সাব্বির আলম বাবু, প্রতিনিধিঃ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝড়-বৃষ্টি ও লবণাক্ত পানির থেকে রক্ষায় ভোলায় প্রথমবার আগাম বেরো ধান চাষ শুরু করেছেন কৃষকরা। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তিন শতাধিক কৃষক ১৫০ হেক্টর জমিতে আগাম ফসল রোপণ করেছেন।
সরেজমিনে জানা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চর উমেশ গ্রামের কৃষকরা প্রতি বছর মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বোরো ধানের আবাদ করে আসছেন। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝড়, বৃষ্টি, জোয়ার ও লবণাক্ত পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হতো কৃষকদের বোরো আবাদ। এতে করে লোকসানের মুখে করতেন কৃষকরা। তাই এ বছর তারা আগাম বোরো ধানের আবাদ শুরু করেছেন। মো. সাহাবুদ্দিন নামের এক কৃষক জানান, ক্ষতি থেকে রক্ষায় এ বছর গ্রামের তিন শতাধিক কৃষক ১৫০ হেক্টর জমিতে আগাম বোরো আবাদ শুরু করেছেন। এর ফলে তারা ঝড়, বৃষ্টি, জোয়ার ও লবণাক্ত পানি ক্ষেতে প্রবেশ করার আগেই তারা মাঠ থেকে পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবেন। মো. আলাউদ্দিন নামের আরেক কৃষক জানান, ফসলের ক্ষেতে জোয়ার ও লবণাক্ত পানি প্রবেশ বন্ধ করতে আমরা কৃষকরা দলবদ্ধভাবে একটি উঁচু বাঁধ দিয়েছি। এখন আর ক্ষেতে জোয়ার ও লবণাক্ত পানি প্রবেশ করতে পারবে না।
তারা আরও জানান, আমাদের কৃষকদের নিজস্ব একটি সংগঠন রয়েছে। সেখানে আমরা টাকা জমিয়ে বিভিন্ন কাজ করে থাকি। এ বছর আমরা আমাদের নিজস্ব সংগঠনের সমিতির মাধ্যমে পানি সেচের মেশিন কিনেছি। এখন আমাদের ক্ষেতে আমরাই পানি সেচ দিবো। আর এতে করে আমাদের ক্ষেতে পানি সেচের খরচও অনেক কমে গেছে। এছাড়াও অন্যের থেকে পানি সেচ ক্ষেতে দিলে লবণাক্ত পানি ঢোকানোর একটি টেনশন থাকতো সেটাই এখন নেই। সমিতির সভাপতি কৃষক মো. বশির উল্লাহ জানান, কৃষকরা টাকা জমিয়ে সংগঠনটি গড়ে তুলেছি। এর মাধ্যমে আমরা সমিতির থেকে টাকা নিয়ে কৃষি কাজের ব্যবহার করি। এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোনো কৃষক ক্ষতি হলে আমরা সমিতির মাধ্যমে সে কৃষককে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে থাকি। ভেদুরিয়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুম বিল্লাহ জানান, কৃষকদের এমন উদ্যোগের মাঠ পর্যায়ে সফল হওয়ার জন্য তাদের সব ধরণের পরামর্শ ও তদারকি করে যাচ্ছি। আমি আশা করছি কৃষকরা এবছর শতভাগ সফল হবেন। ভোলা সদর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এ এফ এম শাহাবুদ্দিন জানান, ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চর উমেশ গ্রামের কৃষকদের এমন উদ্যোগ দেখে আগামী বছর জেলায় ১০০ ভাগ কৃষক আগাম বোরো চাষে ঝুঁকবেন। আর এতে করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগেই কৃষকরা তাদের বোরো ধান সফলভাবে ঘরে তুলতে পারবেন।