জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ চলছে এসএসসি পরীক্ষা। আগামী ২ ডিসেম্বর এইচএসসি পরীক্ষা। এরই মধ্যে নীলফামারী পৌরসভার নির্বাচন ২৮ নভেম্বর। ওই নির্বাচন ঘিরে চলছে প্রচারণায় ঘনঘটায়। গোটা শহরজুড়ে দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলছিল তিন মেয়র ও ৮৩ কাউন্সিলরসহ মোট ৮৫ প্রার্থীর মাইকে প্রচারণা। আর সেই প্রচারণার শব্দে লেখাপড়া নিয়ে বিপর্যস্ত পরীক্ষার্থীরা। এ নিয়ে অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীরা প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীদের কাছে প্রচার প্রচারনা সীমিত করার আহবান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।
যা এলাকায় ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের এমন সমস্যা সমাধানে আজ থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত মাইকে প্রচারণা সীমিত করলেন প্রার্থীরা। তারা ২২ নভেম্বর পর্যন্ত দুপুর দুইটা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মাইকে প্রচারণা চালাবেন।
প্রচারণার মাইকিং সীমিত করার উদ্যোগটি নেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ওয়াদুদ রহমান। তিনি বলেন, কয়েকজন পরীক্ষার্থীর অভিভাবক সমস্যার কথা জানান আমাকে। সেটির গুরুত্ব বিবেচনায় মতামতের জন্য ফেসবুকে শেয়ার করলে ব্যাপক সাড়া পাই। এর পর ব্যক্তিগতভাবে তিন মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রচারণা সীমিত করার পক্ষে সাড়া পাই। এতে কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীও একমত হন।
বিষয়টি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে জানানো হলে তিনিও প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে একমত পোষণ করেন। এরপর আজ সচেতন নাগরিক কমিটির পক্ষে শহরে মাইকিং করে প্রার্থীদের সিদ্ধান্তের বিষয়টি সকলকে জানিয়ে দেওয়া হয়।
পৌরসভাটির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ বলেন, আমরা মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করি। এখন আমাদের বাচ্চাদের পরীক্ষা চলছে। সে ক্ষেত্রে আমরা তিন ঘণ্টা কম প্রচারণা চালালে যদি তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জল হয়, তবে আমরা সেটা মানবো না কেন ? আমি ওই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছি।
অপরদিকে কম্পিউটার প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. জহুরুল আলম বলেন, আগে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম , তাদের মঙ্গলের জন্য আমাদের এটা করতে হবে। আমাকে প্রস্তাব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানিয়েছি।
স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী নারিকেল গাছ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নূরুজ্জামান বুলেট বলেন, আমাদের বাচ্চাদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় নিয়ে রাজনীতি করতে হবে। এসএসসি পরীক্ষার কারণে তিন ঘণ্টা মাইকিং সীমিত করার বিষয়ে আমাকে প্রস্তাব দেওয়া হলে আমি ওই প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই।
একই ভাবে উদ্যোগটির প্রশংসা করেছেন কাউন্সিল প্রার্থীরা। তাদের মধ্যে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী শিরিন নূর রিক্তা বলেন, আমরা মানুষের সেবায় নিজেকে নিবেদিত করেছি। সেখানে আমাদের সন্তানদের কোন সমস্যা হবে সেটা মেনে নেওয়া সম্ভব না। একারণে আমরা মাইকিং সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
অপর কাউন্সিলর প্রার্থী মীর মোস্তফা আবু হোসেন বলেন, সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এখন পর্যন্ত ওই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা কেউ করেননি।
এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন জেলা শহরের বিশিষ্ট জনেরা। তাঁদের মধ্যে মশিউর রহমান ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রিয় সহ সভাপতি মো. সারওয়ার মানিক বলেন, উদ্যোগটি প্রশংসনীয়, শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে আমি উদ্যোক্তা এবং প্রার্থীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এটা নির্বাচন কমিশনের কোনো সিদ্ধান্ত না। পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে প্রার্থীরা নিজেরাই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটি একটি শুভ উদ্যোগ বলে আমি মনে করি। ২৮ নভেম্বর পৌরসভাটির ওই নির্বাচনে মেয়র পদে তিন জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৬০ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ২২ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছে।