……………………মাহফুজার রহমান মণ্ডল
বিগত মাসগুলোতে জড়োতার চিত্র দেখে মনে হয় ধরণী দেখার স্বাদ রয়েই গেলে। মাঝে মাঝে মনে হয় এই গ্রহ ছেড়ে অন্য গ্রহ তথা মঙ্গল গ্রহে যাবো। তাই মনস্থ করলাম নাসার কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করি; কিন্তু সময় অতিবাহিত হতে থাকে কাজ করতে সাহস পাই না।
যেখানে দেশের মায়া ছেড়ে অন্য দেশে যেতে মন চায় না সেখানে গ্রহ থেকে গ্রহান্তর। এ যেন আকাশ চুম্বী চিন্তা; যেখানে শক্তিধর দেশের নেতা-নেত্রী বা সিরিয়ালে থাকা ধনীবর্গ অন্য গ্রহে যাওয়ার চিন্তা করে না সেখানে আমি! তাও আবার মায়া ভরা সংসার ছেড়ে! না না না তা হয় না, চিন্তায় চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায় ।
ক্লান্ত মনে অবশেষে সবার মত সবকিছু রেখে ঢাকা ছেড়ে ছুটলাম পরিবারকে নিয়ে গ্রামের পানে। তবে দায়িত্ব-কর্তব্য থেকে এক পায়ও পিছু ছাড়লাম না। পিছু ছাড়েনি প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীবর্গ, সংসদ সদস্য সাথে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সরকারি, আধাসরকারী, বেসরকারি সংঘঠন, ডাক্তার, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী ব্যক্তিবর্গ।
এদিকে লাশের উপর লাশের স্তূপ বিশ্ব জুড়ে। শত চেষ্টাও রক্ষা হচ্ছে না বিশ্বের কিছু শক্তিধর রাষ্ট্রের। শুরু হলো মাস্ক পড়া ও সামাজিক দুরুত্ব বজায় রাখা। এরপর শুরু হলো শরীরে এন্টিবডি তৈরি; হতে পারে বাড়িতে তৈরি বা ফার্মেসি থেকে কেনা। প্রশাসন দিয়ে কড়া নজরদাড়িতে রাখা হলো সমস্ত ধরণীকে।
কিছু কিছু দেশ সিদ্ধান্ত নিলো সংক্রামিত ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা যা পত্র পত্রিকাতে পাবলিশ হয়েছে যে উত্তর কোরিয়ায় করোনা সংক্রমণ রুখতে গুলি করে মারছে। সারা পৃথিবীর মানব এখন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের চোখে ঘুম হারাম। প্রায় দেশের বিজ্ঞানীগণ হাজারও চেষ্টা চালাচ্ছে কি করে টিকা আবিষ্কার করা যায়।বিভিন্ন টিকা আবিষ্কার করলো কিন্তু প্রমান করবে কি করে কাজ করবে কিনা। তাই প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কারের জন্য মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে।
শোনা যায় প্রায় এক বছর লাগবে এই টিকা আবিষ্কার করতে। নানান জল্পনা কল্পনা চলছে এই টিকা নিয়ে। এরেই মাঝে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা দিলেন বিশ্বে নভেল করোনাভাইরাসের প্রথম ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত অনুমোদন আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দিয়েছে ইতোমধ্যে আমার মেয়ে এই ভ্যাকসিন নিয়েছেন। মস্কোর গামালিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরি করোনার এই ভ্যাকসিন রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সবুজ সংকেত মেলেছে।
এদিকে রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী ট্যাটিয়ানা গোলিকোভা বলেন, সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে প্রথম এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের তৈরি অন্তত দুই শতাধিক ভ্যাকসিন পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপে রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ২৪টি মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে পৌঁচেছে। এভাবে চলতে থাকে ভ্যাকসিনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
এদিকে ভারত করোনার দুটি প্রতিষেধক নিয়ে কাজ করছে। একটি তাদের নিজেদের তৈরি এবং আরেকটি ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার যৌথ উদ্যোগে তৈরি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার যৌথ উদ্যোগে তৈরি ভ্যাকসিনের পেটেন্ট নিয়ে ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট ভ্যাকসিন উৎপাদন করছে এবং এটি তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে রয়েছে।
তবে তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল শুরু করে চীন, মোট ৬টি দেশে তাদের তৈরি ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হয়। দেশগুলো হলো- ব্রাজিল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া, চিলি, ফিলিপাইন ও তুরস্ক। বাংলাদেশেও এই টিকার ট্রায়াল হওয়ার কথা থাকলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী শেষ মুহূর্তে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জানানোয় সেই প্রচেষ্টা বন্ধ হয়ে যায়।
তবে তিনি বলেছিলেন- করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন ট্রায়ালের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ভ্যাকসিন ট্রায়ালে ভারতসহ অন্য কোনো দেশ আগ্রহ দেখালে সরকার তার কার্যকারিতা যাচাই করে অনুমোদন দেবার ক্ষেত্রে আন্তরিক থাকবে।
পরবর্তীতে করোনা প্রতিরোধে ভেষজ ঔষধ পরীক্ষার প্রোটোকল অনুমোদন দিয়েছিলেন ডব্লিউএইচও’র প্রতিনিধি। মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আর্টেমিসিয়া নামক একটি ভেষজ উদ্ভিদ থেকে তৈরি পানীয় করোনা সারাতে সক্ষম দাবি করার প্রেক্ষাপটে তাই ডব্লিউএইচও অনুমোদন দিলেন।
অবশেষে করোনার মৃত্যু থেকে বাঁচাতে পারে এমন ওষুধের সন্ধান দিয়েছিল ডব্লিউএইচও। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের ফলে নাকি সংকটাপন্ন করোনা রোগীদেরও প্রাণে বাঁচানো যাবে। সংকটজনক করোনা রোগীকে বাঁচাতে সস্তার ডেক্সামেথাজোনই মূল অস্ত্র হয়ে উঠেছে। সাইটোকাইন ঝড় থামিয়ে এই ম্যাজিক ওষুধটি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনছে ‘গুরুতর’ করোনা রোগীকে।
আরো সুখবর, অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম রাশিয়ার সেই ভ্যাকসিন তবে তাড়াহুড়ো ঘোষণা দেওয়ায় ভ্যাকসিন তৈরির প্রক্রিয়া ও এর স্বচ্ছতা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এবার সাফল্য দেখা দিল সেই ভ্যাকসিনেই। জানা গেছে, স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে রুশ ভ্যাকসিন স্পুটনিক-ভি।
এবার আমাদের দেশেই প্রতি মাসে তৈরি হবে ১ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন এযেন আনন্দের বিষয়। সেই সময়ে এর চেয়ে আর আনন্দের বিষয় কি হতে পারে। চীনের সিনোভ্যাকের ট্রায়ালের অনুমতির পর তখন প্রক্রিয়া চলছিলো ভারত বায়োটেকের ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের অনুমতির বিষয়ে।পাশাপাশি বাইরের একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারি ভিত্তিতে দেশেও ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে কমপক্ষে দু’টি দেশীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান।
তার পরেও টিকা পেতে ৫ দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছিল সরকার। এছাড়া আরও আনন্দের বিষয় যে বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেকের করোনা ভ্যাকসিন ব্যানকোভিড’কে তালিকাভুক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এবার অপেক্ষার পালা কবে আমাদের শেষ রক্ষা হবে।
মার্কিন বিশেষজ্ঞদের ফাইজারের ভ্যাকসিন অনুমোদনে সমর্থন আর এর ফলে গণ টিকাদানের পদক্ষেপেরে ক্ষেত্রে পরবর্তী দেশ হিসেবে আমেরিকার পথ সুগম হলো। ২য় ধাপে যুক্তরাষ্ট্র জরুরি ব্যবহারের জন্যে মর্ডানার কোভিড-১৯ এর টিকার অনুমোদন দেয়।যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদন পাওয়া এটি দ্বিতীয় টিকা। এদিকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকা ব্রিটেনে ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়। তাই বাংলাদেশ সরকার আশা করছে যে এই টিকাটি খুব দ্রুতই বাংলাদেশেও দেওয়া শুরু করা যাবে।
নানান জল্পনা কল্পনা চলছে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ পেতে পারে করোনার ‘ভ্যাকসিন’। এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয়ের বার্তা- জানুয়ারির প্রথম দিকেই করোনার ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ। যে কথা সেই কাজ যদিও জানুয়ারীর প্রথমে আসেনি কিন্তু শেষের দিকে সোমবার(২৫/০১/২১ইং) ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনকার টিকা আমাদের হাতে চলে আসে। তবে বাংলাদেশকে ভারত উপহারস্বরূপ ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন প্রদান করেন। পরবর্তীতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনকার তৈরি ৫০ লাখ ডোজ কোভিড-১৯ টিকা ঢাকায় পৌঁছে।
এবার টিকা দেওয়ার পালা, প্রথমে কে নিবে বা কাকে দেওয়া যাবে এ নিয়ে অনেক আলোচনা পর্যালোচনা হয়। এদিকে দিনক্ষণ ধার্য করে (২৭ই জানুয়ারী’২১) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে টিকাদান কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সামনেই নার্স, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ ও সেনাসদস্যসহ ৫ জন করোনা টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেন। প্রথম টিকা নেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরোনিকা কস্তা। অগ্রাধিকার প্রাপ্তদের তালিকার ভিত্তিতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখ থেকে দেশব্যাপী ব্যাপকহারে টিকা দান কর্মসূচি শুরু হবে।
অনেক চরাই উৎরাইয়ের পর বাংলাদেশ পেলো সেই কাঙ্খিত টিকা যা আমাদের চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলার মানুষের মুখে এখন হাসি; তাকিয়ে আছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র চাকুরীজীবী ও ক্ষুদ্র কৃষাণ-কৃষাণী কখন স্বাধীনভাবে তারা চলাফেরা করতে পারবে।
লকডাউন যেন তাদেরকে জিম্মি করে রেখেছে। মুক্ত পাখির মত ডানা মেলে উড়ানো তাদের ইচ্ছা। বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ যেন, চিড়িয়াখানার পশুপাখিদের মত খাঁচায় বন্ধী হয়ে রয়েছে। মুক্তি কবে মিলবে তার দিশা এখন তারা পাবে। মনে আনন্দ লেগেছে স্কুল কলেজে যাবে সাথে অভিভাবকগণ স্বস্তি পাবে আশায় বুক বেঁধে রয়েছে। আশা পুরন হচ্ছে ও হবে এই আশা আমরা করতেই পারি। জয় হোক বাংলার জয় হোক ধরণীর এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক- কলামিস্ট, সম্পাদক ও সাহিত্যিক