ডেস্ক রিপোর্ট : ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে আগের রাতে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিলেও রেজিস্ট্রারের অব্যাহতির দাবিতে আবারও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার সকালে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের দুটি কোর্সের পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও পরীক্ষার্থীরা তাতে অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র কামরুন নাহার ডানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘শিক্ষকদের প্রতি সম্মান জানিয়ে’ বৃহস্পতিবার রাতে অনশনকারীরা অনশন স্থগিত করেন। কিন্তু তখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী রেজিস্ট্রারকে তদন্ত চলাকালে কাজ থেকে অব্যাহতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দেওয়ায় শুক্রবার তারা ফের অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন এবং পরীক্ষা বর্জন করছেন বলে জানান ডানা।
“আমরা বলেছিলাম, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে রেজিস্ট্রার তার পদে থাকতে পারবেন না। ভার্সিটি থেকে এখনো কোন পাবলিক অ্যানাউন্সমেন্ট দেওয়া হয়নি। আবার ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে ফোন দিয়ে হেনস্থা না করারও কোনো পাবলিক অ্যানাউন্সেমেন্টও আসেনি।”
রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ শাহুল আফজালের অধীনে কোনো পরীক্ষা না দেওয়ারও ঘোষণা রয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের।
আইন বিভাগের চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক ফারহান উদ্দিন আহমেদ গত রোববার রেজিস্ট্রারসহ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তোলার পর থেকে রাজধানীর মহাখালীতে এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উত্তেজনা চলছে।
শিক্ষক লাঞ্ছনাকারীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভের মধ্যেই গত মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের ওপর নিরাপত্তাকর্মীদের ‘হামলার’ ঘটনা ঘটে। এর বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন শুরু করলে আন্দোলনে নতুন মাত্রা পায়।
রোববার থেকে ক্লাসের পাশাপাশি পরীক্ষাও বর্জনের ডাক আসে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভের মুখে বুধ ও বৃহস্পতিবারের ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করলেও পরীক্ষা চালানোর কথা ছিল।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রাতে শিক্ষার্থীদের সামনে এসে সব অভিযোগের তদন্ত করার আশ্বাস দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সামিয়া হক।
এরপর ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা আসে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। কিন্তু শুক্রবার সকালে শতাধিক শিক্ষার্থী আবারও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন নম্বর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো-
>> রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ শাহুল আফজাল, সহকারী রেজিস্ট্রার মাহি উদ্দিন এবং অফিস অব কো-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজের সিনিয়র অফিসার জাভেদ রাসেলকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত
>> নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে ছাত্রীদের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা, যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তদন্ত করা। তদন্ত চলাকালে ফাইনাল পরীক্ষাসহ সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত রাখা
>> শিক্ষার্থীদের হয়রানির জন্য ভিসির প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা
>> আলোচনার ভিত্তিতে নতুন করে পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারণ
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র কামরুন নাহার ডানা বলেন, “এই রেজিস্ট্রারকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিসহ সব দাবি মেনে নেওয়ার দাবি আমরা জানাচ্ছি। সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও দিতে হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষার আগে প্রস্তুতির ৫-৭ দিন সময় দিয়ে নতুন রুটিন দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আজকেও আমরা পরীক্ষা দিতে বাধা দিচ্ছি না। কারও যদি পরীক্ষার দেওয়ার ইচ্ছা থাকে তারা দিতে পারে। কিন্তু সিএসই’র ফাইনাল ইয়ারের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে যায়নি।”
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের নাঈব রিদওয়ান বলেন, “আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আমরা কেউই পরীক্ষায় অংশ নিইনি। আর পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্যও স্বাভাবিকভাবে সময় দেওয়া হয়। সেভাবে রুটিন দেওয়া হোক।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বি/ডি/২