বিডি নীয়ালা নিউজ(২৩ই আগস্ট ২০১৬ইং ) আব্দুল্লাহ আল মামুন ,পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার পূর্ব রাজাবাসর গ্রামের দিনমজুর আবু হোরায়রা ও হোসনে আরার ছেলে। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের এবার এইচএসসি পরীক্ষায় সৈয়দপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ হতে (বিজ্ঞান বিভাগ) জিপিএ- ৫ অর্জন করেছেন। কিন্তু টাকার অভাবে ভালো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছেননা। দরিদ্রতাই তার ভর্তির অন্যতম অন্তরায়। গরীব দিনমজুর পিতা বিভিন্নস্থানে সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য ভর্তির টাকা যোগাড় করার প্রাণন্তকর চেষ্টা করছেন। পারছেন না। হাবিবুর রহমান রনির স্বপ্ন ছিল উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সে একজন প্রকৌশলী হবে। প্রতিষ্ঠিত হয়ে গরীব পিতা-মাতার সংসারের হাল ধরবে। তার যশ খ্যাতিতে তার পিতা-মাতার মুখ উজ্জ্বল হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য সে কিছু করবে। কিন্তু সে আশা পূরণ হবার নয়। অভাবের তাড়নায় সে নিজেই ঝরে যাচ্ছে।
অদম্য এ ছাত্রের লেখাপড়ার উদ্দীপনা কল্পকাহিনীকে হার মানায়। আবু হোরায়রা একজন দিনমজুর। ছোট বেলা থেকেই হাবিবুরের পড়ার প্রতি বেজায় ঝোঁক। সে ধর্মকর্মের প্রতি অত্যান্ত নিষ্ঠাবান। রাজাবাসর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি ও এসএসসিতে দিনাজপুর বোর্ডের অধীনে পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় হতে (বিজ্ঞান বিভাগ) জিপিএ- ৫ পেয়েছেন। অনেক কষ্ট করে সৈয়দপুর শহরে একটি মেসে থাকেন। পেটভরে কোনদিন খেতে পারেনি। অনাহার ও অর্ধাহার তার পরিবারে নিত্য সঙ্গী। শত ঝড় ঝাপটার মাঝেও সে পড়ালেখা বাদ দেয়নি। কলেজে যথাসময়ে উপস্থিত হয়েছে। প্রাইভেট পড়ার কথা চিন্তা করেনি।
সে স্কুলের শিক্ষকদের ভুলে যায়নি। এইচএসসিতে জিপিএ- ৫ পাওয়ার পর সে ছুঁটে এসেছেন স্কুলের শিক্ষকদের কাছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, হাবিবুর একটি স্বণের টুকরা। কারো সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে সে অনেক বড় হতে পারবে। বৃহত্তর পরিসরে হাবিবুরকে যাত্রা করতে হবে। বই-খাতাপত্রসহ আনুসাঙ্গিক জিনিষপত্র কিনতে হবে। যা তার পিতা-মাতা আবু হোরায়রা ও হোসনে আরার পক্ষে অসম্ভব। অর্থ-বিত্ত-বৈভবে জন্ম নেয়া এমন বহু ছেলে-মেয়ে আছে, যারা প্রাইভেট পড়ে, ভাল খাবার খেয়ে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়, কিংবা যাচ্ছে। কিন্তু দূর্ভাগা হাবিবুর রহমানে মত অনেকের পক্ষে তা অকল্পনীয়। তবুও গরীবের ঘরে অসংখ্য হাবিবুরের জন্ম নেয়। যারা সুযোগ পেলে উঠে আসে। নতুবা ঝরে যায়। লোকচক্ষুর অন্তরালে।
হাবিবুর রহমান ও তার পরিবারের সংবাদপত্রের উপর অগাধ বিশ্বাস। তাদের ধারণা সংবাদপত্রে এসব লিখে দিলে হাবিবুরের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। যে কোন পাঠক কিংবা দানশীল ব্যক্তির বদান্যতায় তার শিক্ষার আলোর সুবর্ণ রেখা প্রসারিত হবে। তাদের সে বিশ্বাসকে বাস্তবায়ন করতে আমরা হাবিবুরের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসতে পারি। ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এ বোধটুকু সমাজে এখনও টিকে আছে বলে হাবিবুর স্বপ্ন দেখে।