……………………মাহফুজার রহমান মণ্ডল
কুকুর কাঁদে, শৃগাল কাঁদে, কাঁদছে বুড়ি ব্যাঙ। বর্ষার শেষে দেখা গেলো রামের ধনুর বান। মাছেরা কাঁদে, গাছেরা কাঁদে, বিড়ালের মায়ের কান্না। এবার নাকি আসবে বিরাট এক বন্যা।
কবি তন্ময় বেরা রচিত “বন্যার কান্না” কবিতায় আবার নতুনত্বর কি? প্রতিবারে কিছু না কিছু এলাকা প্লাবিত হয়, এটা কারো আজানা নয়। হয়ত বিরাট এলাকা জুড়ে প্লাবিত হচ্ছে, বেশ কিছুদিন ধরে পানি নামছে না কিন্তু কি করবেন প্রকৃতির লীলাখেলা মানতেই হবে।
‘৯৪ সালের পর এমন বন্যা আর দেখি নি’ এমনেই মন্তব্য করেছেন কুড়িগ্রাম জেলার একজন বাসিন্দা আব্দুল সবুর। কুড়িগ্রাম জেলায় শহররক্ষা বাঁধ যখন ভেঙ্গে পড়ে নয়টি উপজেলা প্লাবিত হয়েচ্ছিল ঠিক সেই সময় দুঃখ ভরাক্রান্ত হৃদয়ে বলেছিলেন -“চুরানব্বই সালের পর এমন বন্যা আর দেখি নি, সব পানিতে ভাইসা গেছে”।
“প্রকৃতির লীলাখেলা কে বুঝিতে পারে, যেই না বুঝিতে পারে, তাঁর কথা কে শুনে?”
আর এই বন্যার আজাহারি শেষ হতে না হতে নেকড়ে বাঘের মতো লাফ দিতে দিতে অপ্রকৃতির লীলায় ধেয়ে আসল নতুন আবেগে নতুন বন্যা, চোখের দেখা এই আচ্ছে এই আচ্ছে মনে হয় ডুবে গেল সোনার তরী।
মূল্যবান সম্পদগুলো যখন চোখের সামনে দিয়ে বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে তখন সামনে যাকে পাই তাকে বলার ইচ্ছে জাগে আর কতদিন চলবে এই অপ্রকৃতির লীলা –
তেমনি দৌলতদিয়া উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদ জানান, গত কয়েক দিন ধরে অব্যাহতভাবে পদ্মা নদীর পানি বাড়ায় চিলমারির ১৮ গ্রামের ৪০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে এসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ। এছাড়া রামকৃঞ্চপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ১৭ গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। সেখানকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে বলেও তিনি জানান।( বিডি-প্রতিদিন/২৭ আগস্ট)
মানুষ আইনের কাছে এত অসহায় যে একজন মানুষের মৃত্যুতো দুরের কথা জীবননাশের হুমকি দিলে তাকে আইনের সম্মুখীন হতে হয় সে জায়গায় ১২ জনের মৃত্যু ! এমনটি জানিয়েছে এনটিভির সংবাদদাতা-
“যশোরের কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলায় অবিরাম বৃষ্টি, উজান থেকে আসা পানি ও হরিহর নদীর উপচে পড়া পানিতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দুটি উপজেলার ২৪টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার ৫৬ হাজার পরিবারের দুই লাখ ২৫ হাজার ৫১১ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে সাপের ছোবলে ও পানিতে ডুবে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।“(২৭ আগস্ট ২০১৬)ntvbd.com
দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কণ্ঠও থেমে নেই যা বাংলা ট্রিবিনের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি নিকট থেকে প্রাপ্ত –
তিনি জানান, বন্যায় দুই ইউনিয়নের ৪ হাজার কৃষকের প্রায় ১৮’শ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। (বাংলা ট্রিবিন ২৮/০৮/১৬)
সেই সাথে দৌলতপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন জানান, চিলমারী ইউনিয়নের ১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। পানি কমে গেলে পুনরায় পাঠদান দেয়া হবে।(২৭/০৮/১৬, যুগান্তর)
এই মিডিয়া গুলো যখন একটির পর একটি সংবাদ পরিবেশন করছিলেন টিক সেই সময় বন্যায় ভেসে যাওয়া মানুষগুলোর পাশে সারিবদ্ধ হয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, অভিন্ন নদীর উপর একতরফা পানি প্রত্যাহার ও গেট খুলে দেয়া সঠিক কাজ না। একতরফাভাবে ফারাক্কা বাঁধের গেট খুলে দেয়ায় যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নির্ধারণ করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে জানানো দরকার। (২৮শে আগস্ট, ২০১৬ ইং, সময়ের কণ্ঠস্বর)
এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এর উল্টোটা মনে করেন। তিনি মনে করেন, ফারাক্কার কারণে বাংলাদেশে কোনো প্রভাব পড়ে নি এবং পড়বেও না।(২৮/০৮/১৬, bangla.24livenewspaper.com)
কিন্তু নদী ভাঙনের তিব্রতা এতই যে স্বচক্ষে দেখতে আসা সিরাজ খান বলেন, গত দুই দিন ধরে ফারাক্কার পানির প্রভাব এখানে পড়েছে। নদীতে তীব্র স্রোত দেখা দিয়েছে। যে কারণে ভাঙন শরু হয়েছে। ভাঙন থেকে বসতবাড়ি, স্কুল, মসজিদ, কবরস্থানসহ কোন কিছুই বাদ যাচ্ছে না। rabarinews24.com(২৯/০৮/১৬)।
মঙ্গলবার (৩০/০৮/১৬)-এর সময়ের কণ্ঠস্বরে প্রকাশিত –
ভারতের ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেয়ায় এখনো প্রবল বেগে ধেয়ে আসছে পানি। এর ফলে লক্ষাধিক হেক্টর ফসলি জমি ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক পরিবার। স্রোতের তীব্রতা বাড়ায় পদ্মা ও তিস্তায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিস্তায় বিলীন হয়েছে চার শতাধিক ঘরবাড়ি। এদিকে ঝুঁকির মুখে পড়েছে বিভিন্ন স্থানের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। ঘর-বাড়ি হারিয়ে উঁচু সড়ক ও বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন বানভাসিরা। অন্যদিকে প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণ বিতরণ নেই বললেই চলে। একই সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি ও গবাদিপশুর খাদ্যেরও সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
কিন্তু জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শিক্ষা কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সকলের মুখে বার বার শোনা যাচ্ছিল বানভাসিদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রস্তুত আছে, প্রয়োজনে আরও ত্রাণ সরবরাহ করা হবে। এতে আমারাও আশাবাদী বানভাসিরা যেন তাদের ন্যায্য মূল্য পায়।
এভাবে আর কত দিন বুকে চাপা দিয়ে রাখব মনের কথাগুলো, প্রকাশ করা কি অন্যায় না আমাদের প্রকাশ করার সাহস নেই, যেখানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সারা দিয়েছেন, ন্যায্য পাওনা টুকু আদায় করতে তাঁর বুক কেপে উঠে নাই, সেখানে সাধারণ জনগণের অধিকার আদায়ে বিলম্ব কেন? আমরা বাংলার দামাল ছেলে, বুকের তাজা রক্ত দিয়ে সবুজের ভিতরে লাল বৃত্তাকার পতাকাটি ছিনিয়ে এনেছি, এটা তাদের মনে রাখতে আর সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
পলক রহমান রচিত “বন্যা” নামক কবিতার শেষে অংশ থেকে নেওয়া –
এমন করলে যায় কি থাকা-
দূরে কিংবা কোথাও,
প্রেমের জন্য বন্যাও ভালো
নিজের কাছে শুধাও।
এবার আমরা নিজেকে প্রশ্ন করতে পারি, নিজের ভালটা নিজেই ভালো বুঝি, আমাদের কি করা উচিৎ বা কাকে বলা উচিৎ এরকম নানান প্রশ্ন । আবার জাতির কাছে যেন মাথাটা হেট হয়ে না যায় সে দিকে লক্ষ্য রেখে সামনের দিকে পথ চলা এ যেন আমাদের একান্ত কাম্য হয়। তাই নিজের কাছে আবার শুধাই ।
লেখক– কলামিষ্ট, সম্পাদক ও কবি