বিডি নীয়ালা নিউজ(১১ই ফেব্রুয়ারী ১৬)-বিনোদন ডেস্কঃ বাংলাদেশে শিশু-কিশোরদের বিনোদনের ব্যবস্থা নিয়ে অভিভাবকদের অন্যতম একটি অভিযোগ, বাংলাদেশের টেলিভিশনগুলোতে শিশুদের অনুষ্ঠান যথেষ্ট প্রচারিত হচ্ছে না।
টেলিভিশনের কর্মকর্তারা অবশ্য এর সাথে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করলেও কেউ কেউ এটা স্বীকার করছেন যে বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে শিশুদের অনুষ্ঠান অবহেলিত।
কিন্তু শিশু-কিশোররা টেলিভিশনে কী অনুষ্ঠান দেখতে পছন্দ করে?
মা-বাবার সাথে ঢাকার যাদুঘরে বেড়াতে আসা প্রথম শ্রেণী পড়ুয়া এক শিশু সুপ্ত বললো, তার পছন্দের অনুষ্ঠান কার্টুন নেটওয়ার্ক আর নিকের কার্টুন। বাংলা অনুষ্ঠান দেখার কথা বলতে গিয়েও ঘুরেফিরে বিদেশী কার্টুনের বাংলা অনুবাদের কথাই বললো সুপ্ত।
ঢাকার স্কুলপড়ুয়া কয়েকজন কিশোর-কিশোরী তাদের পছন্দের অনুষ্ঠান জানতে চাইলে তারাও বলছে হিন্দী চলচ্চিত্র এবং কিছু অনুষ্ঠানের কথা।
“আমাদের হিন্দী ফিল্ম দেখতেই একটু ভাল্লাগে” বললো পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্র। “ন্যাশনাল জিওগ্রাফি এবং ডিসকভারিটাই আমি প্রেফার করি” আরেক ছাত্রী বললো পছন্দের অনুষ্ঠান সম্পর্কে।
বাংলাদেশের চ্যানেলে নাটক এবং খেলা দেখা হয় বলে জানালো কেউ কেউ। তবে শিশু-কিশোরদের কাছে পছন্দের তালিকায় স্থান পাচ্ছে বিদেশী ভাষার অনুষ্ঠানগুলোই।
অভিভাবকেরা অনেকে বিষয়টিকে ভালোভাবে নেন না। তবে তারা বলছেন, ভাল লাগে বলেই বাচ্চারা বিদেশী অনুষ্ঠান দেখে।
“হঠাৎ করে হয়তো কিছু দেখা যাচ্ছে, কিন্তু বাচ্চাদের জন্য আসলে কিছুই হয় না”
“কিছু কালচারাল প্রোগ্রাম হয়, কিন্তু ওগুলা এমন একটা সময়ে দেয় যে বাচ্চারা দেখার সময় পায় না”
“কার্টুন নেটওয়ার্ক, পোগো, নিক এসবের দিকেই বাচ্চাদের ঝোঁক। বাংলাদেশে তো তেমন কিছুই হয় না ওদের জন্য”
বাংলাদেশের টেলিভিশনগুলোতে শিশু-কিশোরদের অনুষ্ঠান নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়লেন ঢাকার একটি স্কুলের সামনে অপেক্ষমাণ কয়েকজন অভিভাবক।
অভিভাবকদের এসব অভিযোগ নিয়ে কথা বলেছিলাম বাংলাদেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সাথে।
“অভিভাবকেরা হয়তো বলবে যে, একসময় বাংলাদেশ টেলিভিশনে শিশুদের প্রচুর প্রোগ্রাম হতো। কিন্তু সেটি ছিল সপ্তাহে পাঁচদিন আধঘণ্টা করে অনুষ্ঠান এবং শুক্রবার সকালে নতুন কুঁড়ি। সেই তুলনায় এখন টেলিভিশনগুলোতে বাচ্চাদের অনেক অনুষ্ঠান হচ্ছে।কিন্তু এখন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই অনুষ্ঠানগুলো হারিয়ে যাচ্ছে।”
বাংলা চ্যানেলগুলোতে শিশু-কিশোরদের অনুষ্ঠান হলেও দেখা যাচ্ছে তাদের মধ্যে বিদেশী চ্যানেলের অনুষ্ঠানগুলোরই জনপ্রিয়তা বেশি। আর এটি বিনোদন এবং শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান উভয় ক্ষেত্রেই।
ফরিদুর রেজা সাগর বলছেন, অনুষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও জনপ্রিয়তা কম থাকার একটি বড় কারণ হচ্ছে অনুষ্ঠানগুলো যখন হয় তখন বড়রাই তাদের পছন্দের অনুষ্ঠান দেখে। তার মতে, মিশ্র অনুষ্ঠানের চ্যানেলে শিশুদের অনুষ্ঠান জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে এটি বড় সমস্যা।
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান মোস্তফা কামাল সৈয়দ বলছেন, শিশুদের জন্য তারা কিছু অনুষ্ঠান করছেন যেগুলো দীর্ঘদিন যাবত চলছে। তবে তিনি স্বীকার করছেন যে, টেলিভিশনে শিশুদের অনুষ্ঠান কিছুটা অবহেলিত।
“নাটকের ওপর বোধহয় বেশি জোর দেয়া হয়। কারণ নাটক বেশি জনপ্রিয় এবং এর বাণিজ্যিক কারণও রয়েছে। আমার মনে হয় একটি চ্যানেল হওয়া দরকার শুধুমাত্র শিশুদের জন্য। এতগুলো চ্যানেল যদি হতে পারে তাহলে শিশু কিশোরদের জন্য একটি চ্যানেল কেন হবে না?”
মি. সৈয়দ বলছেন, তারা শিশুদের জন্য বাংলাদেশে তৈরি কার্টুন এবং অ্যানিমেশন প্রচারের চেষ্টা করেছেন। তবে প্রযুক্তিগত দুর্বলতা এবং ব্যয়বহুল হবার কারণে এটি ধরে রাখা সম্ভব হয়নি।
তবে শুধু কার্টুন অনুষ্ঠান নয়, বাংলাদেশে কমিকস বইয়ের মাধ্যমেও শিশুদের বিনোদনের জন্য কোন চরিত্র গড়ে ওঠেনি।
কার্টুনিস্ট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য মনে করছেন শিশুদের জন্য বাংলা ভাষায় কার্টুন তৈরি সম্ভব।
“আমাদের প্রচুর শিশুতোষ কাহিনী আছে, রূপকথা আছে সেগুলো নিয়েই চরিত্র তৈরি হতে পারে। এটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং প্রকাশনা সব ক্ষেত্রেই আসতে হবে। এটি সম্ভব এবং সময়টাও এসেছে। এখন সৎ এবং উদ্যোগী বিনিয়োগকারী দরকার।”
বাংলাদেশ টেলিভিশনে শিশুদের জনপ্রিয় পাপেট শো নির্মাতা শিল্পী মুস্তফা মনোয়ার মনে করেন এখনকার টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে শিশুদের অনুষ্ঠান নির্মাণের আগ্রহে ঘাটতি রয়েছে।
“সহজভাবে অনুষ্ঠান করার প্রবণতা বেশি। কিন্তু শিশুদের জন্য নিয়মবহির্ভূতভাবে যেসব অনুষ্ঠান করা উচিত, সেটা হয়তো মেধা বা চেষ্টায় হচ্ছে না। আর তার ফলে আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা হয় হিন্দি দেখছে অথবা বিদেশী কার্টুন দেখছে।”
বিটিভিতে শিশুদের একটি জনপ্রিয় প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান নতুন কুড়িরও একজন নির্মাতা মুস্তফা মনোয়ারের মতে, শিশুদের জন্য শুধু কিছু নির্দিষ্ট ধারার অনুষ্ঠান নির্মাণ নয়, বরং এতে বৈচিত্র্য আনা প্রয়োজন এবং এবিষয়ে দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগও দরকার।