আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর স্বীকৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান জানান দিতে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বুধবার ওআইসির বিশেষ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন মুসলিম বিশ্বের নেতারা। ৫৭টি দেশের জোটের সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ‘কঠোর বার্তা’ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজক দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগ্লু। মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তম জোটের এ শীর্ষ সম্মেলনে সংস্থার বেশির সদস্য দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা অংশ নেবেন।
বুধবার শীর্ষ সম্মেলনে ঘোষণা করা হবে ‘ইস্তাম্বুল ঘোষণা’।
গত বুধবার জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন ট্রাম্প। এর প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে মুসলিম বিশ্ব। দেশে দেশে অসংখ্য বিক্ষোভ আয়োজন করা হয়েছে। তারা ইসরাইলি ও মার্কিন পতাকায় আগুন দিচ্ছেন। পোড়াচ্ছেন ট্রাম্পের কুশপুত্তলিকা। বিক্ষোভকারীদের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় মারা গেছে অন্তত চার ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন কয়েশ’ মানুষ। মুসলিম বিশ্বের নেতারাও ট্রাম্পের ঘোষণার কড়া সমালোচনা করেছেন।
সারা বিশ্বের মুসলিমদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন হিসেবে ওআইসির এ শীর্ষ সম্মেলনে মুসলিমদের ক্ষোভই ফুটে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে বিশ্বের ১৫০ কোটি মুসলমানের নেতৃত্ব দানকারী ওআইসি মুসলিমদের সংকটে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে বারবারই ব্যর্থ হয়েছে। এবার মুসলিমদের আবেগের সঙ্গে জড়িত জেরুজালেম ইস্যুতে ওআইসি কতটা কঠোর ভূমিকা নিতে পারে সেটা দেখার জন্য বহু মানুষই আগ্রহী। জেরুজালেম সংকটকে ঘিরেই ১৯৬৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মরক্কোতে গঠিত হয়েছিল ওআইসি। ওই বছরের আগস্টে মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্রততম আল আকসা মসজিদে আগুন দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা।
বর্তমানে ওআইসির সদর দফতর সৌদি আরবের জেদ্দায়। যুক্তরাষ্ট্রের সাত দশকের ঐতিহ্য ভেঙে ট্রাম্পের বিতর্কিত জেরুজালেম ঘোষণার পরদিনই ওআইসির বিশেষ শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করেন সংস্থার বর্তমান চেয়ারম্যান এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান। ফিলিস্তিন এবং মুসলিম সংকটে সোচ্চার এরদোগান বিভিন্ন সময় সংস্থাটির নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করেছেন। জেরুজালেম ঘোষণার পর তিনি বলেছেন, এ ইস্যুতে তারা কতটা আন্তরিক তারই প্রতিফলন ঘটবে এ বিশেষ সম্মেলনে। তবে সম্মেলনে সব মুসলিম দেশই সরকার প্রধান পাঠাবে বলে মনে হচ্ছে না।
কারণ ইসরাইলের সঙ্গে কয়েকটি মুসলিম দেশের প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আবার মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশের সঙ্গে আংকারার সম্পর্কও উষ্ণ নয়। তবে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগ্লু মঙ্গলবার দেশটির একটি প্রাইভেট টিভি চ্যানেলকে বলেন, ইস্তাম্বুলে ওআইসির শীর্ষ সম্মেলনে ট্রাম্পের জেরুজালেম ঘোষণার ওপর ফোকাস করা হবে। সংস্থাটি জেরুজালেম ঘোষণার বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দেবে।
তিনি বলেন, ‘ আমরা ইস্তাম্বুল ঘোষণা নিয়ে কাজ করছি। যৌথ ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করা হবে। আমরা আশা করি যুক্তরাষ্ট্র ভুল থেকে ফিরে আসবে। তাদের সিদ্ধান্তকে বাতিল ঘোষণা করা হবে।’ তিনি বলেন, তুরস্কে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে যার রাজধানী পূর্ব জেরুজালেম।
বুধবার সকালে বৈঠক বসেন ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। এরপর বসবে শীর্ষ সম্মেলন। বৈঠকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শহিদ খাকান আব্বাসি, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো, ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি, কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল আহমদ আল জাবের আল সাবাহ, কাতারের আমির শেখ হামাদ আল থানি প্রমুখ অংশগ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।
J/N.