বিডি নীয়ালা নিউজ(২৪জানুয়ারি১৬)- অনলাইন প্রতিবেদনঃ বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামে টানা চারদিন চিকিৎসকেরা ব্যক্তিগত চেম্বার এবং বেসরকারি হাসপাতালে কাজ বন্ধ রাখায় দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা।
একজন রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দু’জন ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলার পর এর প্রতিবাদে চিকিৎসকরা এই কর্মসূচি পালন করছেন।
চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে গত ১০ই জানুয়ারি একজন প্রসূতি বাচ্চা জন্ম দেয়ার পর মারা যান।
এঘটনায় যে দু’জন চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করেছেন তাদের আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন ঐ রোগীর পরিবার।
এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও একজন রোগী চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে অপর একজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
চিকিৎসকদের সংগঠন, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন বা বিএমএর চট্টগ্রাম শাখার যুগ্ম মহাসচিব, ড. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী বলছেন, এসব মামলায় চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি হওয়ায় তারা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
“তদন্ত করে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আমাদের মেনে নিতে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু দুঃখজনক ঘটনা হলো আমাদের বিরুদ্ধে মামলা হলে আমাদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।”
কিন্তু মামলার মতো একটি আইনি প্রক্রিয়া আইনগতভাবে মোকাবেলা না করে এধরনের কর্মসূচি কেন জানতে চাইলে ড. চৌধুরী বলেন, যেহেতু এসব ঘটনায় হাসপাতালে ভাঙচুরও হয়েছে তাই নিরাপত্তার স্বার্থে তারা ব্যক্তিগত চেম্বার বন্ধ রাখছেন।
তবে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এবং বেসরকারি হাসপাতালেও জরুরী চিকিৎসা অব্যাহত রয়েছে।
তবে চিকিৎসকদের এই বক্তব্যের বিরোধিতা করছে ভোক্তা অধিকার সংস্থা ক্যাব।
তারা বলছেন, চিকিৎসকদের এই কর্মবিরতির কারণে বিপুল পরিমাণ রোগী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
চট্টগ্রামে ক্যাবের সভাপতি, এস এম নাজের হোসাইন বলছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় না গিয়ে রোগীদের জিম্মি করার প্রবণতা থেকেই তারা এধরণের কর্মসূচি নিচ্ছেন।
“দুইজন ডাক্তারের জন্য লক্ষ লক্ষ রোগীকে তারা জিম্মি করে ফেলেছেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলে তারা আদালতে এর প্রতিকার চাইতে পারেন, কিন্তু তা না করে মানুষকে জিম্মি করে তাদের দাবী আদায়ের যে প্রচেষ্টা এটা খুবই নিন্দনীয়।”
মি. হোসাইন বলছেন, এর আগেও চিকিৎসকদের এধরণের কর্মসূচির কারণে রোগীদের নানা দূর্ভোগে পড়তে হয়েছে। এর আগেও চিকিৎসদের ওপর হামলা কিংবা অবহেলার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে অনেকবার চিকিৎসা বন্ধ রাখার মতো কর্মসূচি নিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন।
চিকিৎসকদের সনদপ্রদানকারী সংস্থা, বাংলাদেশ মেডিকেল এবং ডেন্টাল কাউসন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. আবু শাফি আহমেদ আমিন বলছেন, বাংলাদেশে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন আইন না থাকায় এধরনের সমস্যা তৈরি হয়।
অনেকসময় ফৌজদারি আদালতে মামলা হওয়ায় চিকিৎসকেরা বিভিন্ন কর্মসূচি নেন। তিনি বলেন, এসব ক্ষেত্রে বিএমডিসিতেও একটি অভিযোগের প্রক্রিয়া রয়েছে।
ড. আমিন বলছেন, এধরনের সমস্যা মোকাবিলায় ‘রোগী সুরক্ষা আইন’ নামে একটি আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে, যাতে চিকিৎসা পেশাজীবীদেরও সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।
একটি নিয়ম তৈরি হলে এধরনের সমস্যা কমে আসবে বলে তিনি মনে করছেন।
সুত্রঃ বিবিসি বাংলা