আসাদ হোসেন রিফাতঃ লালমনিরহাট জেলায় বালু খেকোরা অনেক বেশি ‘বেপরোয়া’ হয়ে উঠেছে। জেলা সদর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও একই অবস্থা। জেলার ৫টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নদী, খাল-বিল ও ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন ও ট্রাকটর দিয়ে বালু উত্তোলন করছে তারা। এরপর ট্রাকে করে এসব বালু বিক্রি করছে বিভিন্ন স্থানে।
জেলা ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনগুলো একাধিকবার এসবের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বরং প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বালু খেকোরা প্রকাশ্যেই এসব অপকর্ম করে যাচ্ছে।
যদিও স্থানীয় প্রশাসন বলছে, এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান চলমান রয়েছে।
জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার পাটিকাপাড়া ইউনিয়নে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে তিস্তা নদীর বিভিন্ন জায়গা থেকে একের পর এক জন দায়িত্ব নিয়ে ট্রাকটর ও বোমা মেশিন লাগিয়ে বালু উত্তোলন করছে নিয়মিত।
এছাড়া অবাধে নদী ও কৃষিজমি থেকে বালু-মাটি উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ফসলি জমি। অনেক এলাকায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে কৃষিজমি। অনেক সময় ভুক্তভোগীরা বালু উত্তোলন বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও দৌরাত্ম্য কমছে না তাদের।
গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর হাতীবান্ধা উপজেলার পাটিকাপাড়া অংশেই অন্তত ৫-৬টি এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নদীর চরের কৃষিজমিগুলোও ছাড় দিচ্ছে না বালু খেকোরা। অপরিকল্পিতভাবে নদী এবং চরের কৃষি জমিগুলো থেকে বালু উত্তোলনের ফলে তিস্তা নদীর বাম তীরে অবস্থিত গ্রামীন জনপদ আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নিজেদের বাড়ীঘর বিলিন হওয়ার আশংকা করছেন।
সরেজমিনে উপজেলার পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিন পারুলিয়া গিয়ে দেখা গেছে, নদীতে ১১-১২ টি ট্রাকটর লাগিয়ে বালু উত্তোলন করে রাস্তা নির্মানের পাশাপাশি বিক্রিও করছেন। সেখানে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ আমিনুল খানের সাথে কথা হলে তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমরা ওপরের নির্দেশেই এখানে আছি। তিনি এ বালু দিয়ে নদীর পশ্চিম দিকের একটি রাস্তা মেরামত করছেন।
একই এলাকার বাসিন্দা পঞ্চানন বর্মা জানান, যেখান থেকে বালু উত্তোলন করছে জায়গাটি আমার পৈত্রিক সম্পত্তি একাধিকবার বাধাদিলেও আমাদের কোন কথাই শুনেনি বরং আরো বেপরোয়া হয়ে সেখানে গ্রামপুলিশকে পাহারায় বসিয়েছে। প্রশাসন কে জানালেও তারা নিরব।
এবিষয়ে পাটিকাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুল আলম সাদাত বলেন, দক্ষিন পারুলিয়া এলাকার নিজ অর্থায়নে একটি রাস্তা সংস্কারের জন্য নদীর বালু ব্যবহার করছি। আপনারা যদি মানবিক দিকটাকেও অন্যভাবে দেখেন তাহলে বলার কিছু নেই।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজির হোসেন বলেন, প্রতিদিন কোথাও না কোথাও আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। পাটিকাপাড়ার বিষয়টি ও গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, কোথায় বালু উত্তোলন হচ্ছে আমায় লিখে দেন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের কোনো ভাবেই ছাড় দেয়া হবে না বলে জানান তিনি।
ছবি ক্যাপসন :ট্রাকটর ড্রাইভারকে টোকেন বুঝিয়ে দিচ্ছেন গ্রাম পুলিশ আমিনুল