বিডি নীয়ালা নিউজ(১৪ই ফেব্রুয়ারী ১৬) মারুফ সরকার (সিরাজগনজ প্রতিনিধি): ২৭/২৮ বছর আগে পিছিয়ে পড়া রক্ষণশীল সমাজগোষ্ঠীর নারীরা ফুটবল খেলার মাঠে অবাধে বিচরণ করুক-এই সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ঘটনাটি নিয়ে ভাবাই যেতো না। খুব তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে চলবে না, আশি দশকে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থার ব্যবস্থাপনায় বেশ কয়েকজন প্রমীলা খেলোয়াড়দের নিয়ে দুঃসাহসিকতার মাধ্যমে ধানমন্ডি ক্রীড়া কমপ্লেক্সের মাঠে ফুটবল খেলার দীক্ষা গ্রহণ করে। মাঠে যতবার প্রমীলা খেলোয়াড়দের বলে দাপাদাপির দৃশ্য দেখে, ততই যেনো এদেশের পিছিয়ে পড়া কূলীণ সমাজের অধিকাংশ মৌলবাদীরা তোয়াজ শোরগোল তোলে, ‘তওবা তওবা, মাইয়ারা দেহি হাফ প্যান্ট পইড়্যা ফুটবলটা খ্যাল্ছে…নাউজুবিল্লাহ মিন জালেক। বন্ধ করো ওদের ফুটবল খেলা।’ চারদিকে মৌলবাদীদের হৈচৈ পড়লো। তৎকালিন সরকার ঐ উগ্রপন্থী মৌলবাদের চাপের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত ধানমন্ডি কমপ্লেক্সের ফুটবল বন্ধ রাখতে বাধ্য হলো বটে। কিন্তু আধুনিক ভাবী ভবিষ্যতের যাত্রী প্রমীলা খেলোয়াড়দের ফুটবল ক্যারিয়ার ভীষণ ক্ষতি হয়ে গেল। ইদানিং ফিফার নির্দেশে বাংলাদেশের ফুটবল সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করা অত্যাবশ্যকীয় বিধায় বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থা প্রমীলা ফুটবল চালুর উদ্যোগ নেয়। সেই সময়ে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ভারত, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, হংকং, চীন, জাপানদের সাথে যোগ দেয় বাংলাদেশের প্রমীলা খেলোয়াড়রা। বাংলাদেশের মতো কট্টরপন্থী মৌলবাদী পাকিস্তানে তখনও কিছু ঘুণে ধরা মৌলবাদীদের কারণে ফুটবল চালু হয়নি। আধুনিক ফুটবল জীবনধারারপথে যুক্ত হয়ে ওঠে কিছু দেশ। অনেক পরে যোগ দেয় আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র ইরান, আফগানিস্তান, ইরাক, সুদান, সিরিয়া, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরবসহ প্রভৃতি দেশ। অবশ্য ভারতে উগ্রবাদী হিন্দুরা ঐ দেশের প্রমীলা ফুটবল খেলার ব্যাপারে তীব্র বিরোধিতা করলেও ইন্ডিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের অবিচল আস্থার সাথে মোকাবেলা করে। ভারতের প্রমীলা ফুটবল খেলোয়াড় চার দেয়ালের মধ্যে বসে থাকার পাত্রী নয়। মনে আত্মবিশ্বাস ছিল ভারতের প্রমীলাগণ পারবে। অন্ততঃ তাই হয়েছে। একদা ইরান দেশের মুসলিম প্রমীলাদের মাঠে নামার কথা সেদেশের মুসলিম সরকার এতোটাই কঠোরপন্থী। তবুও ইরান ঐ ফিফার নির্দেশিত কথাটি তারা মেনে নিয়েই আজ প্রমীলা ফুটবলে যথেষ্ট শক্তিশালী ও আধুনিকমানের একটি দল। সারা শরীরে বোরকা পড়ে আর মাথায় স্কার্ফ রেখে ফুটবল খেলেছে। এইতো কিছুদিন আগে ইরান দেশের মেয়েরা বাংলাদেশ প্রমীলা জাতীয় দলকে ৬-০ গোলে হারিয়ে শক্তিমক্তার পরিচয় দেয়। বাংলাদেশের মেয়েরা যতোটা দুর্বল মনে করা হোক না কেন, মনে রাখতে হবে-বাংলাদেশের প্রমীলা খেলোয়াড়ের সংখ্যা খুব সীমিত। এখনও সারাদেশে প্রমীলা ফুটবল ছড়িয়ে পড়লেও খেলার মান এখনও সেকেলে। যথাযথভাবে নতুন প্রমীলা খেলোয়াড়দের মৌলিক ফুটবল প্রশিক্ষণ দেয়া এখনকার সময়ে খুবই জরুরী। দেশের অধিকাংশ গ্রামাঞ্চলে গিয়ে দেখতে পাবেন, গুটি কয়েক কিশোরীরা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো নিজেদের ফুটবল খেলে যাচ্ছে। গাইডলাইন দেয়ার মতো ফুটবল প্রশিক্ষক নেই বললেই চলে। আশ্চর্যের বিষয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মনোনীত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ফুটবল কোচ থাকার পরেও এদের দিয়ে সারাদেশে ফুটবল বেসিক্যালে কাজে লাগায় না। দেশে বড় বড় ফুটবল ডিগ্রী কোচ আছেন, যাদের দিয়ে এদেশীয় প্রমীলা ফুটবলের পরিমন্ডলে যথেষ্ট অবদান রাখতে পারেন কিন্তু, কাজে কেউ কোথাও নেই। ইদানিং পাকিস্তানের মেয়েরা দিনে দিনে প্রভূত উন্নতি করছে। জাতিগতভাবে এরা ফুটবল চর্চায় উন্নতির সোপানে পৌঁছেছে। তার কারণ, ফিফার নির্দেশিত গাইডলাইন মেনে নেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানী প্রমীলাদের আত্মবিশ্বাস এখন এতোটাই আকাশছোঁয়া। পাকিস্তানী প্রমীলা বাংলাদেশের ঘাড়ে মটকে দেয় সাম্প্রতিক কালের এক আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলায়। ভুটানকে বাংলাদেশের মেয়েরা তো শোচনীয় ব্যবধানে পরাজিত করতে পারলেও সেই পর্যায়ে উঠে আসতে অনেক সময় লাগবে। পিছিয়ে যাওয়ার মূল কারণ, এতোদিনে বাংলাদেশের প্রমীলা ফুটবল খেলোয়াড়রা মরিচিকার রাজত্বে বসবাস করে আসছিল। হঠাৎ ৬/৭ বছর আগে ফিফার হুঙ্কারে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের টনক নড়ে। তোমরা যদি মেয়েদের মাঠে নামাতে না পারো, তবে তোমাদের সর্বোচ্চ শাস্তির মুখ দেখতে হবে-ফিফার সদস্য দেশগুলোকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বহিস্কৃত হওয়া। এ নোটিশ জারিই বাফুফেকে যথেষ্ট ভাবিয়ে তোলে। প্রমীলাদের মাঠে না নামালে বাংলাদেশের ছেলেদেরকেও বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব, এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব, অনুর্ধ্ব-১৬, অনুর্ধ্ব-১৮, অনুর্ধ্ব-২৫ প্রভৃতি বিভিন্ন বয়সী গ্রুপভিত্তিক খেলার সুযোগ দেয়া হবে না। বঞ্চিত হওয়ার আশংকায় বাংলাদেশের মৌলবাদীরা নিশ্চুপ হয়ে থাকলো। বাফুফে ও বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থা তড়িঘড়ি করে যেমন করেই হোক, এদেশের মাঠে প্রমীলাদের বল খেলার ব্যবস্থা করতে হবে। তখনও কিন্তু এদেশের প্রমীলা খেলোয়াড় তৈরিই ছিল না।