বিশেষ প্রতিনিধি : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরান। ধানমন্ডি মিরপুর রোডে অবস্থিত ডেভেলপার কোম্পানি মেট্রো হোমসের পান্থপথের একটি প্রকল্পে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে সন্ত্রাসীরা। আর এই সন্ত্রাসীদের নেতৃত্বে রয়েছেন কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরান। এব্যাপারে ২০১৫ সালের ২রা জুলাই মেট্রো হোমস লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর জ্যোৎস্না আরা র্যাব সদর দপ্তরে একটি অভিযোগ করেছেন। ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, পান্থপথের ৯১ নম্বর প্লটে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন তারা। সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরান প্রকল্প থেকে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেয়ায় ইরানের সন্ত্রাসী বাহিনী অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। এব্যাপারে একাধিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে পুলিশ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তৎপর হয়। এতে কাউন্সিলর ইরান খানিকটা নমনীয় হন এবং কোম্পানির দায়িত্বশীল লোকজনের সঙ্গে আপসরফার চেষ্টা করছেন বলে জানা যায়।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানানা এখানের আশে পাশে কোন ভবন তৈরি করতে হলে আগে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরানকে বড় অংকের টাকা দিয়ে ভবনের কাজে হাত দিতে হয়। অন্যথায় ভবন তৈরির চিন্তাও করা যায়না এখানে।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, ইন্দিরা রোডের মাহবুব প্লাজা ভবনটি প্রায় পুরোটাই ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরান জোর করে দখল করে আছে। ওই ভবনটির মালিক অনেক চেষ্টা করেও যখন তার ভবনটি ফিরে পায়নি পরে অনেকটা বিনা চিকিৎসায় মারাজান তিনি।
ইন্দিরা রোডের অন্য একটি ভবন গ্লোব সেন্টার সেখানের কয়েকটা দোকানও ইরান তার লোক চুন্নুর মাধ্যমে দখল করে করে রেখেছেন। ওই দোকানগুলোর মালিক দোকান তার দোকানগুলো দখল মুক্ত করার জন্য অনেকবার ইরানের কাছে গেলেও ইরান দোকানগুলো মালিককে ফেরৎ দেয়নি।
শুধু তাই নয়, কাউন্সিলর ইরানকে নিয়ে করা ২০১৫ সালের ১৪ মে প্রথম আলোতে প্রকাশিত নিউজে জানাযায় ইরানের শাশুড়ি তার দোকানের পজেশন বিক্রি করে টাকা নিয়েছেন, কিন্তু ইরান তার ক্ষমতা দেখিয়ে দোকানও নিয়ে গেছেন ক্রেতা থেকে। খবরটি তখন ব্যাপক আলোচনায় আসলে কিছুদিন নিরব থাকেন ইরান। এরপর আবার নিজের রূপে ফিরে আসেন তিনি।
ফার্মগেটের লেগুনা চলতে হলে প্রতিদিন ইরানকে প্রায় প্রায় ২ লাখ টাকা চাদা দিতে হয় বলে জানান লেগুনার এক ড্রাইবার। লেগুনার ড্রাইবার আলমগির বলেন, ‘এই যে দেখেন না কিছুদিন আগে ডিএমপি কমিশনার ঘোষনা দিয়েছেন ঢাকায় লেগুনা চলবেনা। পরে ইরান ভাই উপরে আলোচনা করে আবার আমাদের গাড়ি চলানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, কারন এখান থেকে আমরা প্রায় ২ লাখ টাকা প্রতিদিন আমরা ইরান ভাইকে দিই’।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতা জানান, ‘ইরানের কাছে আওয়ামীলীগের লোকদের কোন যায়গা নাই, তিনি শুধুমাত্র ক্যাডার টাইপের লোকদের মাধ্যমে তার সম্রাজ্যের রাজত্ব করতে চান। তার সাথে বেশিরভাগ লোকই এক সময় বিনপির ক্যাডার ছিলো’।
স্থানীয় সরেজমিন দেখা যায়, ফার্মগেটের সেজান পয়েন্ট থেকে শুরু করে পুরো ইন্দিরা রোডের ফুটপাতে তিনস্তরে দোকান বসানো আছে। পাঁচ শতাধিক দোকান। জুতা, নারী-পুরুষ ও শিশুদের পোশাক, খেলনা, ঘরের আসবাবপত্র, কাঁচাবাজারসহ সবই পাওয়া যায় সেখানে। ঢাকার অনেক এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও ইন্দিরা রোডে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়নি। কারন এখানকার নিয়ন্ত্রন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরান।
গেঞ্জি বিক্রেতা সোলাইমান জানান, তিনি প্রতিদিন ৮০ টাকা করে চাঁদা দেন। জসিম নামে এক লাইনম্যান তার কাছ থেকে দুপুরের পর চাঁদার টাকা নিয়ে যায়। ফুট ওভারব্রিজের ওপর সব হকারের কাছ থেকে জসিম চাঁদা তোলে। সোলাইমান জানান, আগে চাঁদা দিতেন ৫০ টাকা। তবে সিটি কর্পোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানের পর ৩০ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করে দিতে হয়। আর এই চাদার বেশিরবাগ অংশই যায় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরানের পকেটে।
ফার্মগেট এলাকার কয়েকজন ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুর রহমান খান ইরান। এই চাঁদার ভাগ শীর্ষস্থানীয় এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি পর্যন্ত পৌঁছে। এছাড়া ইরানের সঙ্গে বিভিন্নভাবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ জড়িত। ইরানের লোক হিসেবে পরিচিত শ্রমিক লীগ নেতা চুন্নু ও আনোয়ার লাইনম্যান হিসেবে চাঁদা আদায় করেন। ব্যবসা না হলেও চাঁদার টাকা ঠিকই দিতে হয়। এক্ষেত্রে সময়ক্ষেপন করলে দোকানের মালামাল রাস্তায় ফেলে দেয়াসহ গালিগালাজ শুনতে হয়। ফার্মগেট দক্ষিণপাশের আল-রাজী হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় ফুটপাতের দোকান থেকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এক নেতা ও সাবেক এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর ভাই চাঁদা আদায় করেন। লাইনম্যান হিসেবে কাজ করেন ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতা রিপনসহ কয়েক জন।