একদিন পরেই শ্রীলঙ্কার কলম্বোর পি সারা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ খেলতে নামছে ঐতিহাসিক শততম টেস্ট। ম্যাচটিকে অবিস্মরণীয় করে রাখতে ক্রিকেটাররা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন, আর সমর্থকরাও ক্রিকেট প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এই ম্যাচে সেলিব্রেশন করার জন্য প্রস্তুত। ইতিমধ্যেই বোর্ড কর্মকর্তাদের অধিকাংশ কলম্বোতে গিয়ে উপস্থিত।
টেস্ট খেলুড়ে ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সব শেষে ১০০তম টেস্ট খেলতে মাঠে নামছে। তারপরেও টেস্ট অভিষেকের পর থেকে শততম টেস্ট খেলার সময় হিসাব করলে সবার উপরেই থাকবে বাংলাদেশের নাম। টাইগাররা প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলেছিল ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর। ১৬ বছর ৫ মাস পর আগামীকাল কলম্বোতে খেলতে নামবে শততম টেস্ট। টেস্টের ইতিহাসে ১০০তম টেস্ট খেলতে সবচেয়ে বেশি সময় লেগেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। প্রোটিয়ার প্রথম টেস্টের পর ১০০তম টেস্টটি খেলেছিল ৬০ বছর পর।
বাংলাদেশ এই ১৬ বছরে খেলা ৯৯ টেস্টের মধ্যে জয় পেয়েছে মাত্র ৮টিতে। ড্র হয়েছে ১৫টি টেস্ট। বাকি সব ম্যাচে পরাজয়। টাইগাররা ৩৫তম টেস্টে গিয়ে প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছে। ২০০৫ সালের ১০ জানুয়ারি জিম্বাবুয়েকে হারায়। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি জয়ও এই জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধেই। সব মিলে আফ্রিকা মহাদেশের এই দলটিকে ৫ বার হারিয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দুইবার জয় পায় বাংলাদেশ। সব শেষ গত বছর ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে হারায় মুশফিকরা। বাংলাদেশের টেস্টের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্জন এটিই।
দলীয় সাফল্যের বিচার করলে হয়তো টেস্টে বাংলাদেশের উপস্থিতিটা খুব একটা চোখে পড়বে না! কিন্তু ব্যক্তিগত অর্জনের খাতাটা ভরপুর। টেস্টের ১৪০ বছরের ইতিহাসে যেখানে হ্যাটট্রিক হয়েছে মাত্র ৪২ বার, সেখানে এই ৯৯ টেস্টের মধ্যেই দুই দুইবার হ্যাটট্রিক করার অনন্য গৌরব আছে বাংলাদেশের। ২০০৩ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম হ্যাটট্রিক করেন অলোক কাপালি। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ২০১৩ সালে হ্যাটট্রিক করেন সোহাগ গাজী। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওই টেস্টের এক ইনিংসে অপরাজিত সেঞ্চুরি ও হ্যাটট্রিকসহ ৬ উইকেট নিয়েছিলেন এই টাইগার অলরাউন্ডার। এমন রেকর্ড টেস্টের ইতিহাসে আর দ্বিতীয়বার ঘটেনি।
৯৯ টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি ও ৪৩ সেঞ্চুরি করেছেন—এটি অনেক বড় ঘটনা। ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলোরও প্রথম ১০০ টেস্টে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি ছিল না। বাংলাদেশে টেস্টে সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। তার ডাবল সেঞ্চুরিসহ সবচেয়ে বেশি রান (৩৫৪৬) এবং ৮টি সেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করেছেন সাকিব আল হাসান ১৭০টি।
সব শেষ মুস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজ তো অভিষেকেই ক্রিকেটবিশ্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। প্রথম দুই ম্যাচে মিরাজ নিয়েছেন ১৯ উইকেট। আর কাটার মাষ্টার মুস্তাফিজ তো এখন গোটা ক্রিকেট বিশ্বেই মূর্তিমান আতঙ্ক।
তবে কলম্বো টেস্টে যদি বাংলাদেশ জিততে পারে ছাড়িয়ে যাবে সব সাফল্যকেই। যদিও শততম টেস্টে জয়ের ইতিহাস খুব বেশি নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তান ছাড়া আর কোনো দেশ তাদের শততম টেস্টটি অবিস্মরণীয় করতে পারেনি। তবে নিউজিল্যান্ড ড্র করেছিল। বাকি সব দেশই হেরে গিয়েছিল। সব শেষ ২০১৬ সালের নভেম্বরে শততম টেস্ট খেলার মাইলফলকে পৌঁছা দেশ জিম্বাবুয়ে তাদের ঐতিহাসিক ম্যাচে হেরেছিল বাজেভাবে। ঘরের মাঠ হারারে স্পোর্ট ক্লাব মাঠে তারা শ্রীলঙ্কার কাছে ২২৫ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। এবার সেই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেই ঐতিহাসিক ম্যাচ খেলতে নামছে টাইগাররা। যদিও আগের ম্যাচে হেরে মানসিকভাবে বড় একটা ধাক্কা খেয়েছেন মুশফিকরা। তারপরেও শততম টেস্টে বিজয়ের বাণী শোনাচ্ছে বাংলাদেশ।
বি/পি/এন