জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ পৌর মেয়রের হস্তক্ষেপে পূর্বের অসমাপ্ত একটি রাস্তা সংষ্কারকে কেন্দ্র করে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একটি পরিবার রাস্তার জন্য জোরপূর্বক অতিরিক্ত জমি দখলের অভিযোগ তুলেছে। অন্যদিকে প্রায় অর্ধ শতাধিক পরিবার মেয়রের একাজকে সাধুবাদ জানিয়েছে। এনিয়ে শহরজুড়ে তুমুল আলোচনা চলছে।
জানা যায়, রবিবার (৩০ অক্টোবর) সকালে নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের ক্যান্টবাজার সংলগ্ন খাটিয়া মহল্লায় পৌর মেয়র রাফিকা আকতার জাহান পূর্বের অর্ধসমাপ্ত একটি রাস্তার সংষ্কার কাজ উদ্বােধন করেন। এসময় তাঁর সাথে ছিলেন পরিষদের সকল কাউন্সিলর, কর্মকর্তা কর্মচারী, এলাকাবাসী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
এব্যাপারে সাবেক সেনা সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম এস এ খানের স্ত্রী লায়লা বেগম, মেয়ে শাহনাজ বেগম শিল্পী ও ছেলের বউ পারুল বেগম বলেন, আমরা রাস্তার জন্য জমি দিতে অসম্মত নই। কিন্তু আগে আমাদের ১২ শতক জমি বুঝিয়ে দিন। শহিদ মিয়া জাতীয় পার্টির নেতা হওয়ায় সেই দাপটে অতিরিক্ত জমি দখল করে রেখেছে। ফলে রাস্তায় জায়গা দিলে আমাদের অংশ কমে যাচ্ছে। সেটা কেন করা হচ্ছে? এই অন্যায়ের বিচার চাই।
তাছাড়া কোন রকম নোটিশ না দিয়েই হঠাৎ করে মেয়র দলবল নিয়ে এসে একেবারে সন্ত্রাসী কায়দায় আমাদেরকে একপ্রকার অবরুদ্ধ করে জোরপূর্বক রাস্তা তৈরী করলো কেন? মেয়রের লোকজন ধুম ধারাক্কা আমাদের গাছ কেটে সাবার করেছে। প্রতিবাদ করায় মোমিনুল নামে আমাদের একজনকে ইট দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে। এগুলো কি ধরণের কাজ? অর্থের বিনিময়ে জান্নাতুল কবির ও আমানুল্লাহ মেয়রকে দিয়ে এই কাজ করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা।
অন্যদিকে এলাকার বাসিন্দা সঙ্গীত শিল্পী ও কার মাইক্রোবাস ব্যবসায়ী জান্নাতুল ইসলাম কবির, সাবেক রেলওয়ে চাকুরীজীবী আমানুল্লাহ খান, মশিউর রহমান বলেন, এলাকায় বেশ কয়েকটি বহুতল ভবনসহ অর্ধ শতাধিক বাড়িতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ টি পরিবারের বসবাস। বাড়িঘর সব পাকা হলেও রাস্তা কাঁচা তথা মাটির হওয়ায় যাতায়াতে ৫ শতাধিক মানুষকে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল।
সাবেক মেয়র মরহুম আখতার হোসেন বাদল রাস্তাটি সংষ্কারে উদ্যোগী হয়ে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। কিন্তু কাজ শুরু করে যেতে পারেননি। পরে সাবেক এমপি মরহুম অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন সরকার মেয়র হলে জনস্বার্থ বিবেচনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টেন্ডার দেন। কিন্তু রাস্তার পূর্বমুখে এস এ খানের পরিবার জায়গা ছেড়ে না দেয়ায় প্রায় ১০০ ফুট রাস্তার কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই ঠিকাদার চলে যায়। এতে রাস্তা তৈরী হলেও প্রবেশমুখ সংকীর্ণ ও কাঁচাই থাকায় সুবিধা বঞ্চিত থাকলো এলাকাবাসী।
রাস্তার জায়গাটুকু কিনে নিতে চাইলেও তারা দিতে রাজি হয়নি। এমনকি মেয়র আমজাদ স্বয়ং উপস্থিত হয়ে রাস্তার জন্য জমি দেয়ার অনুরোধ জানালেও তাঁর কথা মানেনি। বরং ওই পরিবারের মহিলারা রাস্তায় বের হয়ে অশ্লীল গালিগালাজ করাসহ উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে। এমনকি বড় মেয়ে শিল্পী লোকজনের সামনেই নিজের জামা ছিড়ে ফেলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এতে মেয়র বিড়ম্বনায় পড়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
অথচ ক্যান্টনমেন্ট সড়কের সাথে সরকারী খাস (পরিত্যক্ত) ৫৪ শতক জমি জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে লিজ নিয়ে ৪ টি পরিবার বসবাস করছেন। এরমধ্যে বেলাল ও দুলাল আমাদের রাস্তার উত্তরপাশের ১২ শতক করে ২৪ শতক নিলাম প্রক্রিয়ায় দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে কিনে নিয়েছেন। বাকি ৩০ শতক শহিদ মিয়া ও মৃত এস এ খানের দখলে। কিন্তু তাদেরও মাত্র ১২ শতক করেই লিজ নেয়া।
অতিরিক্ত জমি দখলে রাখায় তাদের দলিল সম্পাদন আজও হয়নি। একারণে জেলা প্রশাসনের কাছে রাস্তার জন্য জমি বরাদ্দের আবেদন করি আমরা। এতে দুই শতক জমি বরাদ্দ পাই। এরফলে পূর্বের ওই ঘটনার জের ধরে জমি দখল, শ্লীলতাহানীর মামলা করে শিল্পীর মা দেলোয়ারা বেগম লায়লা। মামলায় জেলা প্রশাসক, ইউএনও, এসিল্যান্ড, মেয়র, কাউন্সিলরসহ এলাকাবাসীকেও আসামী করে।
সেই মামলায় তারা তিন বার আপিল করেও হেরে যায়। বার বার আমরাই রায় পাই। সম্প্রতি বর্তমান মেয়র রাফিকা আখতার জাহান বিষয়টি জানতে পেরে তাঁর প্রয়াত স্বামী আখতার হোসেন বাদলের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে উদ্যোগ নেন। রবিবার তিনি পরিষদের সকলকে নিয়ে উপস্থিত হয়ে রাস্তার কাজ শুরু করেন। তাঁর বদান্যতায় আজ আমরা দীর্ঘ ২০ বছরের জটিলতা ও ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেলাম বলে মন্তব্য করেন শতাধিক নারী।
এব্যাপারে মেয়র রাফিকা আখতার জাহান বলেন, পাঁচ শতাধিক মানুষ দীর্ঘ দিন থেকে রাস্তার জন্য কষ্ট করছে। মাত্র একটা পরিবারের অহেতুক হটকারীতার কারণে এটা হতে পারেনা। জনপ্রতিনিধি হিসেবে অধিকাংশ জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে আদালতের রায়ের আলোকে কাজটি করেছি। এমন জনহিতকর কাজের জন্যই লোকজন আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। এটাই আমার দায়িত্ব। সেই দায়িত্বই পালন করেছি।