ডেস্ক রিপোর্ট : ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য ভারত সরকার প্রস্তাবিত আইনটিকে ভারতের আন্তর্জাতিক আইনী বাধ্যবাধকতার লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
বুধবার নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, গত ৯ ডিসেম্বর ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে বিলটি পাস হয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকার এ বলে তাদের পক্ষ অবলম্বন করছে যে, প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ধর্মীয় নির্যাতন থেকে পালিয়ে যেসব সংখ্যালঘু ভারতে গিয়েছেন প্রস্তাবিত আইন তাদেরকে নাগরিকত্ব দেবে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষি গাঙ্গুলি বলেছেন, এই বিলে শরণার্থী এবং অভয় আশ্রয়ের মতো ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বৈষম্য করা হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
এই বিলে আরও অনেক বিষয় আছে, যা শুধু বিজেপি সরকারের নীতি। এসব নীতি মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের সুবিধা দেয়। যেমন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায় জড়িত থাকা দলীয় সমর্থকদের বিরুদ্ধে যথাযথ বিচার করতে ব্যর্থতা। এ ছাড়া জীবন ও নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা মুসলিমদেরকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে সরকার।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ লিখেছে, মুসলিম অভিবাসী এবং আশ্রয় প্রার্থীদের খাটো করে দেখছেন বিজেপির রাজনীতিকরা। তারা রাজনৈতিক সমর্থন আদায়ের জন্য এসব মানুষকে অনুপ্রবেশকারী আখ্যায়িত করেছেন।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে এক নির্বাচনী র্যালিতে বর্তমানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অবৈধ অভিবাসীদের উইপোকা বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ‘তারা খাবার খেয়ে ফেলছে, যে খাবার আমাদের গরিবদের কাছে যাওয়া উচিত ছিল এবং তারা আমাদের কাজ নিয়ে নিচ্ছে। তারা আমাদের দেশে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে এবং তাতে বহু মানুষ মারা যাচ্ছেন’।
বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মুসলিম অভিবাসীদের কথা উল্লেখ করে তিনি এসব বলেন।
অমিত শাহ প্রতিশ্রুতি দেন ‘২০১৯ সালে যদি আমরা ক্ষমতায় আসি তাহলে এসব মানুষের প্রতিজনকে খুঁজে খুঁজে বের করব এবং তাদেরকে বের করে দেব। তাদের বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপে কোনো দেশপ্রেমিকের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয়।’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরও বলেছে, জানুয়ারিতে বিরোধী দলীয় বেশ কিছু এমপি পার্লামেন্টারি যৌথ কমিটির অংশ হিসেবে বিলটি পর্যালোচনা করে। তারা এরপরে বলেন যে, এই বিলটি ভারতীয় সংবিধানের ১৪ এবং ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে, যেখানে সবার সমান অধিকার এবং কারো প্রতি বৈষম্য নয় বলে গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে।
মীনাক্ষি গাঙ্গুলি বলেছেন, নাগরিকত্ব পাওয়ার সমান ও মৌলিক অধিকার থেকে লাখ লাখ মুসলিমকে বঞ্চিত করার আইনগত ক্ষেত্র তৈরি করছে ভারত সরকার।
তিনি বলেন, আইন পাস করে কে কোন ধর্মের তার তোয়াক্কা না করে শরণার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করা উচিত সরকারের।
J/N