আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ তুরস্কে সৌদি কনস্যুলেটে ঢোকার পর হত্যার শিকার হওয়ার আগে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি নিজের অ্যাপল ওয়াচের অডিও রেকর্ড অন করেছিলেন। সেখানেই তাকে হত্যার প্রমাণ মিলবে বলে দাবি করেছে তুরস্কের একটি পত্রিকা।
হত্যার আগে খাশোগি তাকে করা জিজ্ঞাসাবাদ, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড সংঘটনের মুহূর্তের অডিও নিজের আইফোন ও অ্যাপলের আইক্লাউডে পাঠাতে পেরেছিলেন বলে দাবি করেছে সাবাহ ডেইলি নামের পত্রিকা। পত্রিকাটির দাবি, সৌদি দূতাবাসে প্রবেশের আগে খাশোগি তার বাগদত্তা হাতিস চেনগিজের কাছে নিজের আইফোনটি রেখে যান। তুরস্কের তদন্তকারীরা এই ফোনে অডিও ফাইলগুলো খুঁজে পায়।
সাবাহ ডেইলির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, হত্যার পর খাশোগির হাতে অ্যাপল ওয়াচ দেখতে পেয়ে হত্যাকারীরা সেটি আনলক করার চেষ্টা চালায়। এজন্য প্রথমে আন্দাজে নানা পাসওয়ার্ড দিয়ে লক খোলার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর অবশেষে খাশোগির আঙুলের ছাপ নিয়ে লক খুলতে পারে খুনিরা। এরপর অ্যাপল ওয়াচ থেকে তারা হত্যার আগের কয়েকটি অডিও ফাইল মুছে দেয়। তবে সব প্রমাণ তারা নষ্ট করতে পারেনি।
তুরস্কের পত্রিকাটির এই দাবি নিয়েও অবশ্য সন্দেহ থেকে যায়। কারণ, অ্যাপলের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, অ্যাপল ওয়াচে লক-আনলকের জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট ভেরিফিকেশনের কোনো ফিচার নেই। সৌদি এবং তুরস্কের কর্তৃপক্ষ তুর্কি পত্রিকাটির এই দাবি নিয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন প্রখ্যাত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। ধারণা করা হচ্ছে কনস্যুলেটের ভেতরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনা আন্তর্জাতিকভাবে বেশ সাড়া ফেলেছে।
জামাল খাশোগি এক সময় সৌদি রাজপরিবারের খুব ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। কিন্তু বর্তমান সৌদি সরকার এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কঠোর সমালোচনা করে তিনি সংবাদপত্রে লেখা ছাপিয়েছেন। তিনি ওয়াশিংটন পোস্টের একজন নিয়মিত কলামিস্ট ছিলেন।
মি. খাশোগির কনস্যুলেটে আসার উদ্দেশ্য ছিল, তার পূর্বতন স্ত্রীকে যে তিনি ডিভোর্স (তালাক) দিয়েছেন – এ মর্মে একটি প্রত্যয়নপত্র নেয়া, যাতে তিনি তুর্কী বান্ধবী হাতিস চেঙ্গিসকে বিয়ে করতে পারেন।
মি. খাশোগি তার মোবাইল ফোনটি মিস চেঙ্গিসের হাতে দিয়ে ভবনের ভেতরে ঢোকেন।মিজ চেঙ্গিস সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, মি. খাশোগি এ সময় বিমর্ষ এবং মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন – কারণ তাকে ওই ভবনে ঢুকতে হচ্ছে।
হাতিস আরো বলেন, মি. খাশোগি তাকে বলেছিলেন যদি তিনি কনস্যুলেট থেকে বের না হন – তাহলে তিনি যেন তুর্কী প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়েপ এরদোয়ানের একজন উপদেষ্টাকে ফোন করেন। তিনি জানান, তিনি কনস্যুলেটের বাইরে অপেক্ষা করেন মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুর একটা থেকে মধ্যরাতের পর পর্যন্ত।
কিন্তু তিনি জামাল খাশোগিকে কনস্যুলেট থেকে বেরিয়ে আসতে দেখেন নি। বুধবার সকালবেলা কনস্যুলেট খোলার সময় তিনি আবার সেখানে উপস্থিত হন। তখন পর্যন্ত মি. খাশোগির কোন খোঁজ মেলেনি। তার পর থেকেই তিনি নিরুদ্দেশ।
K/K/N.