মোঃ বনি ঝিনাইদহ, জেলা প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের মালখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে শফিকুল ইসলাম (২১) নামে একজন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন।নিহত শফিকুল ইসলাম সদর উপজেলার উত্তর কাস্টসাগরা গ্রামের বছির উদ্দীন শেখের ছেলে। তিনিই সাব কনট্রাক্ট হিসেবে কাজ করছিলেন। বাকী আহতরা হলেন সদর উপজেলার আড়–য়াকান্দি গ্রামের জামাল উদ্দীনের ছেলে মোস্তাক হোসেন (২০), কাস্টসাগড়া গ্রামের মসলেম মোল্লার ছেলে আসাদ মোল্লা (৩০) ও ভগবাননগর গ্রামের লতাফত হোসেনের ছেলে রাজিব (৩৫)। এরমধ্যে মোস্তাক ও রাজিবকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। রোববার দুপুরে ঝিনাইদহ গণপুর্ত বিভাগের কাজ পেয়ে ঠিকাদারের শ্রমিকরা মালখানার মধ্যে লোহার র্যাক তৈরীর সময় এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে সুনিদ্দিষ্ট ভাবে কেও বলতে পারছে না আসলে সেখানে কি বিস্ফোরিত হয়েছে। বিস্ফোরণের সময় প্রচন্ড শব্দে গোটা ভবন কেঁপে ওঠে। এ সময় আদালতের বিচারক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিস্ফোরণের শব্দ শুনে আতংকিত হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। অনেকে জানালা ও লোহার গ্রিল ভেঙ্গে জীবন বাঁচাতে বাইরে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। মালখানায় দায়িত্বরত পুলিশ ও উদ্ধার কাজে নিয়োজিত দমকল বাহিনীর সদস্যরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে নির্মান কাজে ব্যবহৃত কোন ইলেক্ট্রিক ডিভাইসের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ মজিবর রহমান ও পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলামসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মালখানার দায়িত্বে নিয়োজিত এসআই ইমামুল জানান, রোববার দুপুরে মালখানার মধ্যে কাজ করছিল গনপূর্ত বিভাগের ঠিকাদারের ৩/৪ জন শ্রমিক। তিনি নিজেও এ সময় রুমে ছিলেন। হঠাৎ বিস্ফোরণ ও ধোয়ার কুন্ডুলি। তারপর বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার। সঙ্গে সঙ্গে ভবনে থাকা পুলিশ সদস্য, আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনজীবী, আইনজীবী সহকারী ও সাধারণ মানুষ ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার কাজে অংশ নেন। প্রথমে ৩ জন ও পরে ছিন্নভিন্ন শরীর নিয়ে শফিকুল নামে একজনকে উদ্ধার করে দমকল বাহিনীর সদস্যরা পুলিশের গাড়িতে হাসপাতালে পাঠায়। এসআই ইমামুল দাবী করেন মালখানার মধ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য ছিল না। ঝিনাইদহ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের রেকর্ড সহকারী আসাফ-উদ-দৌলা মাসুম জানান, প্রচন্ড বিস্ফোরণে সবাই যখন আতংকিত হয়ে ওদিক ওদিক ছুটাছুটি করছিলেন তখন তিনি ও পুলিশের এসআই দাউদ হোসেন জীবনের ঝুকি নিয়ে মালখানার মধ্যে ঢুকে তিন জনকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। আইনজীবী সহকারী নুর আমিন জানান, তিনি উদ্ধার কাজে অংশ নিতে গিয়ে নিজেই আহত হন। এক পুলিশ সদস্যও আহত হয়ে হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহন করেন। তার মাথা ও শরীরে রক্ত ছিল। ঝিনাইদহ দমকল বাহিনীর উপ-পরিচালক শামিম জানান, মালখানায় আসলে কিসের বিস্ফোরণ ঘটেছে তা তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না। তবে ইলেক্ট্রনিক কোন ডিভাইস বিস্ফোরণ হতে পারে। ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা জানান, প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে নির্মানকাজে ব্যবহৃত ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এ ঘটনায় ওয়েল্ডিং কারখানার মালিক শফিকুল নিহত ও তার ৩ শ্রমিক আহত হন। তিনি জানান পুরো ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, এ ঘটনার সঙ্গে কোন নাশকতা বা জঙ্গি কানেকশন নেই। এটা নিছক দুর্ঘটনা। তিনি বলেন, সেখানে পুলিশের এক সিপাই অনুপম উপস্থিত ছিলেন। তার সামনেই এ ঘটনা ঘটে। বারেক আলী নামে এক লেদগ্রিল ব্যবসায়ী জানান, সহজে বহনযোগ্য একটি চায়না সার্কিট মেশিন দিয়ে এমন কাজ করা যায়। যদি সে রকম মেশিন তারা ব্যবহার করে তবে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বরৈ তিনি মনে করেন। এদিকে অভিযোগ রয়েছে, ঝিনাইদহ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের মালখানা দীর্ঘদিন অরক্ষিত। মালপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এর আগে একবার মালখানায় চুরি হয়েছে। সেখানে মুল্যবান মামলার আলামত, বিভিন্ন সময় উদ্ধার হওয়া সোনা, টাকা, মাদক ও দেশি কামারশালার অস্ত্র থাকলেও ঠিকাদারের যারা কাজ করতে প্রবেশ করেছিল সেই শ্রমিকদের নাম ঠিকানা বা ব্যক্তিগত কোন তথ্য মালখানার দায়িত্বরত এসআই ইমামুল দিতে পারেনি। ফলে দুর্ঘটার পর সেখানে কারা কাজ করছিলেন তা তাৎক্ষনিক ভাবে জানাতে পারেনি।