ডেস্ক রিপোর্টঃ রাজধানী ঢাকা ও এর আশেপাশের অঞ্চলের জনসাধারণের চলাচল নির্বিঘœ ও ভোগান্তি লাঘবে বাংলাদেশ রেলওয়েকে আধুনিক ও যুগোপযোগী জন-পরিবহন হিসেবে গড়ে তুলতে বর্তমান সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে।
এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক এমপি বাসসকে বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরের যানজট নিরসনে সরকার চীন থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০ সেট (৩ ইউনিটে একসেট) ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডিইএমইউ) সংগ্রহ করেছে।
তিনি বলেন, সংগৃহীত ডিইএমইউ দ্বারা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে ১৬ জোড়া কমিউটার ট্রেন এবং জয়দেবপুর-ঢাকা সেকশনে ৪ জোড়া কমিউটার ট্রেন চালু করা হয়েছে। এছাড়া ময়মনসিংহ-জয়দেবপুর, আখাউড়া-কুমিল¬া, লাকসাম-কুমিল¬া-চাঁদপুর, লাকসাম-কুমিল¬া-নোয়াখালী, সিলেট-আখাউড়া, পার্বতীপুর-ঠাকুরগাঁও, পার্বতীপুর-লালমনিরহাট, চট্টগ্রাম-কুমিল¬া এবং চট্টগ্রাম শহরে সার্কুলার কমিউটার ট্রেন সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এতে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য জনবহুল শহরগুলোতে যানজট অনেকাংশে লাঘব হয়েছে।
মুজিবুল হক বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েলগেজ লাইন, টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ লাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের পরামর্শক কাজের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বর্তমানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রকৌশল ডিজাইনের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে ঢাকা থেকে জয়দেবপুর এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে অধিক পরিমাণ কমিউটার ট্রেন চালানো সম্ভব হবে, যা ঢাকা শহরের মানুষের যোগাযোগ ও যানজট নিরসনে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ-জয়দেবপুর সেকশনের গুরুত্বপূর্ণ লেভেল ক্রসিংসমূহে যানজট নিরসনের জন্য ওভারপাস/আন্ডারপাস নির্মাণের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি সমীক্ষা প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রী গত ৩১ মার্চ অনুমোদন দিয়েছেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নারায়ণগঞ্জ-জয়দেবপুর সেকশনে যে সকল লেভেল ক্রসিংয়ে ওভারপাস/আন্ডারপাস নির্মাণ করা প্রয়োজন, তা চিহ্নিত করে নির্মাণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। যা অত্র অঞ্চলের যানজট হ্রাসে সহায়ক হবে।
এতে রাজধানীর যানজট যেমন কমবে, তেমনি মহানগর ও এর আশেপাশের বাসিন্দারা স্বল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে।
রেলপথ মন্ত্রী মো: মুজিবুল হক এমপি এ প্রসঙ্গে বাসসকে বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়েকে আধুনিক ও যুগোপযোগী জন-পরিবহন হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। যানজটমুক্ত পরিবেশে রাজধানী ও এর আশেপাশের অঞ্চলের মানুষ যেন নির্দিষ্ট সময়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারে, সেদিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বর্তমান সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে।
তিনি বলেন, এসব পদক্ষেপের মধ্যে কিছু বাস্তবায়িত হয়েছে এবং কিছু বাস্তবায়নাধীন আছে। ইতিমধ্যে যেসব পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হয়েছে, তাতেই রাজধানীর যানজট অনেকটা কমে এসেছে। সবগুলো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে রাজধানী ও এর আশেপাশের এলাকার দীর্ঘদিনের যানজট আর থাকবে না। সেই সাথে জনসাধারণ নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে।
মুজিবুল হক বলেন, রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের উদ্দেশে বাংলাদেশ রেলওয়েকে ঢেলে সাজাতে এবং একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অদ্যাবধি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা উত্তরকালে দীর্ঘদিন রেলওয়ে সেক্টর অবহেলিত ছিল। অথচ বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে গণ-পরিবহন হিসেবে রেলওয়ের গুরুত্ব অপরিসীম।
রেলমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়েকে একটি শক্তিশালী পরিবহন নেটওয়ার্ক হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার বদ্ধপরিকর এবং এ লক্ষ্যে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। গৃহীত উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রত্যাশিত, সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ধারাবাহিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের কারণে ইতিমধ্যে নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশ-বান্ধব এ গণ-পরিবহনে যাত্রী সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রাজধানীর যানজন নিরসনের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী আরো বলেন, ঢাকা শহরের চর্তুপাশে সার্কুলার রেলপথ চালুর জন্য ‘ঢাকা শহরের চতুর্দিকে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। জিওবি অর্থায়নে প্রকল্পের জন্য একটি স্টাডি/সার্ভে প্রস্তাব প্রণয়ন করে গত বছরের ২৯ জুন পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, চলমান এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রাজধানী ঢাকা ও এর আশেপাশের জনগণ নির্দিষ্ট সময়ে যেমন গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন, তেমনি যানজটের ভোগান্তি থেকেও চিরতরের জন্য রক্ষা পাবেন।
বি/এস/এস/এন