নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে, শান্তিপূর্ণভাবে নারায়ণগঞ্জে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। ’
বৃহস্পতিবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে নাসিকের নবনির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি অভিনন্দন জানাই বাংলাদেশের, বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের সব মানুষকে। আমি মনে করি নাসিক নির্বাচন একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। ’
নাসিক নির্বাচনে ‘গণতন্ত্রের জয় হয়েছে’ উল্লেখ করে সেখানকার জনগণ, নির্বাচনে দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তা, আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টকে সবাইকে ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘সবাইকে ধন্যবাদ যে একটা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আপনারা বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। জনগণ তার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে। তাদের মনমতো প্রার্থী নির্বাচিত করতে পেরেছে। এই যে একটা সুযোগ বাংলাদেশের মানুষ পেল। ’
সরকার প্রধান বলেন, ‘এই নারায়ণগঞ্জে একটা বিরাট দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো। যদিও আমাদের বিরোধী দল অনেক অপপ্রচার চালায়। কিন্তু তারা কখনো আয়নায় নিজের চেহারা দেখে না। ’
আগে দেশে নির্বাচনের নামে প্রহসন হতো মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনার ২১ বছর পর ‘৯৬ সালে সরকার গঠন করি। এর আগে মিলিটারি ডিকটেটর যারা ছিল বা খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় ছিলেন, এ দেশে নির্বাচনের নামে প্রহসন হতো। জিয়াউর রহমানের সেই ‘৭৭ সালের হ্যাঁ-না ভোট, ‘৭৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ‘৬৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বা ‘৮১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রত্যেকটাই ছিল প্রহসন। ’
‘মানুষের কোনো ভোটের অধিকার ছিল না। বাক্স এমনিই ভরে যেতো। ভোট আর জনগণের দেওয়া লাগতো না। ভোট তারা নিজেরাই নিয়ে নিতো। ঠিক একইভাবে ‘৮৬ সালে ৪৮ ঘণ্টায় নির্বাচনের ফল পাল্টে দিয়েছিলেন জেনারেল এরশাদ। ’
খালেদা জিয়ার আমলের নির্বাচনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এক নির্বাচন করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। যে নির্বাচনে কোনো জনগণ ভোট দেয়নি। সেই জনগণের ভোট চুরি করে তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসেছি বলে দাবি করেছিল। গণ আন্দোলন হয়, আন্দোলনের মুখে ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হন। ১২ জুন আবার নির্বাচন হয়, সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ’
জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস নিয়েই আওয়ামী লীগ ক্ষমতা আছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা মহাজোট করেছিলাম।
আমরা তাদের নিয়ে বিপুল ভোটে জয় লাভ করি। তারপর থেকে আল্লাহর রহমতে আমরা এ পর্যন্ত সরকারে আছি। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস নিয়েই আমরা সরকারে আছি। বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে এ দেশে টানা ১৩ বছর গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জবাসী নৌকা মার্কায় আমাদের প্রার্থী আইভীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছে। আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলের কাউন্সিলর যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদেরও আমি আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। ’
জনপ্রতিনিধিদের জনকল্যাণে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘একটি কথা মনে রাখতে হবে, জনগণ ভোট দিয়েছে, আস্থা রেখেছে, বিশ্বাস রেখেছে, জনগণের সেই আস্থা-বিশ্বাসকে মূল্যায়ন করতে হবে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশে অর্থাৎ এই ভুখণ্ডে শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই অঞ্চলের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য। ’
বৃহস্পতিবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে টানা তৃতীয় বার মেয়র হিসেবে শপথ নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নবনির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। একই অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত কাউন্সিলররাও শপথ নেন।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে নবনির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কাউন্সিলরদের শপথ বাক্য পাঠ করান স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
গত ১৬ জানুয়ারির নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন সেলিনা হায়াৎ আইভী। ২০১১ এবং ২০১৬ সালের নির্বাচনেও মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
এবারের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী এক লাখ ৫৯ হাজার ৯৭টি ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকার হাতি প্রতীকে পান ৯২ হাজার ৫৬২ ভোট।
ban/N