ডেস্ক রিপোর্টঃ শেরপুরে সবুজ মাঠে বেগুনি ধানগাছের ঝলকানি কৃষকের মধ্যে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। শেরপুরে নকলা উপজেলার বারইকান্দি ও নালিতাবাড়ী উপজেলার ভেদিকুড়া গ্রামে দুই কৃষকের দুটি প্লটে বেগুনি রঙের ধানক্ষেত কৃষক ও পথচারীদের মধ্যে কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। চারদিকে বিস্তৃত সবুজ ধানক্ষেতের মধ্যে বেগুনি রঙের এই ধানগাছ দেখে কেউ কেউ থমকে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করছেন, ধানের এমন হাল কেন? সবুজ ধানের বেষ্টনীর মধ্যে বেগুনি এ ধানক্ষেতটি প্রথম দেখায় যে কারো কাছে মনে হতে পারে, কোন কারণে ক্ষেত নষ্ট হয়েছে, অথবা আগাছা কিংবা বালাই আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু উত্তর আসে ধানক্ষেত নষ্ট হয়নি, বালাই আক্রান্তও হয়নি। আসলে ধানগাছের রংই বেগুনি।
কৃষি কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য মতে, নতুন চাষ শুরু হওয়া এ ধানের নাম ‘পার্পল লিফ রাইস’। দেশে সর্বপ্রথম এ জাতের ধানের আবাদ শুরু হয় গাইবান্ধায়। সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এ ধান। ধানের গায়ের রং সোনালি ও চালের রং বেগুনি। উফশী জাতের এ ধানে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ অনেকটাই কম হয়। রোপণ থেকে ধান পাকতে সময় লাগে ১৪৫ থেকে ১৫৫ দিন। ফলনও ভালো। একরপ্রতি ফলন ৫৫ থেকে ৬০ মণ। অন্য সব ধানের তুলনায় এ ধান মোটা, তবে পুষ্টিগুণ অনেক। এ চালের ভাত খেতেও সুস্বাদু। গাইবান্ধার পর কুমিল্লা ও বগুড়াতেও এ জাতের ধান চাষ দেখা গেছে। এবার শেরপুরে নকলা ও নালিতাবাড়ীর দুটি গ্রামে বেগুনি রঙের এ ধানের চাষ পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে।
নালিতাবাড়ীর সন্তান সরোয়ার আলম। একটি বেসরকারি ব্যাংকে কুমিল্লায় চাকরি করেন। সেখান হতে মঞ্জুরুল নামের স্থানীয় এক কৃষকের কাছ থেকে তিনি বেগুনি ধান সংগ্রহ করেন। পরে নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে কাকরকান্দি সড়কসংলগ্ন ভেদিকুড়া গ্রামের কৃষক শহীদুল আলমের পাঁচ শতক জমিতে এই বেগুনি ধান চাষ করা হয়। কৃষক শহিদুল আলম বলেন, নতুন এই ধান দেখতে প্রতিদিন মানুষ ভিড় করছে। অনেক কৃষক এই ধান চাষ করতে বীজ চেয়েছে।
নকলার গণপদ্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শৌখিন কৃষক শামছুর রহমান আবুল জানান, গত বছর পত্রিকায় বেগুনি রঙের ধানের আবাদে সফলতার খবর দেখে ওই ধান চাষ করার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয় তাঁর। পরে নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাসের মাধ্যমে কুমিল্লা থেকে পাঁচ কেজি বেগুনি রঙের ধানবীজ সংগ্রহ করে এক বিঘা জমিতে আবাদ করেন। বারইকান্দি গ্রামের সড়কের ধারে তাঁর ওই বেগুনি ধানক্ষেতটির পাশে প্রতিদিনই লেগে থাকে পথচারীদের ভিড়। ইউপি চেয়ারম্যান ও শৌখিন কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ‘পরীক্ষামূলক এ ধান চাষে আমাকে নকলা উপজেলা কৃষি বিভাগ সার্বিক পরামর্শ প্রদান করছে। ধানক্ষেতটি হয়েছে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। গাছের আকার-আকৃতি বেশ ভালো দেখা যাচ্ছে। আশা করছি, অন্যান্য ধানের তুলনায় ফলন ভালো হবে।’
নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, বেগুনি রঙের ধান চাষি আবুল হোসেনকে সব ধরনের পরামর্শসহ নিয়মিত ধানক্ষেতটি তদারকি করা হচ্ছে। ফলন ভালো হলে এর বিস্তার ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্য কৃষকরাও বেগুনি রঙের এ ধান সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শরীফ ইকবাল বলেন, এলাকায় এই বেগুনি জাতের ধান নতুন, তাই কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। চলতি বোরো মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হয়েছে। ফসল কাটার পর এর পুষ্টিগুণ যাচাই করে আগামীতে কৃষকদের মধ্যে এর বিস্তার ঘটানো হবে।
শেরপুর খামারবাড়ির উপপরিচালক কৃষিবিদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘বেগুনি রঙের এই ধান বিদেশি নয়। এটা আমাদের দেশি জাতের ধান। আগে অন্যান্য জেলায় চাষ হয়েছে, এবার শেরপুরে আবাদ হচ্ছে। ফলন ভালো হলে উৎপাদিত ধানগুলো বীজ আকারে রাখা হবে। ধানক্ষেতগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এখন এর ফলন কী রকম হবে, তা জানতে ধান কাটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
K/K/N.