরণের নির্দেশ দিয়ে গেছেন।
এ আদর্শ অনুসরণের লক্ষ্যে গোটা মুসলিম জাহানের পাশাপাশি বাংলাদেশেও ঈদ উদযাপনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে পশু কোরবানী দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন।
কোরবানীর পশু কেনার জন্য গত কয়েকদিন যাবত গাবতলী পশুর হাটসহ রাজধানী ও এর আশপাশের অস্থায়ী পশু হাটগুলোতে ক্রেতাদের বেশ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ইতোমধ্যে অনেকে কোরবানির পশু ক্রয় করেছেন। যারা এখনও কেনেননি, তারা সাধ্য ও সামর্থের মধ্যে পছন্দের গরু, ছাগল বা অন্য কোন হালাল পশু ক্রয় করতে হাটে হাটে ঘুরছেন।
পবিত্র এ উৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিনোদনমূলক বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
এছাড়াও যথাযোগ্য মর্যাদা ও আনন্দ উৎসবের মধ্যদিয়ে ঈদ উদ্যাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্থানীয় পর্যায়ে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলো দেশব্যাপী ঈদ উদ্যাপনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহে সরকারি কর্মসূচির আলোকে ঈদুল আজহা উদ্যাপনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নির্ধারিত স্থানগুলোতে পশু কোরবানির জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেই সাথে উভয় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোরবানীর পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দুই সিটি কর্পোরেশনে ১৭ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

 

B/S/S/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে