ডেস্ক রিপোর্ট- ১২ রবিউল আউয়াল শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও মৃত্যুর দিন হিসেবে পরিচিত। বস্তুত দিনটি বিশ্ববাসীর জন্য কেবল জন্ম ও মৃত্যুর তারিখ স্মরণ নয় বরং নবী করিম (সা.)-এর জীবনাদর্শ অনুকরণ-অনুসরণের মাঝে রয়েছে প্রকৃত সফলতা।
হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অতুলনীয়, অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তিনি ছিলেন অসাধারণ বিনয়ী, পরোপকারী, সদালাপী সহৃদয়সহ সকল প্রকার মহৎ গুণে গুণান্বিত অনুপম চরিত্রের অধিকারী। শৈশবকাল থেকে মহানবী (সা.)-এর জীবনে এক দুর্লভ ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য পরিস্ফুটিত হয়। দয়া ও ন্যায়পরায়ণতার মূর্ত প্রতীক হিসেবেও নবী করিম (সা.)-এর বেশ সুনাম রয়েছে। দানশীলতা, উদারতা ও বদান্যতায় তিনি ছিলেন অতুলনীয় উদাহরণ।
সহনশীলতায় ও ক্রোধ সংবরণে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বোচ্চ আদর্শের প্রতীক। কখনও তার পক্ষ হতে মন্দ কথন ও কর্ম প্রকাশ পায়নি, নির্যাতন-অবিচারের শিকার হলেও কখনও প্রতিশোধ নেননি। কখনও কাউকে প্রহার করেননি। সদা চিন্তাশীল, কোমল, শান্ত ও ভদ্র চরিত্রের অধিকারী নবী করিম (সা.) নিয়ামত কম হলেও বেশি মনে করতেন। ব্যক্তিগত বা পার্থিব স্বার্থে আঘাত হলে রাগ করতেন না। আল্লাহর বিধান লংঘিত হলে প্রতিবিধান না করা পর্যন্ত ক্রোধ থামাতেন না এবং ক্ষান্ত হতেন না। হাসির সময় প্রায় মুচকি হাসতেন। এক কথা তিন বার বলতেন। তিন বার সালাম দিতেন। তিন বার অনুমতি চাইতেন।
সাহসিকতা, নির্ভীকতা, যথাসময়ে উদ্যোগ গ্রহণ রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশেষ গুণ ছিল। তার সাহিসকতা বড় বড় বীরদের নিকট অবিসংবাদিতভাবে স্বীকৃত। এক কথায়, হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর চরিত্রে মানবীয় গুণাবলীর সকল বৈশিষ্ট্যের চূড়ান্ত সম্মিলন ঘটেছিল। তিনি মানুষ ছিলেন বটে তবে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে ওহি আসতো। এ সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাদের মতো মানুষ ভিন্ন অন্য কিছু নই। তবে আমার প্রতি অহি নাজিল হয়।’ মহানবী (সা.) সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোনো প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের পিতা নন। তিনি রাসূল ও শেষ নবী।’ -সূরা আহজাব: ৪০
একজন রাসূল হিসেবে মুহাম্মদ (সা.)-এর দায়িত্ব ছিল মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করা, সতর্ক করা ও সুসংবাদ দেওয়া। এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী, আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে আর আল্লাহর অনুমতিক্রমে তার দিকে আহবানকারীরূপে এবং প্রদীপ্তরূপে।’ -সূরা আহজাব: ৪৫-৪৬
নবী মুহাম্মদ (সা.) ইন্তিকাল করলেও বিশ্ব ইতিহাসে তিনি অমর হয়ে আছেন। সততা, ধৈর্য, সহনশীলতা ও ন্যায়পরায়ণতাসহ সব সদগুণাবলীর সমন্বয় ঘটেছিল মহানবী (সা.)-এর জীবনে। লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষসহ মানবিক কোনো দুর্বলতা স্পর্শ করেনি তাকে। সারাজীবন কাটিয়েছেন সত্য ও ন্যায়ের পথে। অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে লড়েছেন তিনি কঠিন বিপদ আর প্রতিকূল পরিস্থিতিতে।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চরিত্র মাহাত্ম্যের অত্যুজ্জ্বল আলোকমালায় উদ্ভাসিত হয়েছিল আরববিশ্ব তথা সারাজাহান। তাই তো হজরত মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীতে সংস্কারক, সফল রাষ্ট্রপ্রধান, প্রথম সংবিধান প্রণেতা শ্রেষ্ঠ মহামানব ও মানবতার মুক্তির জন্য আজীবন কঠোর সংগ্রামকারী প্রভৃতি সকল দিক দিয়ে তিনি সবারর জন্যই মডেল। বিশ্বে যারা রাসূল (সা.)-এর রেখে যাওয়া আদর্শ ও শিক্ষা অনুযায়ী বিভিন্ন গবেষণা কাজ করেছেন অথবা জীবনকে পরিচালিত করেছেন তাদের সবাই জীবনে সফল হয়েছেন।
ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশ্ব শান্তির আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে বিদায় হজে দ্বীন তথা জীবন ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গতার ঘোষণা দিয়ে গেছেন। সুতরাং জীবন ব্যবস্থাকে পূর্ণাঙ্গ ঘোষণা দেওয়ার পর নতুন করে কোনো জীবন পদ্ধতি অবলম্বন করার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু এ কথা ভুলে মুসলমানসহ মানবজাতি রাসূলের জীবনাদর্শ থেকে বিমুখ হয়ে নতুন পদ্ধতির দিকে ঝুঁকে পড়ায় বিশ্ব অশান্তির দাবানলে জ্বলছে।
নবী মুহাম্মদ (সা.) জীবনের সকল দিক ও বিভাগে অনুসরণযোগ্য আদর্শ রেখে গেছেন। তার আদর্শের মধ্যেই নেতা, কর্মী, শাসক, শাসিত সকলের জন্য পথের দিশা। তথা হেদায়েতের আলো রয়েছে। রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, কূটনীতি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। অতএব তার জীবনাদর্শ অনুসরণের মাধ্যমেই কেবল শান্তিময় বিশ্ব প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
মুহাম্মদ (সা.) তার ওপর অর্পিত সকল দায়িত্ব পালন করে অসভ্য বর্বর জাতি ও সমাজে একটি শান্তিময় ইসলামি রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রমাণ করে দিয়েছেন একমাত্র আল্লাহর দেওয়া বিধান ছাড়া মানব রচিত অন্য কোনো বিধানে শান্তি ও কল্যাণ নেই। আজও যদি আমরা রাসূলের প্রতিষ্ঠিত সেই রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারি এবং আল্লাহর দেওয়া বিধান মেনে চলতে পারি তাহলে অশান্ত ও অস্থির বিশ্বে আবার শান্তি ও সুষম সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।