বিডি নীয়ালা নিউজ(২৯জানুয়ারি১৬)- অনলাইন প্রতিবেদনঃ আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিতর্কিতদের মনোনয়ন দেবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন বোর্ড কোনো হত্যা মামলাসহ স্থানীয়ভাবে স্বীকৃত বিতর্কিতদের তালিকা পাঠালেও তা কেন্দ্র অনুমোদন দেবে না হাইকমান্ড। দক্ষ, যোগ্য, ত্যাগী, মেধাবী, স্বচ্ছ ও দলের জন্য নিবেদিত কর্মীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। মনোনয়ন বোর্ডের পাশাপাশি কেন্দ্রীয়ভাবে সম্ভাব্য প্রার্থীর খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
তথ্য মতে, আগামী মার্চের শেষ দিকে শুরু হয়ে কয়েক ধাপে স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পৌরসভার পর প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল চাঙা হয়ে উঠেছে। পৌরসভার মতো ইউপিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ‘নৌকা-ধানের শীষ’ প্রতীকের লড়াই হবে। তৃণমূলে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো নানা হিসাব কষছেন। বিশেষ করে
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিতে চায় ইউপিতে। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে দলটি। স্থানীয়ভাবে দক্ষ, যোগ্য,
পরীক্ষিত, ত্যাগী, স্বচ্ছ প্রার্থীকে মনোনয়ন অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। মনোনয়ন বোর্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্টের মাধ্যমে
ইউপিতে স্বচ্ছ প্রার্থী নিশ্চিত করবে দলটি। এদিকে, ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরগরম হয়ে উঠছে তৃণমূল। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী
লীগের সম্ভাব্য একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী অনেক আগেভাগেই মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তাঁরা অনেকেই স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী এবং আওয়ামী লীগের
প্রবীণ নেতা। এসব প্রার্থী অনেক আগ থেকেই আনুষ্ঠানিক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে ইউপি নির্বাচন বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের জন্য বড়
চ্যালেঞ্জ। একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী থেকে একজনকে মনোনয়ন দেওয়া দুষ্কর হয়ে পড়বে দেশের প্রাচীন এ দলটির জন্য। আর মনোনয়নে স্বজনপ্রীতি,
অর্থবাণিজ্য হলে তৃণমূলে দলীয় কোন্দল চরম আকার ধারণ করবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, ক্ষমতাসীন দলটির মনোনয়ন
প্রত্যাশীরা ইতোমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। দেশের বিভিন্ন জেলার সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে হত্যা ও অস্ত্র মামলাসহ বিভিন্ন অপরাধের
অভিযোগের একাধিক মামলার আসামি এমন ব্যক্তিদের নাম শোনা যাচ্ছে। এছাড়া বিগত সময়ে তাদের কর্মকাণ্ডে দলকে বিতর্কিত এবং বিভিন্ন দল থেকে আসা নব্য আওয়ামী লীগে রয়েছেন। এসব সম্ভাব্য প্রার্থী পেশিশক্তি ও অর্থের বিনিময়ে মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালাচ্ছেন বলে জানা
গেছে। আর এদের মদত দিচ্ছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের এক শ্রেণির নেতা। এ বিষয়টি আঁচ করতে পেরে কেন্দ্র থেকে ইউপির মনোনয়ন তালিকায় বির্তকিতদের নাম বাদ
দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে ভোরের পাতাকে বলেন, কেন্দ্রের
নির্দেশনা অনুযায়ী প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করা হবে। দলের নির্দেশনা মোতাবেক ত্যাগী, মেধাবী, স্বচ্ছ প্রার্থীদের তালিকা পাঠানো হবে। এখনও কাণ্ডারি এমপিরা :ইউপির মনোনয়নে অনিয়ম, দুর্নীতি এড়াতে স্থানীয় এমপিদের মনোনয়ন বোর্ডে রাখা হয়নি। কিন্তু এরপরেও মনোনয়ন
কাণ্ডারি স্থানীয় এমপিরাই। এমপিদের মেজাজকে সামনে রেখেই মন জয় করতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন দৌড়ঝাঁপ করছেন। দিন-রাত ছুটছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যের বাসা-অফিসে। ফলে স্থানীয় সংসদ সদেস্যর বাসা-অফিসে এখন অনেকটা নির্বাচনী অফিসে রূপ নিয়েছে। স্থানীয়
সংসদ সদস্যের মর্জিতেই নির্ভর করছে ওই ইউপি নির্বাচনের টিকিট। অনেক ইউপিতে ইতোমধ্যে মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ও একাধিক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও অর্থ
বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন না দেওয়া হলেও অনেক ইউপিতে এমপি দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন বলে প্রার্থীরা প্রচার
চালাচ্ছেন। এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন অন্য প্রার্থীরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরের এক সম্ভাব্য প্রার্থী জানান, মনোনয়ন বোর্ডের এমপি সরাসরি না থাকলেও তিনিই সব। তিনি না চাইলে কেউ
মনোনয়ন দিতে পারবে না। তাই এমপির মন রক্ষা করে চলি।
তিনি বলেন, মনোনয়ন বোর্ড সদস্যদের এমপির নির্দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ তারা এমপির আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে পদে আছেন। এমপি না চাইলে তারা পদে থাকবে না। তাই এমপি যাকে
চাইবে, বোর্ড তার নামই পাঠাবে। সবকিছুই তার মর্জিতেই।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি বলেন, দলের মূল ভিত্তি তৃণমূল। ইউপিতে দলের জন্য নিবেদিত, যোগ্য ও প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে। কোথাও অনিয়ম
হলে যে দায়ী থাকবে, যত প্রভাবশালী হোক দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ভোরের পাতাকে বলেন, আওয়ামীলীগ কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, জঙ্গিবাদ
বিশ্বাস করে না। ইউনিয়ন পরিষদে মনোনয়ন জনমতের ভিত্তিতে অত্যন্ত স্বচ্ছতার ভিত্তিতে দেওয়া হবে। মনোনয়ন বোর্ডের তালিকা যাচাই-
বাছাই করে দল ও জনগণের জন্য নিবেদিতদের চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হবে।