মাফি মহিউদ্দিন, কিশোরগঞ্জ, (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ ‘টয়লেটের রিং স্থাপনের আগেই তা ভেঙ্গে পড়ছে’ আশ্চর্যজনক হলেও সত্য নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের বাড়ি নিমার্ণ কাজে তদারকি কর্মকর্তা ছাড়াই চলছে। অভিযোগ উঠেছে দায়িত্বপূর্ন কোন কর্মকর্তা না থাকায় এই সকল ঘর নিমার্ণে ব্যাপক অনিয়ম করা হচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কাযার্লয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ১শ’ টি গৃহহীন পরিবারের বাড়ি নির্মাণের জন্য ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে বাহাগিলি ইউনিয়নে ৩০ টি এবং বড়ভিটা ইউনিয়নে ৭০টি ঘর নিমার্ণ কাজ চলমান রয়েছে। প্রতিটি ঘর নির্মণের জন্য ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা করে বরাদ্ধ দিয়েছে সরকার।
সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী গৃহনিমার্ণ কাজের লে আউট প্রদান, ঘরের নিলটনঢালাই, পলেস্তারাকরণ এবং টয়লেটের রিং স্থাপনের সময় অব্যশই উপজেলা নিবার্হী অফিসার ,উপজেলা প্রকৌশলী, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এবং সম্ভব হলে পিআইসি কমিটির সদস্যদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
কিন্তু ভূমিহীনদের ঘর নিমার্ণ কাজ চলমান থাকলেও প্রকল্প এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন কর্মকতার্কে চোখে পড়েনি।
মঙ্গলবার ৮ জানিয়ারী সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাহাগিলি ইউনিয়নের কারবালার ডাংগা গুচ্ছগ্রামে ঘর নিমার্ণে এবং স্যানিটেশন টয়লেট নিমার্ণে যে রিং গুলো তৈরী করে বসানো হচ্ছে তা এত দূর্বল যে তা বসানোর আগেই ভেঙ্গে যাচ্ছে।
সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে স্থাপনের আগেই ভেঙ্গে যাওয়া রিং সরিয়ে নিচ্ছে কাজে নিযুক্ত শ্রমিকরা। এছাড়াও সরকারীভাবে নিযুক্ত কোন তদারকি কর্মকতার্ না থাকায় যেভাবে খুশি সেভাবে চলছে ঘরের পলেস্তারাসহ টয়লেটের রিং স্থাপনের কাজ ।
ঐ এলাকার শ্রী জগদিস চন্দ্র, জাহেদুল মিয়া, আবুবক্কর মিয়া জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার গৃহহীনদের বাড়ি নিমার্ন কাজ চলমান থাকলেও সরকারীভাবে কোন তদারকি কর্মকর্তা না থাকায় নিমার্ণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ নিজের ইচ্ছেমতো করে কাজ করছেন।
জানা যায় উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা পদটি শুন্য রয়েছে। এখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নীলফামারী সদর উপজেলার নিবার্হী কর্মকর্তা জেসমিন নাহারকে। তিনি নিজ কর্মস্থলে ব্যস্ত থাকায় এই উপজেলায় নির্মিত ভূমিহীনদের ঘর তৈরী হচ্ছে উপজেলা পরিষদের মালি প্রতিদিন ৫০০ টাকা হাজিরায় অস্থায়ী ভাবে নিয়োগকৃত মালি মাজেদুল ইসলাম চঞ্চলকে দিয়ে।
বড়ভিটা ইউনিয়নেরি মেলাবর গ্রাম এবং পাঠাগারার ডাঙ্গায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গৃহহীনদের ঘর নিমার্ণ কাজ চলমান রয়েছে। ঘরের নিলটন ঢালাই এবং পলেস্তারার কাজ চলছে। নিলটন ঢালাইয়ে নীতিমালা অনুযায়ী খোয়া,বালু এবং সিমেন্টের মিশ্রনের সময়ও একজন তদারকি কর্মকর্তা থাকার কথা। কিন্তু সেখানে কোন তদারকি কর্মকর্তা নেই।
তদারকি কর্মকর্তা না থাকায় রাজমিস্ত্রিরা যেনতেনভাবে বালু,খোয়া ও সিমেন্টের মিশ্রন দিয়ে ঘরের নিলটন ঢালাই এবং পলেস্তারার কাজ করছে।
প্রকল্প এলাকার রাজমিস্ত্রি রহমত মিয়া বলেন, আমরা নিয়ম অনুযায়ী কাজ করছি। তদারকি কর্মকতা না থাকায় কে কাজের দেখভাল করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে উপজেলা নিবার্হী অফিস থেকে নিযুক্ত মাজেদুল ইসলাম চঞ্চল নামে একজন এসে কাজ দেখাশুনা করেন। মাঝেমধ্যে উপজেলা সহকারী কমিশনার( ভূমি) সানজিদা মেডাম এসে কাজ দেখে যান।
উপজেলা পরিষদের মালি মাজেদুল ইসলাম চঞ্চল মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সাবেক উপজেলা নিবার্হী অফিসার নবীরুল ইসলামের নির্দেশে আমি গৃহহীনদের ঘর নিমার্ণ কাজের মালামাল সরবরাহ সহ সার্বিক কাজ দেখাশুনা করছি। এর বাইরে আর কিছুইনা।
এদিকে উপজেলা নিবার্হী অফিসারের বাসভবনে গিয়ে দেখা যায়, গৃহহীনদের বাড়ি নিমার্ণের সকল প্রকার উপকরণের কাজ তার সরকার কর্তৃক বরাদ্ধকৃত বাসভবনে মিস্ত্রি লাগিয়ে দরজা, জানালাসহ বিভিন্ন উপকরণ তৈরীর কাজ চলমান রয়েছে। যারা কাজ করছে তারা সবাই কুড়িগ্রাম রাজিবপুর এলাকার লোক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আগে সেখানে তার পোষ্টিং ছিল। তিনি ওখান থেকে লোক নিয়ে এসে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় তিনি কাজ করাচ্ছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু হাসনাত সরকারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ঘর নিমার্ন কাজে অব্যশই একজন উপসহকারী প্রকৌশলী তদারকির দায়িত্বে থাকবেন।
উপজেলা প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ঘর নিমার্ন কাজে এক সহকারী প্রকৌশলী নিযুক্ত রয়েছে। প্রকল্প এলাকায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, কাজের সার্বিক দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা নিবার্হী অফিসারের। ঢালাই, পলেস্তারা সহ অন্যান্য কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকতার্কে না জানালে কেমন করে যাবে। টয়লেটের রিং স্থাপনের আগেই ভেঙ্গে যাওয়ার বিষয়ে বললে তিনি বলেন, আমি লোক পাঠিয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছি।
উপজেলা নিবার্হী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জেসমিন নাহার বলেন, গৃহহীনদের বাড়ি নিমার্ন কাজের সার্বিক দায়িত্বে আমি রয়েছি। এ বিষয়ে কোন অভিযোগ থাকলে লিখিতভাবে জানাবেন।
নীলফামারী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসিন আরেফিনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি এই জেলায় নতুন এসেছি। গৃহহীনদের বাড়ি নিমার্ন কাজে কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।