nilphamri

নীলফামারী থেকেঃ আজ ১৩ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালে আজকের দিনে নীলফামারীর আকাশে উদিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলার মানচিত্র খচিত সবুজের বুকে রক্ত লাল পতাকা। নীলফামারী হয় হানাদার মুক্ত। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনী নীলফামারীকে ঘোষণা করেন হানাদারমুক্ত।

নীলফামারীর তৎকালীন মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ের উপরে প্রথম উড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। আবাল বৃদ্ধ বনিতা উল্লাসে উচ্ছসিত হয়ে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে নেমে পড়েন রাজপথে। সবার মুখে ছিল একটি শোগান “ জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু”।

মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী টুলটুল, মতিয়ার রহমান, দেলওয়ার হোসেন বুলুবুল জানান, বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর সারা দেশের ন্যায় নীলফামারীর দামাল ছেলেরাও দেশ মাতৃকাকে হানাদারমুক্ত করতে ঝাপিয়ে পড়েন। পাক হায়েনারা যুদ্ধের নামে বাংলার স্বাধীনচেতা মানুষদের হত্যাযজ্ঞসহ নির্যাতন ও ধর্ষণে মেতে উঠে।

নীলফামারী সরকারী কলেজ, কলেজ ছাত্রাবাস ও ভকেশনাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে গড়ে তুলে সেনা ক্যাম্পের নামে শক্ত ঘাটি। বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী পুরুষকে ধরে এনে এসব ঘাটিতে করা হতো নির্মম নির্যাতন ও ধর্ষণ। টানা ৯মাসের যুদ্ধে ক্যাপ্টেন বাশার, আলী হোসেন, আহমেদুল হক প্রধান, আনজারুল হক ধীরাজ, জাহেরুল ইসলাম, মোজাম্মেল হক, মিজানুর রহমান, মির্জা হাবিবুর রহমান বেগসহ ১৭জন বীর যোদ্ধা শহীদ হন। দেশ মাতৃকাকে হানাদারমুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধাদের চোরাগোপ্তা হামলা ও সম্মুখ যুদ্ধে অনেক পাক সেনা নিহত হয়েছে। ১৩মার্চ পাক হায়েনাদের শক্ত ঘাঁটি নীলফামারী সরকারী কলেজ সার্চ করে ৩জন নির্যাতিত নারীকে বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন জানান, টানা ৯মাসের যুদ্ধে পাক হায়েনাদের দোসর এ দেশীয় রাজাকার, আল-বদর ও আল সামস বাহিনীর তৎপরতায় স্বাধীনতাকামী মানুষজন ছিল অতিষ্ট। তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে নিরপরাধ লোকজনকে ধরে এনে সেনা ক্যাম্পে দিনের পর দিন আটকে রেখে করতো নির্মম নির্যাতন। শত শত যুবতীকে ধরে এনে করা হতো ধর্ষণ। এক পর্যায়ে বেনয়েট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে হত্যা করা হতো। এমনকি হাত পিটমোড়া করে চোখ বেঁধে অনেককেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ৭/৮টি করে লাশ এক একটি গর্তে পুতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও নীলফামারী কলেজ ষ্টেশনের পুর্ব পার্শ্বে বিভিন্ন ডোবায় ফেলা দেয়া হয়েছিল অনেক নারী পুরুষের লাশ। অনেক লাশকে খেয়েছে কুকুর শেয়ালে। পাক হায়েনা ও তার দোসরদের হাজারো স্মৃতি আজও দগদগে হয়ে রয়েছে মানুষের মানসপটে।

নীলফামারী হানাদার মুক্ত দিবস উদযাপন উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ র‌্যালি, আলোচনা সভার আয়োজন ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসুচী গ্রহণ করেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে