উজ্জ্বল রায়, নড়াইল থেকে: নড়াইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরানোর ঘটনায় অন্যতম আসামী রহমতউল্লাহ ওরফে রনী বিশ্বাস (২২) কে গ্রেফতার করেছে নড়াইল জেলা পুলিশ। বুধবার (২৯ জুন) রাতে খুলনা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত রনী বিশ্বাস সদর উপজেলা রুখালী গ্রামের জাবের বিশ্বাস এর ছেলে।
বুধবার রাতে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন, নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় (পিপিএম বার)। পুলিশ সুপার বলেন, অন্য আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যহত রয়েছে। এ নিয়ে মোট ৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এছাড়া নড়াইলে কলেজ শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস কে জুতার মালা পরানোর ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ৩ জনকে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ। আদালত আগামী ৩ জুলাই শুনানীর দিন ধার্য্য করেছেন। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নড়াইল সদর থানার ওসি (তদন্ত) মাহামুদুর রহমান বলেন, বুধবার আসামীদের নড়াইল সদর আমলী আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত আগামী ৩ জুলাই শুনানীর দিন ধার্য্য করেন। এঘটনায় অন্য আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে। এদিকে নড়াইলে কলেজ শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস কে জুতার মালা পরানোর ঘটনায় দীর্ঘ ১০ দিন পর পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। সদর থানাধীন মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোরসালিন বাদী হয়ে গত ২৭ জুন ১৭০ থেকে ১৮০ জন আজ্ঞাতনামাদের আসামী করে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
উল্লেখ্য, নড়াইল মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায় নিজের ফেসবুক আইডিতে নূপুর শর্মার ছবি ব্যবহার করে লেখেন-প্রণাম নিও বস ‘নূপুর শর্মা’ জয় শ্রীরাম। এ পোস্ট দেয়ার পর গত ১৮ জুন সকালে কলেজে আসেন রাহুল। এরপর তার বন্ধুরা পোস্টটি মুছে ফেলতে বললেও পোস্ট মুছেননি রাহুল। পরে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জানান। এক পর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজের সব শিক্ষকদের পরামর্শে রাহুলকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে কলেজ চত্বরে থাকা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জসহ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোঁড়ে। ঘটনার সময় অন্তত ১০ জন ছাত্র-জনতা আহত হন।
অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ এনে বিক্ষুদ্ধ জনতা ঘটনার দিন ১৮ জুন বিকেলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং শিক্ষার্থী রাহুল দেব রায়কে গলায় জুতারমালা পরিয়ে প্রতিবাদ জানান। পরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।