ঢাকাবাসীদের যানজটের ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন লাইন-৬ এর চলাচল উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (৪ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটায় আগারগাঁও স্টেশন থেকে আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের ট্রেন চলাচল আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় সবুজ পতাকা উড়িয়ে উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
এরপরই মতিঝিল স্টেশনে এমআরটি লাইন-৫ এর নর্দান রুটের কাজের উদ্বোধনের জন্য তিনি মেট্রোরেলে চড়ে মতিঝিলের উদ্দেশে যাত্রা করেন। একই সঙ্গে এমআরটি-৫-এর ফলক উন্মোচন করবেন তিনি।
এরপরই বিকেল ৪টায় মতিঝিলের আরামবাগ মাঠে আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তবে আজ শনিবার উদ্বোধন হলেও এর বাণিজ্যিক চলাচল শুরু হবে আগামীকাল রোববার (৫ নভেম্বর) থেকে।
কত সময়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল
এখন থেকে মেট্রোর বদৌলতে দ্রুততম সময়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পৌঁছা যাবে। ঘণ্টার হিসাবটা নেমে আসবে মিনিটে, তাই নগরবাসীরা বেশ উচ্ছ্বসিত। বাসিন্দারা জানান, এতদিন যেখানে এ পথে যাতায়াত করতে দুই ঘণ্টা সময় লাগত, এখন সেটা ৩০-৪০ মিনিটে নেমে আসবে। ফলে যাতায়াতের গতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হবে স্বস্তি ও নিরাপদ যাত্রা। প্রতিদিনের জীবনে যোগ হবে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা।
ডিএমটিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল শুরুতে শুধু চার ঘণ্টা চলবে। আর স্টেশন খোলা থাকবে তিনটি। আস্তে আস্তে সময় ও স্টেশন বাড়ানো হবে।
তিনি বলেন, শুক্রবার ব্যতীত আগামী ৫ নভেম্বর রোববার থেকে প্রতিদিন মেট্রোরেল মতিঝিল থেকে উত্তরা উত্তর পর্যন্ত সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উভয় দিকে চলাচল করবে। মতিঝিল থেকে আগারগাঁও অংশে শুধু মতিঝিল, বাংলাদেশ সচিবালয় এবং ফার্মগেট মেট্রোরেল স্টেশনে ট্রেন থামবে। আর চলবে ১০ মিনিট পর পর। সকাল ১১টা ৩০ মিনিটের পর থেকে মতিঝিল থেকে আগারগাঁও অংশে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে।
উত্তরা থেকে মতিঝিল ভাড়া কত
উত্তরা নর্থ স্টেশন (দিয়াবাড়ি) থেকে আগারগাঁও স্টেশনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৬০ টাকা। মাঝে সাতটি স্টেশনের উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা সাউথ স্টেশনের ভাড়া একই, ২০ টাকা। এ ছাড়া প্রথম স্টেশন (উত্তরা নর্থ) থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৪০ টাকা এবং শেওড়াপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৫০ টাকা।
এ ছাড়া পল্লবী স্টেশন থেকে মিরপুর-১১, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ভাড়া ২০ টাকা। পল্লবী থেকে শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা। মিরপুর-১০ নম্বর থেকে ফার্মগেট ৩০ টাকা ও কারওয়ানবাজার স্টেশনে ভাড়া লাগবে ৪০ টাকা। মিরপুর–১০ স্টেশন থেকে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া ৫০ টাকা। মিরপুর-১০ থেকে সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশনে যেতে ৬০ টাকা লাগবে। আর কমলাপুর স্টেশনে যেতে বাড়তি ১০ টাকা অর্থাৎ ৭০ টাকা ভাড়া দিতে হবে।
ফার্মগেট স্টেশন থেকে উঠে কারওয়ান বাজারে নামলেও সর্বনিম্ন ২০ টাকা ভাড়া দিতে হবে। তবে একই ভাড়া দিয়ে যাওয়া যাবে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন পর্যন্ত। আর ফার্মগেট থেকে সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশনের ভাড়া ৩০ এবং কমলাপুরের ৪০ টাকা।
অন্যদিকে কমলাপুর স্টেশন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া ২০ টাকা। মাঝখানে দুটি স্টেশন মতিঝিল ও সচিবালয়ের ভাড়াও একই। আর কমলাপুর স্টেশন থেকে শাহবাগ ও কারওয়ানবাজারের ভাড়া ৩০ টাকা, ফার্মগেট ৪০ টাকা, বিজয় সরণি ও আগারগাঁও ৫০ টাকা, শেওড়াপাড়া ৬০ টাকা, কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন ৭০ টাকা, মিরপুর-১১ ও পল্লবী ৮০ টাকা এবং উত্তরা সাউথ স্টেশনের ভাড়া ৯০ টাকা।
তবে স্মার্ট কার্ডে ভাড়া পরিশোধ করলে ১০ শতাংশ রেয়াতের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে মেট্রোরেল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
অর্থাৎ মেট্রোরেলে প্রতি কিলোমিটার যেতে যাত্রীদের গুনতে হবে ৫ টাকা ভাড়া। যাত্রীপ্রতি সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা এবং উত্তরা থেকে মতিঝিল স্টেশন পর্যন্ত ভ্রমণে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা ভাড়া দিতে হবে।
এদিকে উত্তরা থেকে মতিঝিল-কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ২১.২৬ কিলোমিটারের পুরো রুটটি ৪০ মিনিটেরও কম সময়ে ভ্রমণ করে মেট্রোরেল প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ২৪ জুন এমআরটি লাইন-৬ নামে পরিচিত মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণ উদ্বোধন করেন।
প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। শুরুতে এই প্রকল্পের ব্যয় ছিল প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। মূলত মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১.৬ কিলোমিটার বাড়তি অংশ নির্মাণ, প্রতিটি স্টেশনের জন্য নতুন করে জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন নতুন অনুষঙ্গ যুক্ত হওয়ায় খরচ বেড়েছে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা।
মেট্রোরেল প্রকল্প নেয়া হয় ২০১২ সালে। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার সঙ্গে ঋণচুক্তি হয় পরের বছর। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে।