ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা অভিযোগ এনে নায়িকা পরীমনির করা মামলার দীর্ঘ ২ মাস ২৩ দিন পর নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।

সোমবার (০৬ সেপ্টেম্বর) রাতে চার্জশিট দাখিলের বিষয়ে নিশ্চিত করেন সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম।

এর আগে, বিকেলে সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিটে বলা হয়, মামলায় এজাহারনামীয় প্রধান আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও মামলায় তদন্তে আসা ৩ নম্বর আসামি শাহ শহিদুল আলম অভিযোগকারী পরিমনিকে গালাগালি করে অশ্লীল আচরণ করেন। এরপর তাকে মারধর করে বিভিন্ন প্রকার হুমকি দিয়ে শ্লীলতাহানি করা হয়। এছাড়া মামলার দ্বিতীয় আসামি তুহিন সিদ্দিকী অমি, পরিমনিকে কৌশলে বোটক্লাবে নিয়ে যায় নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও শাহ শহিদুল আলম। পরে তাকে অশ্লীল কথা বলে শরীরে স্পর্শ করে। এতে মামলার বাদী পরিমনি ক্ষিপ্ত হলে তাকে মারধর করে বিভিন্ন প্রকার হুমকি দেওয়ার দায়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অপরাধ প্রতীয়মান হয় বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়।

আদালত সূত্রে জানা যায়, চার্জশিটভুক্ত অপর আসামি শাহ শহিদুল আলম পলাতক। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে। এই মামলায় গত ২৯ জুন জামিন পান ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমি।  

গত ১৪ জুন দুপুরে রাজধানীর উত্তরা-১ নম্বর সেক্টরের-১২ নম্বর রোডের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে বিদেশি মদ জব্দ করা হয়। এরপর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে বিমানবন্দর থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়।  

ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গত ১৪ জুন বেলা ১২টার দিকে সাভার থানায় নাসির উদ্দিনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন পরীমনি। এতে নাসির উদ্দিন ও তার বন্ধু অমির নাম উল্লেখ করে আরও চারজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

বাদীর এজাহারে বলা হয়, গত ৮ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বনানীর বাসা থেকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি, অমি ও বনিসহ দুটি গাড়িতে উত্তরার দিকে যান। পথিমধ্যে অমি জানান- বেড়িবাঁধে ঢাকা বোট ক্লাব লিমিটেডে তার ২ মিনিটের কাজ আছে। অমির কথামতো আমরা ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে গাড়ি দাঁড় করাই। কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়। তখন অমি ভেতরে যায় এবং অমি অনুরোধ করে এখানের পরিবেশ অনেক সুন্দর, তোমরা নামলে নামতে পারো।  

ওই সময় আমার ছোট বোন বনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিলে আমরা ঢাকা বোট ক্লাবে প্রবেশ করে বারের কাছের টয়লেট ব্যবহার করি। টয়লেট হতে বের হতেই ১ নম্বর বিবাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাদের ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ নাসির আসামি মদ্যপান করার জন্য জোর করেন। আমি মদ্যপান করতে না চাইলে নাসির জোর করে আমার মুখের মধ্যে মদের বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এতে আমার সামনের দাঁতে ও ঠোঁটে আঘাত পাই। তখন নাসির আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করেন ও আমাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। নাসির উত্তেজিত হয়ে টেবিলে রাখা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে আমার গায়ে ছুঁড়ে মারেন। তখন আমার কস্টিউম ডিজাইনার জিমি নাসিরকে বাধা দিতে চাইলে তাকেও মারধর করে জখম করে। তখন আমি প্রথমে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিতে গেলে আমার ফোনটি টান মেরে ফেলে দেন। ’

ban/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে