কাওছার হামিদ ॥
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা শিল্পকলা একাডেমী ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ভবনে, একযোগে কিশোরগঞ্জ এপি, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ কিশোরগঞ্জ এরিয়া অফিসের আয়োজনে ‘শিশু ফোরামের সাথে- গ্রাম উন্নয়ন কমিটির আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক ‘চ্যানেল অফ হোপ ‘শিশু সুরক্ষা বিষয়ক ’ তিন দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীরা হলেন, গ্রাম উন্নয়ন কমিটি, শিশু ফোরাম, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, জামে মসজিদের ইমাম ও শিক্ষক। প্রশিক্ষণের শিক্ষণীয় আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে তুলে ধরা হয়, প্রশিক্ষণ প্রত্যাশা ও প্রশিক্ষণ পূর্ব জ্ঞান যাচাই। ভিডিসি ও শিশু ফোরাম গঠণের উদ্দেশ্য, কাঠামো ও নিয়মনীতিসমূহ। ভিডিসি , শিশু ফোরাম, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, জামে মসজিদের ইমাম ও শিক্ষক হিসেবে দেশ-মাটি- মানুষের কল্যাণে সকলের দ্বায়-দায়িত্বসমূহ, সাংগঠনিক কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা। শিশু অধিকার, শিশুর প্রতি আচরণ (গ্রহণযোগ্য ও অগ্রহণযোগ্য) আমিই পারি প্রচারাভিযান। শিশু স্পন্সরশীপ কি? ওয়ার্ল্ড ভিশনের শিশু নির্বাচনের নীতিমালা, শিশু নির্বাচনে ভিডিসি ও ইউএনডিসির ভূমিকা। শিশু সুরক্ষার প্রতিবন্ধকতা যেমন- সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, পারিবারিক অসচেতনতা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণের অভাব, প্রয়োজনীয় তথ্য প্রযুক্তির অভাব, শিশু বিবাহ, শিশু শ্রম, শিশু নির্যাতন, কুসংষ্কার, সুরক্ষার অভাব, বৈষম্যতা, শিশুদের মতামত প্রকাশের সুযোগ না দেয়া থেকে উত্তোরণের উপায় ব্যাখ্যা করণ ।
প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, মোছাম্মৎ সাবিকুন্নাহার, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, কিশোরগঞ্জ,কিশোরগঞ্জ এপি, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের এরিয়া ম্যানেজার মি. পিকিং চাম্বু গং, প্রোগ্রাম অফিসার কৃষিবিদ মোঃ আমজাদ হোসেন, সানজিদা আনসারী, মিন্টু বিশ্বাস, শ্যামল মন্ডল এপি ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ। ইমাম ও শিক্ষকদের মধ্য হতে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন, মাওঃ আব্দুর রশিদ, পেশ ইমাম কিশোরগঞ্জ কেন্দ্রীয় বায়তুননুর জামে মসজিদ।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছাম্মৎ সাবিকুন্নাহার প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, শিশু সুরক্ষা বলতে বোঝায, শিশুদের ওপর হিংসা শোষণ, নিগ্রহ যার মধ্যে রয়েছে বাণিজ্যিকভাবে যৌন শোষণ, পাচার, শিশু শ্রম, কন্যা সন্তানের জননাঙ্গের বিকৃতিসাধন, বাল্যবিবাহের মতো প্রাচীন কু-প্রথা, এগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আপনারা হয়তো জানেন, যে কোন সমাজ ব্যবস্থায় শিশুরা নিগ্রহ, হিংসা ও শোষণের শিকার হয়। ছোট ছোট বাচ্ছারা শিশু শ্রমের শিকার হয়, স্কুল যাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। অনেক অভিভাবক বাচ্ছাদের মারধর করেন। শিক্ষকরাও শিশুদের মারধর করেন, ধর্ম ও জাতের দোহাই দিয়ে তাদের প্রতি বৈষম্য করেন। যদি ও বা কন্যা সন্তান জন্মায়, পরিবার ও সমাজের প্রতি পদে তাকে অসন্মান ও লাঞ্ছনার সম্মুখীন হতে হয়। মেয়ে বলে বাল্য বয়সেই তার বিয়ে দেয়া হয়। ধর্ষণের স্বীকার হতে হয়। জাতিসংঘে শিশু অধিকার সনদে শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় ৫৪ টি ধারার মধ্যে সরাসরি শিশুর সুরক্ষা বিষয়ক ২৪ টি ধারা আছে। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদের ওপর ভিত্তি করে জাতীয় সংসদে পাশ হয়েছে ‘শিশু নীতি ২০১১ প্রণীত হয়েছে এবং শিশু আইন-২০১৩। এ আইনে ও শিশুদের সুরক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে নানা বিধি-বিধান রাখা হয়েছে।
তারপরও বাংদেশের শিশুরা সুরক্ষা পাচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রোগ্রাম অফিসার সানজিদা আনছারী উপস্থিত প্রশিক্ষণার্থী প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আসলে শিশুদের বিষয়গুলোতে আর ও নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। উপস্থিত ভিডিসি, শিশু ফোরাম, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, জামে মসজিদের ইমাম ও শিক্ষক, সরকার, পরিবারসহ সমাজের সর্ব স্তরের মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
এপি ওয়ার্ল্ড ভিশনের প্রোগাম অফিসার কৃষিবিদ মোঃ আমজাদ হোসেন প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, কিশোরগঞ্জের সামাজিক উন্নয়নে আমরা শিশু নির্যাতন, শিশু অধিকার ও অবহেলিত পরিবারকে সক্ষম করে তোলার জন্য কৃষি ও গবাদি পশু পালন প্রশিক্ষণসহ বিনামূল্যে কৃষি বীজ, শাক-শাক-সবজী পর্যায়ক্রমে অতিদরিদ্রদের মাঝে ১৩৬৬ টি বকনা গরু বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।