বিডি নীয়ালা নিউজ(১০ই মার্চ১৬)–অনলাইন প্রতিবেদনঃ কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ্ আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহর সঙ্গে বৈঠক করেছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
কুয়েতের আমির গতকাল ৮ মার্চ ড. ইউনূসকে তাঁর প্রাসাদ ‘দেওয়ান আমিরি’তে অভ্যর্থনা জানান। ড. ইউনূস কুয়েত সরকারের আমন্ত্রণে তিনদিনের সফরে কুয়েতে অবস্থান করছেন।
বুধবার ইউনূস সেন্টারের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৪৫ মিনিটের এই বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস কুয়েতে অবস্থানরত হাজার হাজার বাংলাদেশিকে সেখানে থাকার ও চাকরির মাধ্যমে তাঁদের ও বাংলাদেশে তাঁদের পরিবারকে সহায়তার সুযোগ দেওয়ার জন্য আমিরকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আমিরকে এই বন্ধুপ্রতিম দেশে আরো বেশি বাংলাদেশি কর্মীদের কাজের সুযোগ দিতে কুয়েতের দরজা উন্মুক্ত রাখতে অনুরোধ জানান। আমির কুয়েত সফরের জন্য অধ্যাপক ইউনূসকে ধন্যবাদ জানান। আমির বলেন, দরিদ্র নারীদের উন্নয়নে অধ্যাপক ইউনূসের অসামান্য কাজের জন্য তিনি সব সময়ই তাঁর গুণগ্রাহী।
তিনি বলেন, ‘আমি পৃথিবীতে দারিদ্র্য নিয়ে, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে দারিদ্র্য নিয়ে চিন্তিত।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন যে পৃথিবী থেকে দারিদ্র্য দূর হবে। তবে তিনি দরিদ্রদের ব্যাপারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মহলের উদাসীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
কুয়েতের আমির জানান, দরিদ্রদের জন্য তিনি যথাসাধ্য কাজ করার চেষ্টা করছেন এবং কুয়েতে দরিদ্রদের জন্য আরো কাজ করতে তিনি অধ্যাপক ইউনূসের পরামর্শ চান। অধ্যাপক ইউনূস ‘কুয়েত ফান্ড’-এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে প্রদত্ত উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য আমিরকে ধন্যবাদ জানান এবং তাঁকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। আমির জানান, বাংলাদেশে সফরে যাওয়ার তাঁর খুবই ইচ্ছা, কিন্তু শারীরিক কারণে তিনি খুব একটা ভ্রমণ করতে সক্ষম নন। অধ্যাপক ইউনূস আমিরের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. ইউসেফ আল-এব্রাহিমকে, যিনি আমিরের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, কুয়েতের সামাজিক খাতের উন্নয়নে কর্মসূচি প্রণয়নে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করেন। অধ্যাপক ইউনূস প্রস্তাব দেন, বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় সামাজিক ব্যবসা দিবসে ড. এব্রাহিমের যোগদানের মধ্য দিয়ে এই সহযোগিতা শুরু হতে পারে। তিনি কুয়েত ফান্ড ও কুয়েত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ ফান্ডের মধ্যে ‘সামাজিক ব্যবসা ফান্ড’ সৃষ্টির প্রস্তাব করেন এবং প্রথম দুটি ফান্ডের ৫ শতাংশ এই উদ্দেশ্যে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব দেন।
ড. ইউনূস কুয়েতের যুবসমাজকে সামাজিক ব্যবসা ও উদ্যোক্তার ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন করাটা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তা ব্যাখ্যা করেন। তিনি কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ‘সামাজিক ব্যবসা কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠারও প্রস্তাব করেন।
কুয়েতের আমির মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি ও বিশাল উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, উদ্বাস্তুদের জন্য তিনি যথাসাধ্য সহায়তার চেষ্টা করছেন, কিন্তু সমস্যাটি প্রতিদিনই গভীরতর হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই অর্থহীন সংঘাত বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট জাতিগুলোর মধ্যে শিগগিরই সুবুদ্ধির উদয় হবে।
এ ছাড়া ৮ মার্চ অধ্যাপক ইউনূস কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের আল-হামাদ আল-সাবাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর সফরের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন এবং বাংলাদেশিদের কুয়েতে বসবাস ও কাজের সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান। অধ্যাপক ইউনূস কুয়েতে বাংলাদেশি চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য ভিসার কড়াকড়ি বিষয়েও কুয়েতের আমিরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। অধ্যাপক ইউনূস কুয়েত রাষ্ট্রের জাতীয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট আলী মারজুক আল-ঘানিমের সঙ্গেও বৈঠক করেন। প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ইউনূসকে জাতীয় পরিষদের একটি প্রতিরূপ উপহার দেন। জাতীয় পরিষদের বেশ কয়েকজন নেতৃস্থানীয় সদস্যও এই বৈঠকে যোগ দেন এবং আলোচনায় অংশ নেন। ওই দিন সন্ধ্যায় অধ্যাপক ইউনূস কুয়েত চেম্বার অব কমার্সের জনাকীর্ণ হলরুমে বক্তৃতা দেন। কুয়েত সরকারের ক্যাবিনেট সদস্যদের প্রায় অর্ধেক, কুয়েতের শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়ী নেতাসহ শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এই বক্তৃতা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অধ্যাপক ইউনূস তাঁর বক্তৃতায় কুয়েতে বাংলাদেশিদের বসবাস ও চাকরির সুযোগ দিতে কুয়েতের জনগণ ও সরকারকে ধন্যবাদ জানান এবং কুয়েতে আগমনেচ্ছু বাংলাদেশিদের জন্য সে দেশের দরজা উন্মুক্ত রাখার জন্য অনুরোধ জানান।
বক্তৃতা শেষে উপস্থিত অভ্যাগতরা দাঁড়িয়ে তুমুল করতালির মাধ্যমে অধ্যাপক ইউনূসকে অভিনন্দন জানান বলে ইউনূস সেন্টারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। এর আগে গত ৭ মার্চ অধ্যাপক ইউনূস ৬০ জন নেতৃস্থানীয় উদ্যোক্তাদের একটি নৈশভোজ ও বৈঠকে যোগ দেন এবং বক্তব্য রাখেন। তিনি তাঁর বক্তৃতায় কেন তরুণদের চাকরি খোঁজার পরিবর্তে বরং উদ্যোক্তা হওয়া উচিত-এ বিষয়ে তাঁর যুক্তি ব্যাখ্যা করেন। ৯ মার্চ অধ্যাপক ইউনূস কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের সঙ্গে অতিবাহিত করেন।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের উদ্দেশে বক্তৃতা দেওয়া ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র ও শিক্ষকদের সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠক করেন।