আতিকুর রহমান আতিক, লালপুর প্রতিনিধি: নাটোরের লালপুরে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে আখ সরবরাহ করতে অবৈধ আখ মাড়াইকল জব্দ সাঁড়াশি অভিযানের প্রতিবাদে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে এলাকাবাসী।
শনিবার (১৩ জানুয়ারি ) দুপুরে প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতায় ক্ষতির সম্মুখীন দিলালপুরের ক্ষুদ্র শিল্প (গুড়) ব্যবসায়ীদের উপর অমানবিক নির্যাতনের প্রতিকার চেয়ে উপজেলার দিলালপুর গ্রামে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ওই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শামসুল হক। বক্তব্য রাখেন, আখ মাড়াইকল সমিতির সভাপতি মো. রবিউল ইসলাম, লালপুর গুড় ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষে মো. জিল্লুর রহমান, কৃষকদের পক্ষে মো. আবুল কালাম আজাদ, আড়বাবের হামিদুল ইসলাম, দিলালপুরের নজরুল ইসলাম, মামুন হোসেন, শাহরিয়ার আলম প্রমুখ।
বক্তারা জানান, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) নিবন্ধন ও ট্রাকিং আইডি, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদন, স্থানীয় সরকার কর্তৃক ইউনিয়নের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে তাঁরা ব্যবসা পরিচালনা করছেন। সরকারের ভ্যাট ট্যাক্স পরিশোধ করা সত্ত্বেও কাগজপত্র না দেখে দফায় দফায় প্রশাসনের কর্মকর্তারা সুসজ্জিত বাহিনী নিয়ে গুড় তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়ে ৩০টি আখ মাড়াইকল ও যন্ত্রাংশ জব্দ, চুলা ভাংচুর করেন। এতে কৃষকদের ৪ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন।
মিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে কৃষকেরা বলেন, মিলে আখ সরবরাহ করে ১৮০ টাকা মণ দেওয়া হলেও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। মাড়াইকলে বেশি দামে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা মণ দরে অগ্রিম পরিশোধ করছে।
খাবার গুড় তৈরিতে অনেকে আখ মাড়াই করে থাকেন। তাছাড়া মিল কর্তৃপক্ষ এক মাস দেরিতে মাড়াই শুরু করায় আখ কেটে চৈতালি ফসল করা সম্ভব হয় না। আবার অগ্রিম মিল বন্ধ করে দেওয়ায় মুড়ি (দ্বিতীয় বার) আখ উৎপাদন ব্যাহত হয়। প্রশাসনের দুর্নীতির কারণে মিলের লোকসানের দায় কৃষকদের ওপর চাপিয়ে নির্যাতন, জুলুম ও শোষণের মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।
জানা যায়, চলতি মাসে উপজেলার বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের মোহরকয়া, লালপুর ইউনিয়নের মোমিনপুর, ওয়ালিয়া ইউনিয়নের দিলালপুর-রায়পুর, ঈশ্বরদী ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে জরিমানা, মাড়াইকল জব্দ, ভেজাল গুড় ও সরঞ্জাম ধ্বংস করে প্রশাসন।
এতে নেতৃত্ব দেন, নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরিফুল ইসলাম, বড়াইগ্রাম-লালপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজিব, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ বসাক, লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহা. মোনোয়ারুজ্জামান, নাটোর জেলা ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান তানভীর, মিলের মিলের জিএম (প্রশাসন) মুস্তফা সারোয়ার, মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) মো. আসহাব উদ্দিন প্রমুখ।
মিল সূত্রে জানা যায়, মাঠে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন আখ থাকা সত্ত্বেও মিলে সরবরাহ না পাওয়ায় মাত্র ৫০ কর্মদিবসে মাইকিং করে মাড়াই বন্ধের ঘোষণা দেয় মিল কর্তৃপক্ষ।
৬৫ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা নিয়ে ১ লাখ ৪০ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৯ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে গত ২৫ নভেম্বর চলতি মৌসুমে আখ মাড়াই শুরু হয়।
এ বছর মিল এলাকায় চাষকৃত ১৮ হাজার ১০০ একর জমিতে দুই লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন আখ উৎপাদিত হয়েছে।
চলতি মৌসুমে ৪৬ কর্মদিবসে (৯ জানুয়ারি পর্যন্ত) প্রায় ৭৪ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৩ হাজার ৬৬৩ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করা হয়। চিনি আহরণের হার শতকরা ৫ দশমিক ৩৩ ভাগ। এ বছর মিল এলাকায় ৪০৯টি অবৈধভাবে পাওয়ার ক্রাশারে আখ মাড়াই চলছে।
মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আনিসুল আজম বলেন, চলতি মৌসুমে পর্যাপ্ত আখ উৎপাদনে চাষিদের সার-বীজ দিয়ে সহায়তা দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও আখ সরবরাহ না করায় মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করতে হচ্ছে। এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের কথা ভেবে চাষিরা আগামীতে পর্যাপ্ত আখ মিলে সরবরাহ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।