ডেস্ক রিপোর্ট : পাটের আঁশ ছড়ানোর কাজের মাধ্যমে জেলায় নারী কৃষি শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের পরিধি বেড়েছে। সোনালী পাটে কর্মসংস্থান সৃষ্টির হওয়ায় অনেকটাই সুদিন এসেছে তাদের ঘরে।
এবারে পাটের আবাদ বেশী হওয়ায় জেলার বিভিন্ন জলাশয়ে পাট পঁচানো ও আঁশ ছড়ানোর দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। পাট পঁচানোর এসব জলাশয়ের ধারে দল বেঁধে বসে সোনালী আঁশ ছড়াতে দেখা গেছে নারী শ্রমিকদের। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা সদরের চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের দক্ষিণ চওড়া গ্রামে ২৭ নারী শ্রমিককে জলাধারে উঁচু স্থানে এক সারিতে বসে দেখা গেছে পাটের আঁশ ছড়াতে। এসময় একজন পুরুষ জলাশয়ের কোমর পরিমাণ পানিতে নেমে দিচ্ছিলেন পঁচানো পাটের আশ ছড়ানোর কাজে যোগান।
এ গ্রামের নারী শ্রমিক বিমলা বালা রায় (৫০) বলেন, ‘মোর সওয়ামী (স্বামী) কাম (কাজ) করি সংসার চালায়। সেইলা দিয়া বাড়ির ৫টা মানষির সংসার ভালো চলে না। এই জন্য দু’জনে কাম করি কামাই (আয়) করাতে সংসার এলা ভালো চলেছে।’
তিনি জানান, শুকনা মৌসুমে স্বামীর সাথে কৃষির বিভিন্ন জমিতে শ্রমিকের কাজ করতেন। বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে পানিতে নেমে জমিতে ধানের চারা লাগানোর কাজে নারী শ্রমিকদের কিছুটা সমস্যা হয়। এ কারণে ডাঙ্গায় বসে পাটের আঁশ ছড়ানোর কাজ বেছে নিয়েছেন। একাজে প্রতিদিন আয় হয় আড়াই থেকে তিনশ’ টাকা।
অপর নারী শ্রমিক নির্মলা রাণী রায় (৫৫) জানান, যে যত বেশী কাজ করবে তার ততো বেশী আয় হবে। এ কাজে পাটের প্রতিটি আটির আঁশ ছড়ানোর জন্য দেড় টাকা করে মজুরী পাচ্ছেন তারা। কাজটি এভাবে করায় সংসারের রান্নার কাজ সেরে এ কাজে নামেন নারীরা। এজন্য একটু আয় কম হলেও একসাথে দুটো দিক সামলাতে পারছেন তারা।
গ্রামের খুন্তিবালা (৪৮) বলেন, ‘মোর স্বামী প্রতিবন্ধী। বাড়িত তিন মেয়ে, দুই ছেলে আছে, কৃষি কামোত মজুরী করি সংসার চালাও মুই। বর্ষাত হামার মহিলা মাইষিক জমির কামোত নেয় না গৃহস্থ। এইজন্য প্রত্যক বছর এই সময়োত সংসার চাইতে কষ্ট হয়। এইবার পাটার (পাট) আবাদ বেশী হওয়ায় পাটা ধোয়া কামের অভাব হচ্ছে না।’
তিনি আরো জানান, পাটের আবাদ বেশীর কারণে নারী শ্রমিকদের কাজ মিলছে গ্রামে। একারণে এবারে স্বাচ্ছন্দে সংসার চলছে নারী শ্রমিকদের।
ওই গ্রামের কৃষক দীনেশ চন্দ্র রায় (৫০) এবারে পাটের আবাদ করেছেন ৫ বিঘা জমিতে। তিনি বলেন,‘পাট ধোয়ার (পাটের আঁশ ছড়ানো) এই সময়োত জমিত রোয়া (আমন চারা) লাগানোর কাজ চলছে। একারণে পুরুষ শ্রমিকরা আঁশ ছড়ানোর কাজে আগ্রহী হচ্ছেন না। অপরদিকে জমির পানিতে নেমে আমন চারা রোপনে নারী শ্রমিকদের সমস্যা হওয়ায় তারা পাটের আঁশ ছড়ানো কাজে আগ্রহী হচ্ছে। তাই নারী শ্রমিক দিয়ে কাজ করাচ্ছি।’ নারী শ্রমিকরা একাজে এগিয়ে না আসলে শ্রমিক সংকটে পাট নষ্ট হতো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরো জানান, প্রতি আটি পাটের আঁশ ছড়ানোর কাজের জন্য দেড় টাকা করে মজুরী দেওয়া হচ্ছে। আবার অনেকে আঁশ ছড়িয়ে পাটখড়ি নেওয়ার চুক্তিতে কাজ করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, জেলার ছয় উপজেলায় এ বছর দেশী ও তোষা জাতের পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ৮৪৫ বেল (প্রতি বেল ৫ মণ)।
সেখানে ওই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে পাটের আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদনের ওই লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাবে।
গড়ে দেশী জাতের পাট প্রতি হেক্টরে প্রায় ১০ বেল এবং তোষা জাতের পাট প্রতি হেক্টরে ১১ বেল উৎপাদন হয় বলে জানায় ওই সূত্র।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ ইদ্রিস জানান, গত বছর বাজারে প্রতিমণ পাট ১ হাজার ৮শ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি করতে পেরেছে কৃষক। এবারে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আবাদ ভালো হয়েছে। সে হিসেবে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। বাজারে দাম বেশী পাওয়ায় অন্য ফসলের চেয়ে পাট চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। এতে জেলায় নারী-পুরুষ কৃষি শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের পরিধি প্রসারিত হচ্ছে।
বি/এস/এস/এন