ডেস্ক স্পোর্টসঃ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের উপনির্বাচনে যে পাঁচজন প্রার্থী হয়েছেন, তাদের তিনজনই কোটিপতি।
তারা হলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) প্রার্থী ববি হাজ্জাজ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুর রহিম। তারা তিনজনই ব্যবসায়ী।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তাদের দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
এই তিনজন কোটিপতি হলেও নিজের নামে কোনো গাড়ি নেই বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকের। আর বাড়ি নেই ধনকুবের হিসেবে পরিচিত মুসা বিন শমসেরের ছেলে ববির।
আনিসুল হকের মৃত্যুতে শূন্য ঢাকা উত্তরে নতুন মেয়র নির্বাচনের জন্য ২৮ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ হবে। প্রার্থী হতে ছয়জন মনোনয়নপত্র জমা দিলেও বাছাইয়ে বাদ পড়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ব্যান্ডশিল্পী শাফিন আহমেদ।
তিন কোটিপতির সঙ্গে প্রার্থী হিসেবে টিকে আছেন পিডিপির শাহীন খান এবং এনপিপির আনিসুর রহমান দেওয়ান।
হলফনামায় আতিকুল
আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৫৮ বছর বয়সী আতিক ১৬টি প্রতিষ্ঠানের মালিক। শিক্ষাগত যোগ্যতায় তিনি বি কম (পাস)।
হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তার বার্ষিক আয় কোটি টাকার বেশি। বাড়ি থাকলেও নিজের নামে কোনো গাড়ি নেই।
তার আয় আসে কৃষিখাত থেকে ৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা; বাড়ি/এ্যাপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে ৩৬ লাখ ৫০ হাজার ৪০৪ টাকা; ব্যবসা (পরিতোষিক) থেকে ৫১ লাখ ৪০ হাজার টাকা; অন্যান্য খাত থেকে ১৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫৭১ টাকা।
এছাড়া তার স্ত্রী শায়লা শগুফতা ইসলামের চিকিৎসা পেশা থেকে ১৯ লাখ ৫০ হাজার এবং অন্যান্য খাত থেকে আয় আসে ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৩৯২ টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আতিকের নিজের নামে নগদ রয়েছে ৮৭ হাজার ৬৩ টাকা; বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকে জমা আছে ১৫৭৬.১৩ ইউএস ডলার; ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ১ কোটি ১০ লাখ ৪৮ হাজার ৪৫৯ টাকা।
এছাড়া বন্ড, স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির ৩ কোটি ৭৫ লাখ ২৪ হাজার টাকার শেয়ার রয়েছে আতিকের। তার ২ লাখ টাকার সোনা, ৫ লাখ টাকার ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী এবং ৫ লাখ টাকার আসবাবপত্র রয়েছে।
আতিকের স্ত্রীর নামে রয়েছে নগদ ২ কোটি ৫৯ লাখ ২৯ হাজার ৭৬৪ টাকা (ব্যবসার পুঁজি ২ কোটি), ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ১১ লাখ ৪৯ হাজার ৯০৫ টাকা, স্বর্ণ ৩০ ভরি, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ৩ লাখ ও আসবাবপত্র ২ লাখ টাকার।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে আতিকের নিজের নামে ৪ কোটি ১৩ লাখ ৯০ হাজার ২৯১ টাকার (পরিমাণ ১০৭৪.০৩৫ শতাংশ কৃষি জমি) এবং স্ত্রীর নামে ৩২ লাখ ১ হাজার ৭৫৩ টাকার কৃষি জমি রয়েছে।
তার নামে অকৃষি জমি রয়েছে ২৬ লাখ ৩৫ হাজার ৭৩৩ টাকার; বাড়ি ও এ্যাপার্টমেন্ট ২ কোটি ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার; মৎস্য খামার ১ লাখ ২০ হাজার টাকার এবং স্ত্রীর নামে ৫০ লাখ টাকার (বায়নাকৃত) বাড়ি এবং এ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে।
সেই সঙ্গে ১ কোটি ১০ লাখ ৭৫ হাজার টাকার গৃহঋণ থাকার কথাও উল্লেখ করেছেন আতিক।
হলফনামায় ববি হাজ্জাজ
৪১ বছর বয়সী ববি ব্যবসার সঙ্গে শিক্ষকতাও করেন। এমবিএ করার পর তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক।
গাড়ি থাকলেও বাড়ি নেই বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন এই প্রার্থী।
ববি বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন শিক্ষকতা থেকে ৩ লাখ ২৭ হাজার টাকা, অন্যান্য খাত ১২ হাজার ৪১২ টাকা। এছাড়া ৫০০টি শেয়ার রয়েছে। আর স্ত্রীর আয় ৩ লাখ টাকা।
ববির অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে নগদ টাকা ৫৪ লাখ ১০ হাজার ৮৬ টাকা; ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ১৩ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪০ টাকা; ৫০০ শেয়ার, ১টি মটর গাড়ী; ১০ হাজার টাকার স্বর্ণ; ৫০ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছেন।
এছাড়া তার স্ত্রীর নামে নগদ টাকা রয়েছে ৪৫ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ৪০ লাখ টাকার ১০০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে ববির স্ত্রীর নামে। তবে তার কোনো স্থাবর সম্পদ নেই।
হলফনামায় রহিম
৬৪ বছর বয়সী আবদুর রহিম নর্থ সাউথ প্রপার্টিজ ডেভলেপমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাস।
রহিমের ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৮২ হাজার ৪৯৭ টাকা, তার উপর নির্ভরশীলদের আয় ২ লাখ ৮৮ হাজার ৫৪২ টাকা।
তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ রয়েছে ৩ লাখ ৩ হাজার ৩০০ টাকা; ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৬৫ লাখ ২০ হাজার ৫৪০ টাকা; বন্ড, স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির ৩ কোটি ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার রয়েছে তার।
রহিমের নিজের নামে ২০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। তার স্ত্রীর সোনার পরিমাণ ১০ ভরি।
তার স্ত্রীর নামে নগদ ৩ লাখ ৮ হাজার ৯৮ টাকা; ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৮৮ লাখ ৮০হাজার ২০৫ টাকা; ২ কোটি ২১ লাখ টাকার বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে রহিমের কৃষি জমি রয়েছে ৮৮ শতাংশ; স্ত্রীর নামে কৃষি জমি রয়েছে ৫২ শতাংশ।
রহিমের নিজের নামে দালান রয়েছে ৫০ লাখ ৪৩ হাজার ৫২০ টাকার। তবে স্ত্রীর রয়েছে ব্যাংক ঋণ।
ব্যবসায়ী রহিমের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে আটটি।
অন্যরা
তিন কোটিপতির সঙ্গে লড়াইয়ে নামা পিডিপির মেয়র প্রার্থী শাহীন খান স্বশিক্ষিত। তার পেশা ব্যবসা।
শাহীন হলফনামায় কোনো বার্ষিক আয় দেখাননি। তার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে নগদ টাকা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ৩ লাখ টাকা। একটি গাড়ি ও ৩ ভরি স্বর্ণ রয়েছে তার।
এনপিপির মেয়র প্রার্থী আনিসের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএসসি পাস। তার পেশা রাজনীতি ও সমাজসেবা।
আনিসের ব্যবসা থেকে আয় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। নিজের নামে নগদ রয়েছে ৩০ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে ১০ হাজার টাকা। এছাড়া স্ত্রীর নামে ২০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। এছাড়া স্থাবর সম্পদের মধ্যে স্ত্রীর নামে ১টি ফ্ল্যাট রয়েছে।
মনোনয়ন বাতিল হওয়া মাইলস তারকা শাফিন তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন সাড়ে ৮ লাখ টাকা। তার স্থাবর সম্পদ ও ঋণ নেই।
শাফিনের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ১০ হাজার টাকা; ব্যাংকে ৩ লাখ টাকা; স্ত্রীর ২৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, তার রয়েছে নগদ ৫ হাজার টাকা ও ব্যাংকে ৫০ হাজার টাকা।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র বাতিল করলেও তার বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন শাফিন।
ঢাকা উত্তরের এই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। তাদের গতবারের প্রার্থী তাবিথ আউয়ালও ছিলেন ব্যবসায়ী। তিনি হেরেছিলেন আরেক ব্যবসায়ী আনিসুল হকের কাছে।
P/B/A/N.