জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন। বাবার সেই পথ অনুসরণ করে জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমি ভবনে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেয়ার পর ১৯৭৪ সালে ভাষণ দিতে যান বঙ্গবন্ধু। সেখানে কিন্তু তিনি বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন। অর্থাৎ তিনি বাংলাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন।
তিনি আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতার মধ্যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ভাষাকে নিয়ে এসিছেলেন, তেমনি বঙ্গবন্ধু তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থিক ও মুক্তি সংগ্রামের কথা বাংলা ভাষায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। বাবার পথ অনুসরণ করেই আমি জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিই।
বই পড়ার অভ্যাস জরুরি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কঠিন প্রবন্ধ, জটিল বিষয় খুললেই চোখ বন্ধ হয়ে ঘুম চলে আসে। অনেকের নাকি ঘুম হয় না বলে ঘুমের ওষুধ খায়। আমি তো মনে করি কঠিন বই পড়তে গেলেই ঘুম আসে। আমিতো এটাই অনুসরণ করি।’
তরুণ সমাজের মধ্যে পড়ার অভ্যাস গড়তে উপজেলা পর্যায়েও বইমেলার আয়োজনের কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বাংলা একাডেমির লাইব্রেরিটা খুব পছন্দ ছিল আমার। বান্ধবী বেবি মওদুদকে সঙ্গে নিয়ে টিএসসিতে প্লেটে ভাত ভাগাভাগি করে খেতাম। পরে লাইব্রেরিতে বসে বই পড়তাম। বইমেলার ব্যাপ্তি আরও বাড়ানো দরকার। তবে বাংলা একাডেমির একটা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে স্থান হিসেবে।’
‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেলায় এসে মজা নেই। ডানে-বামে-সামনে-পেছনে শুধুই নিরাপত্তা। এই বেড়াজালে আটকে থাকায় মেলায় ঘোরার স্বাধীনতাই হারিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছোটবেলায় মেলায় আসার কথাও মনে পড়ে,’ যোগ করেন তিনি।
ইতিহাস টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মোনায়েম খান রবীন্দ্র সংগীত বন্ধ করতে বলেছিলেন। তৎকালীন বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যাপক হাই। মোনায়েম খান তাকে বলেছিলেন, এখানকার শিক্ষকরা কেন রবীন্দ্র সংগীত রচনা করতে পারেন না? তখন উত্তরে হাই বলেছিলেন, উনি লিখতে পারেন- তবে সেটি রবীন্দ্র সংগীত না, হবে হাই সংগীত! তাহলে বোঝেন, কেমন রাষ্ট্রের অধীনে ছিলাম আমরা!’
প্রকাশকদের এখন থেকে মুদ্রণের পাশাপাশি ডিজিটালেও বই প্রকাশের পরামর্শ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের বাংলা ভাষা মধুর। এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। এরপরও বই প্রকাশ হবে। তা কখনো যাবে না। বই পড়ার আনন্দ আছে। তবে এখনকার শিক্ষার্থীরা ট্যাবে ও ল্যাপটপে বই পড়ে। আমরা সেভাবে আনন্দ পাই না।’
‘ভাষার সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা উচিত। তাই প্রকাশকদের বলব, এখন থেকে বই ডিজিটালি প্রকাশ করতে হবে। এতে শুধু দেশ নয়, বিদেশেও আমাদের ভাষার বই পৌঁছাতে পারব। অন্য ভাষাভাষীর লোকজনও আমাদের বই পড়ে। পাশাপাশি অডিও ভার্সনও তৈরি করতে হবে। বই প্রকাশে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বাড়াতে হবে। বাংলা একাডেমির একটা পৃথক পোর্টাল করে সেখানে বিভিন্ন ভাষাভাষী সাহিত্যের সন্নিবেশ ঘটাতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
বিদেশি ভাষা অনুবাদের বিপক্ষে অনেকে দাবি তুলেছেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘আমি অনুবাদের পক্ষে। অনুবাদ না হলে পৃথিবীর এত ভাষা আমরা কীভাবে জানব? কোনো দেশকে জানতে হলে, তাদের সংস্কৃতিকে জানতে হলে ভাষা অনুবাদের মাধ্যমে সহজে জানা যায়।’
তিনি আরও বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়েছি। সেটা করতেও পেরেছি। এখন ঘোষণা স্মার্ট বাংলাদেশের। দেশ সর্বক্ষেত্রে স্মার্ট হবে। সমাজের সঙ্গে তাল মেলাতে গেলে ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি আমাদের ডিজিাটালি নিয়ে যেতে হবে।
এর আগে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় অবদান রাখায় ১১টি শাখায় বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার মোট ১৬ জন পেয়েছেন এই পুরস্কার।
তারা হলেন- শামীম আজাদ (কবিতা), ঔপন্যাসিক নুরুদ্দিন জাহাঙ্গীর ও সালমা বাণী (যৌথভাবে কথাসাহিত্যে), জুলফিকার মতিন (প্রবন্ধ/গবেষণা), সালেহা চৌধুরী (অনুবাদ), নাট্যকার মৃত্তিকা চাকমা ও মাসুদ পথিক (যৌথভাবে নাটক), তপঙ্কর চক্রবর্তী (শিশু সাহিত্য), আফরোজা পারভিন এবং আসাদুজ্জামান আসাদ (মুক্তিযুদ্ধের উপর গবেষণা), সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল এবং মো. মজিবুর রহমান (বঙ্গবন্ধুর উপর গবেষণা), পক্ষীবিদ ইনাম আল হক (পরিবেশ/বিজ্ঞান ক্ষেত্র), ইসহাক খান (জীবনী) এবং তপন বাগচী ও সুমন কুমার দাস (যৌথভাবে লোক কাহিনী)।
পুরস্কার দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন। বইমেলা উদ্বোধনের পর বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘কালেক্টেড ওয়ার্কস অব শেখ মুজিবুর রহমান: ভলিউম ২’সহ কয়েকটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করবেন তিনি।
প্রতি কর্মদিবসে বইমেলা বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং সরকারি ছুটির দিনে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং দুপুরের খাবার ও নামাজের জন্য এক ঘণ্টা বিরতি থাকবে।
SO/N